সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালে যাদের ঘরবাড়ি ভেঙেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পাশে আছে সরকার। যাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে তাদেরকে আমরা ঘর তৈরি করে দেব। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো নির্মাণের উপকরণ দিয়ে সহায়তা করব। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পাশে আমরা আছি। প্রাথমিকভাবে যা যা প্রয়োজন তা দিয়ে যাচ্ছি।

মঙ্গলবার (১১ জুন) সকাল ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সারাদেশে গৃহ ও ভূমিহীন ১৮ হাজার ৫৬৬টি পরিবারকে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর করা হয়। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরইমধ্যে আমরা তালিকা করেছি কোন কোন এলাকায় কতগুলো ঘর পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কতগুলো আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রত্যেকে যেন ঘর নির্মাণ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা আমি করে দেব। আমার সেভাবে  প্রস্তুতি নিয়েছি। সে অনুযায়ী আমরা সহায়তা পাঠাব। যারা বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরকে আমরা সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তাদেরকে আরো সহযোগিতা করে যাব। প্রত্যেকটা গ্রামকে আমরা নাগরিক সুবিধায় নিয়ে আসব। প্রত্যেকটা গ্রামের মানুষ সুবিধা পাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করার পর অবৈধভাবে ক্ষমতার দখলকারীরা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে ব্যস্ত ছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের সেবক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তখন থেকেই ভূমিহীন মানুষদের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তখন বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তারপরও ভূমিহীন মানুষদের মধ্যে ঘর তৈরি করার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প নিয়ে আমরা ঘর বানাতে শুরু করি। ঘরগুলো আমরা করে দিয়েছি, সেটা কিন্তু আপনার সম্পত্তি। যে নিচ্ছেন বা পাচ্ছেন সেটা কিন্তু আপনার সম্পত্তি। এটাকে রক্ষণাবেক্ষণ, এটাকে সুন্দরভাবে রাখা, এটার যত্ন নেওয়া আপনার দায়িত্ব। বিদ্যুৎ ব্যবহারে অবশ্যই আপনাকে সাশ্রয়ী হতে হবে।

ভূমির মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না থাকে। অনাবাদি জমিগুলো চাষের আওতায় আনুন। যে যা পারেন উৎপাদন বাড়ান। জলাশয় থাকলে সেখানে মাছের চাষ, জমি থাকলে ফসলের চাষ, ভিটি থাকলে সেখানে গাছ লাগান। অর্থাৎ যে যতটুকু পারেন উৎপাদন করুন। জাতির পিতা বলেছিলেন ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না, আমরা কারো কাছে ভিক্ষা করতে চাই না। হাত পেতে চলতে চাই না। যতটুকু আমাদের সম্পদ সেটা কাজে লাগিয়ে মাথা উঁচু করে চলব। সম্মানের সঙ্গে চলব। সেভাবেই বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আপনাদের সহযোগিতা দরকার।

তিনি বলেন, আমার দেশে যারা ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষ তাদের জন্য এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহের ব্যবস্থা, জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সারা বাংলাদেশের ভূমিহীন গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর তৈরি করে দিয়েছি। যার ফলে তাদের জীবনটা বদলে যাচ্ছে।

আজকের দিনটা আমার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতেও মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। আবার সেই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও মিথ্যা মামলা দেয়। আমার সহযোগী সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, দেশের সাধারণ মানুষ সে সময় প্রতিবাদ করেছিল। আজকের দিনে অর্থাৎ ১১ জুন আমি সেই বন্দিখানা থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম।