নিউজ ডেস্ক
রাজধানী’র সরকারি হাসপাতালগুলোর ৩২ শতাংশ টয়লেট ব্যবহার উপযোগী নয়। হাসপাতালের ৬৮ শতাংশ ব্যবহার উপযোগী টয়লেটের মধ্যে মাত্র ৩৩ শতাংশ পরিচ্ছন্ন থাকে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ৯২ শতাংশ টয়লেট ব্যবহার উপযোগী। এরমধ্যে ৪৪ শতাংশ সবসময় অপরিচ্ছন্ন থাকে। ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আইসিডিডিআর বির গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি সম্প্রতি প্লস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়।
ঢাকার ১২টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গবেষণায় ২ হাজার ৪৫৯টি টয়লেট পর্যবেক্ষণ করে ঢাকার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে টয়লেট ব্যবহারের সুবিধা, ব্যবহার উপযোগিতা এবং পরিচ্ছন্নতা মূল্যায়ন করা হয়।
আইসিডিডিআর,বি জানায়, ব্যবহার উপযোগী ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের অপ্রাপ্যতা কলেরা ও টাইফয়েডের মত রোগের জীবাণু ছড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
জরিপে উল্লেখ করা হয়, হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে রোগীদের জন্য টয়লেটের বিপরীতে ব্যবহারকারীর অনুপাত বেশি দেখা গেছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতি একটি টয়লেটের বিপরীতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২১৪ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে টয়লেট প্রতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৪ জন।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে টয়লেট নির্মাণের ক্ষেত্রে ওয়াটার এইড প্রণীত নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতি ২০-২৫ জন রোগী বা পরিচর্যাকারীর জন্য প্রথম ১০০ জনের ক্ষেত্রে একটি করে টয়লেট এবং অতিরিক্ত প্রতি ৫০ জন রোগী বা পরিচর্যাকারীর জন্য একটি অতিরিক্ত টয়লেট থাকতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাংলাদেশ জাতীয় ওয়াশ (ওয়াটার, স্যানিটেশন এন্ড হাইজিন) স্ট্যান্ডার্ড ও ব্যস্তবায়ন নির্দেশিকা ২০২১ অনুযায়ী অন্তর্বিভাগে প্রতি ছয়টি বেডের জন্য একটি টয়লেটের মানদণ্ড পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে।
জরিপে টয়লেট সুবিধায় প্রতিবন্ধীরা উপেক্ষিত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা টয়লেট সুবিধা পাওয়া গেছে ১ শতাংশেরও কম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। মাত্র ৩ শতাংশ হাসপাতালে মাসিকের সময় ব্যবহৃত প্যাড এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ময়লা ফেলার ঝুড়ি ছিল।
গবেষণায় টয়লেটের ব্যবহার উপযোগিতা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ ব্যবহৃত মানদণ্ড অনুযায়ী। দৃশ্যমান মলের উপস্থিতি, মলের তীব্র গন্ধ, মাছি, থুতু, পোকামাকড়, ইঁদুর এবং কঠিন বর্জ্যের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে টয়লেটের পরিচ্ছন্নতা মূল্যায়ন করা হয়েছে।
গবেষণার বিষয়ে আইসিডিডিআর,বির অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট এবং এই গবেষণার প্রধান তদন্তকারী ডা. মো. নুহু আমিন বলেন, ঢাকার হাসপাতালগুলোর প্রকৃত স্যানিটেশন পরিস্থিতি আমরা যা দেখছি তার চেয়েও খারাপ হতে পারে। কারণ, আমরা গবেষণাটি করেছিলাম কোভিড-১৯ মহামারির ঠিক পরে। তখন অনেক হাসপাতাল কোভিড রোগীদের চিকিৎসা থেকে সাধারণ চিকিৎসা সেবার দিকে মনোনিবেশ করেছে। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা ও কার্যক্ষম টয়লেট বজায় রাখার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে, লিঙ্গভিত্তিক প্রয়োজনীয়তা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।