অনলাইন ডেস্ক : টানা তৃতীয় দিনের মতো কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চলমান রয়েছে রাজধানীর শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচিও। এদিকে, কোটা পুনর্বহাল রায়ের প্রতিবাদে ও চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে নতুন করে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে চার দফা দাবিতে চলমান অবরোধ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামী শনিবার (৬ জুলাই) সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে শুক্রবার (৫ জুলাই) অনলাইন ও অফলাইনে গণসংযোগ করা হবে। এছাড়া আগামী রবিবার (৭ জুলাই) সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যান্যদিন দুপুর আড়াইটা থেকে আন্দোলন শুরু করলেও বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকাল থেকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পরবর্তী তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে রাজু ভাস্কর্যের দিকে পদযাত্রা করেন তারা।
‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কোটাবৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘মেধাবীদের যাচাই করো, কোটাপদ্ধতি বাতিল করো’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীরা কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদ জানায়। এছাড়াও বিভিন্ন গানের মাধ্যমে তারা কোটা ব্যবস্থার নিন্দা জানাতে থাকেন। এছাড়াও দু’জন শিক্ষার্থীকে খালি গায়ে বুকে ও পিঠে কোটাবিরোধী স্লোগান লিখে আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়।
তাদের অবস্থানের কারণে আগের দিনগুলোর মতোই শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফার্মগেট-শাহবাগ, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ-সাইন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ জনগণকে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে দেখা যায়। তবে অ্যাম্বুলেন্সের চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীরা জায়গা করে দেয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে শুক্রবার, শনিবার ও রবিবারের কর্মসূচি ঘোষণা করে নাহিদ ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, শুক্রবার অনলাইন ও অফলাইনে জনসংযোগ করা হবে চার দফা দাবির উপর এবং সারা দেশে সমন্বয় করা হবে; শনিবার বিকেল তিনটায় সকল বিশ্ববিদ্যাল ও কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হবে এবং এদিন সমাবেশে রবিবারের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে; রবিবার সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হবে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টের শুনানি শিক্ষার্থীদের সাথে প্রহসন মাত্র। আমি নির্বাহী বিভাগকে প্রশ্ন করতে চাই যে তারা ২০১৮ সালে কী এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যা ৫ বছরেই চেঞ্জ হয়ে যায়। এখনো রাষ্ট্রপক্ষ কিংবা নির্বাহী বিভাগ থেকে আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি এবং কোনো প্রকার আশ্বস্ত করা হয়নি। আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব এবং কোনো প্রকার আপোষ করা হবে না।
শিক্ষার্থীরা বলেন, সাংবিধানে স্বাধীনতা, সাম্যের যে স্পিরিট ছিল, সেই স্পিরিটের বাইরে গিয়ে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী হাইকোর্টে রিট করে কোটার পুনর্বহাল সারা বাংলার শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। কোটা পুনর্বহাল বাতিল করার জন্য আমরা রাজপথে লড়াই করে যাব। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে এসেও আজ আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। যতদিন না আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে আমরা কঠোর প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত, ২০১৮ সালের কোটার পরিপত্র বহালের আগ পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। আমরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করছি। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে।
৪ দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো-
ক) ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
খ) পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)।
গ) সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া।
ঘ) দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।