ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিল ১৫০ বিজিপির সদস্য

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৮:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪
  • 159
অনলাইন ডেস্ক  : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত তীব্র হয়ে ওঠায় নতুন করে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) প্রায় দেড় শতাধিক সদস্য টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছেন। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদী ও সীমান্তে কঠোর অবস্থানে আছে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। তারপরও সীমান্তের বিভিন্ন দুর্গম পয়েন্ট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিজিপির সদস্যরা সীমান্ত অতিক্রম করে এই দেশে এসেছেন বলে জানা গেছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার টেকনাফের সাবরাং, নাজিরপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে বিজিপির সদস্যরা পালিয়ে আসেন। সীমান্ত অতিক্রমের পর অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে তাঁরা বিজিবি ও কোস্টগার্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই দুটি বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিজিপির সদস্যদের পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি হননি। তবে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের দমদমিয়া এলাকার একটি বহুতল ভবনে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে কয়েক দফায় নাফ নদী অতিক্রম করে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর (বিজিপি) দেড় শতাধিক সদস্য বাংলাদেশে (টেকনাফে) আশ্রয় নিয়েছেন বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তিনি। এ নিয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর পক্ষ থেকে তাঁকে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা চার মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘাত চলছে। ইতিমধ্যে রাখাইন রাজ্যে বুচিডং-রাচিডং টাউনশিপসহ বিজিপি ও সেনাবাহিনীর ২০টির বেশি সীমান্ত চৌকি ও ব্যারাক দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যের প্রধান শহর মংডু টাউনশিপ দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে আরাকান আর্মি।  এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই তীব্রতর হয়েছে। মংডু টাউনশিপের আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিপি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন। টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মে পর্যন্ত কয়েক দফায় টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেন বিজিপি ও সেনাবাহিনীর ৭৫২ সদস্য। এর মধ্যে প্রথম দফায় ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ বিজিপি ও সেনাসদস্য, দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ এপ্রিল ২৮৮ বিজিপি ও সেনাসদস্য এবং তৃতীয় দফায় গত ৯ জুন ১৩৪ বিজিপি ও সেনাসদস্যকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, আজ দিবাগত রাত তিনটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে থেমে থেমে গোলাগুলি ও বিকট শব্দের বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান টেকনাফ সীমান্তের মানুষ। পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, বিস্ফোরণের শব্দে টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ ও হ্নীলা এলাকার ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। আতঙ্কে সময় পার করছেন সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, নাফ নদীর একপাশে টেকনাফ, বিপরীত দিকে মংডু টাউনশিপ। মাঝখানে চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদী দুই দেশকে বিভক্ত করে রেখেছে। ওপারে মংডু টাউনশিপের আশপাশের গ্রাম পেরাংপুরু, কাদিরবিল, হারিপাড়া, মংনিপাড়া, নলবইন্ন্যা, সুদাপাড়া, সিকদারপাড়া, নুরুল্লাপাড়া, হাস্যুরাতা ও ফাতংছা এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা বেশি ঘটছে। গ্রামগুলোয় কী ঘটছে, তা এপার থেকে প্রত্যক্ষ করা যায়। সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, যেসব গ্রামে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে, সেসব রোহিঙ্গা–অধ্যুষিত এলাকা। মর্টার শেল ও গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণে রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে যাচ্ছে। এসব গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা খোলা জায়গায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফ পালিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনী টহল জোরদার করেছে।
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিল ১৫০ বিজিপির সদস্য

আপডেট সময় ০৮:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪
অনলাইন ডেস্ক  : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত তীব্র হয়ে ওঠায় নতুন করে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) প্রায় দেড় শতাধিক সদস্য টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছেন। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদী ও সীমান্তে কঠোর অবস্থানে আছে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। তারপরও সীমান্তের বিভিন্ন দুর্গম পয়েন্ট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিজিপির সদস্যরা সীমান্ত অতিক্রম করে এই দেশে এসেছেন বলে জানা গেছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার টেকনাফের সাবরাং, নাজিরপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে বিজিপির সদস্যরা পালিয়ে আসেন। সীমান্ত অতিক্রমের পর অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে তাঁরা বিজিবি ও কোস্টগার্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই দুটি বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিজিপির সদস্যদের পালিয়ে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি হননি। তবে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের দমদমিয়া এলাকার একটি বহুতল ভবনে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে কয়েক দফায় নাফ নদী অতিক্রম করে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর (বিজিপি) দেড় শতাধিক সদস্য বাংলাদেশে (টেকনাফে) আশ্রয় নিয়েছেন বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তিনি। এ নিয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর পক্ষ থেকে তাঁকে বিস্তারিত জানানো হয়নি।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা চার মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘাত চলছে। ইতিমধ্যে রাখাইন রাজ্যে বুচিডং-রাচিডং টাউনশিপসহ বিজিপি ও সেনাবাহিনীর ২০টির বেশি সীমান্ত চৌকি ও ব্যারাক দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যের প্রধান শহর মংডু টাউনশিপ দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে আরাকান আর্মি।  এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই তীব্রতর হয়েছে। মংডু টাউনশিপের আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিপি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন। টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মে পর্যন্ত কয়েক দফায় টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেন বিজিপি ও সেনাবাহিনীর ৭৫২ সদস্য। এর মধ্যে প্রথম দফায় ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ বিজিপি ও সেনাসদস্য, দ্বিতীয় দফায় গত ২৫ এপ্রিল ২৮৮ বিজিপি ও সেনাসদস্য এবং তৃতীয় দফায় গত ৯ জুন ১৩৪ বিজিপি ও সেনাসদস্যকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, আজ দিবাগত রাত তিনটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে থেমে থেমে গোলাগুলি ও বিকট শব্দের বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান টেকনাফ সীমান্তের মানুষ। পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, বিস্ফোরণের শব্দে টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ ও হ্নীলা এলাকার ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে। আতঙ্কে সময় পার করছেন সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, নাফ নদীর একপাশে টেকনাফ, বিপরীত দিকে মংডু টাউনশিপ। মাঝখানে চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদী দুই দেশকে বিভক্ত করে রেখেছে। ওপারে মংডু টাউনশিপের আশপাশের গ্রাম পেরাংপুরু, কাদিরবিল, হারিপাড়া, মংনিপাড়া, নলবইন্ন্যা, সুদাপাড়া, সিকদারপাড়া, নুরুল্লাপাড়া, হাস্যুরাতা ও ফাতংছা এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা বেশি ঘটছে। গ্রামগুলোয় কী ঘটছে, তা এপার থেকে প্রত্যক্ষ করা যায়। সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, যেসব গ্রামে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে, সেসব রোহিঙ্গা–অধ্যুষিত এলাকা। মর্টার শেল ও গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণে রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে যাচ্ছে। এসব গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা খোলা জায়গায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফ পালিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনী টহল জোরদার করেছে।