সিনিয়র রিপোর্টার
জনদুর্ভোগ, ধ্বংস, ভাঙচুর বা রক্তপাত করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের যে কাজ সেটা করবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কোটা আন্দোলন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। আমাদের ছাত্রদের একটু অপেক্ষা করা উচিৎ ছিল। যে বিচারের শেষ পর্যন্ত কী হয় সেটা দেখা। তারা সেটা না দেখেই নানান ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে, রাস্তা অবরোধ করছে। রাস্তা অবরোধ করলে তো সবাই ভুক্তভোগী হয়ে যায়। তাদের রাস্তা থেকে চলে আসা উচিত। আমি মনে করি, তারা আদালতে এসে তাদের দাবি বলুক।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে কোটা সিস্টেম আছে। আমাদের এখানেও ছিল। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী সেটা স্থগিত করে দেওয়া হয়। তারপর কয়েকজন মিলে কোর্টে রিভিউ চেয়েছিলেন। কোর্ট তার একটা রিভিউ দিয়েছে। সেটা নিয়েই বিপত্তি। ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা আবারও কোটা বিলুপ্তি চায়। এরইমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট থেকে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এটা স্থগিত রইলো। আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে বিচারটি নিষ্পত্তি করতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি। ছাত্ররা যেন কোর্টে এসে তাদের আবেদনটি জানায়। আমি মনে করি, তারা এসব কর্মসূচি রেখে কোর্টে যেতে পারে, যেটা বলেছেন প্রধান বিচারপতি।
আন্দোলনকারীরা দাবি করছে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ফিরিয়ে নিতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এগুলো শেখানো বক্তব্য। এগুলো ছাত্রদের বক্তব্য নয়। বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে কটূক্তি তারা করেনি, তাদের কেউ শিখিয়ে দিয়েছে, অন্যের শেখানো বুলি তারা বলছে। তারা নিশ্চয়ই এই বুলি ভুলবশত করেছে।
ঢাবিতে ছাত্রলীগের সঙ্গে মারামারির ঘটনায় আজ সারা দেশের ছাত্ররা মাঠে নেমেছে, আসলে বিষয়টি কোন দিকে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের- জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি ছাত্রলীগ, ছাত্রদল সংজ্ঞায়িত করছি না, আমি বলেছি ছাত্ররা। ছাত্ররা হয়তো একদল পক্ষে একদল বিপক্ষে রয়েছে। এখানে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে গিয়ে কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো কিছু করছে না। ছাত্রদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। আমাদের কথা হচ্ছে তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের কথা বলুক। তাহলে দেশের জনগণ সেটা উপলব্ধি করতে পারবে। আর মতবিরোধ হলেই কিছু বাকবিতণ্ডা হয়। আমরা নিরাপত্তা বাহিনীকে বলেছি, যে পর্যন্ত প্রয়োজন না হয় সে পর্যন্ত যেন তারা ছাত্রদের কার্যক্রমের মধ্যে না পড়ে।
ছাত্রদের অবস্থানে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে কি না, করণীয় কী এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ভেঙে পড়েছে এটাতে আমি একমত নই, আইনশৃঙ্খলা সঠিক পথেই আছে। আমি সব সময় বলে আসছি ছাত্ররা কারও শেখানো বুলি বলছে। এগুলো তাদের নিজেদের বুলি নয়। ছাত্ররা ভুল করছে, ভুল পথে চলছে। আমরা মনে করি, ছাত্ররা সরে যাবে। তাদের যদি কিছু বলার থাকে তাহলে তারা কোর্টে এসে বলতে পারে। রাস্তা অবরোধ করে দাবি আদায়, এটা সঠিক পথ নয়।
আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হবে কি না, তাছাড়া সোমবারের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রশাসনিক দুর্বলতা ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, ঘোলাপানিতে অনেকেই মাছ শিকারে পারদর্শী, তারা অনেকেই লেগে গেছেন তাদের মোটিভেট করতে। জামায়াত ও বিএনপি বাইরে থেকে ইন্ধন দিতে পারে। এর সব কিছুই হতে পারে। আমরা এখন পর্যন্ত ধৈর্যসহকারে দেখছি। আমরা মনে করি, তারা আমাদের ভবিষ্যৎ। তারা সঠিক পথে অবশ্যই যাবে। তবে কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজে যদি তারা নেমে আসে তাহলে আমাদের কাজ আমরা করবো। আমি আহ্বান করবো, তারা যেন এসব কার্যক্রম বন্ধ করে ফিরে যায়।
আজ ঢাকাসহ সারা দেশে ভাঙচুর হচ্ছে, এতে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেবে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, যখন কোনো আন্দোলন হয়, তখন বিভিন্ন মহল থেকে মেসেজ আদান-প্রদান হয়, আমরা সেগুলো দেখছি। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এখানে বদ-উপদেশ দেওয়ার জন্য লোক ঢুকেছে। তারা যেন তাদের উপদেশে কাজ না করে। ছাত্ররা কোটা আন্দোলন করছে সেখানে আমাদের বলার কিছু নেই। কথা হচ্ছে তারা যদি কারও পরামর্শে ভাঙচুর করে, ধ্বংসাত্মক কাজ করে, তাহলে আমরা কিন্তু কাউকে ছাড় দেব না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেখানেই ভাঙচুর হবে, ধ্বংসাত্মক হবে, হত্যা হবে, রক্তপাত হবে; সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে।
ঢাকার আন্দোলন নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে দু’জন নিহত হয়েছে। এ কথাটি সত্য নয়। আমাদের কাছে যে খবরটি এসেছে, সেটা হলো ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়িতে কয়েকজন আহত হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে তারা চিকিৎসা নিয়েছেন। কোনো মৃত্যুর খবর নেই।