ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোটা আন্দোলন : সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছে

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০২:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪
  • 109

অনলাইন ডেস্ক  :  নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।  সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, প্রগতি সরণি, উত্তরা, মিরপুরসহ রাজধানীর বেশ কিছু পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ তা প্রতিহত করার চেষ্টা করলে বাধছে সংঘর্ষ, ঘটছে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা।

এদিকে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, বগুড়া, খুলনা, রাজশাহী, যশোরেও শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এসব স্থানেও পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। 

যাত্রাবাড়ী
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে কোনো যানবাহন ঢাকা থেকে বের হতে পারছে না। আবার কোনো যানবাহন ঢুকতেও পারছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আটকে আছে শত শত যানবাহন। সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের রায়েরবাগ অংশে ব্যারিকেড দেওয়ার কারণে ঢাকা থেকে কোনো গাড়ি বের হতে পারছে না। ফলে অনেক গাড়ি আটকা পড়েছে। অন্যদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় রাতে পুলিশের সঙ্গে কতিপয় আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) রাত ১০টা থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এরপর হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায় আগুন দেওয়া হয়। 

রামপুরা
সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর রামপুরা পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সাড়ে ১১টার পর থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২ ও ৩ নম্বর গেটের সামনের সড়কে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং তা চলতে থাকে।

প্রগতি সরণি
প্রগতি সরণি এলাকায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে যোগ দিয়েছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি), ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), ভিকারুননিসাসহ অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজার খানেক শিক্ষার্থী কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডাগামী সড়ক বন্ধ করে অবস্থান নেন। সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় রাস্তায় দুপাশে আটকা পড়েছে অসংখ্য মানুষ।

উত্তরা
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কয়েকশ শিক্ষার্থী উত্তরা জমজম টাওয়ারের মোড়ে অবস্থান নেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশের বক্স ও ২টি মিনিবাস ভাঙচুর করে। উত্তরা জসিম উদ্দিন এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বাড্ডা
রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে মেরুল বাড্ডা এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার পর কয়েকশ শিক্ষার্থী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এ সময় মেরুল বাড্ডা এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী সব যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপরে শিক্ষার্থীরা আবারও সড়কে অবস্থান নেয়।

মিরপুর১০
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হটিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর দখলে নেওয়ার পর ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে পুলিশ। ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে, গুলি করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সংঘর্ষের এলাকায় রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কমপক্ষে ৫টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে।

কাজলা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজলা সংলগ্ন টোলপ্লাজা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, শত শত আন্দোলনকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছেন। 

যশোর
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে যশোরে বিক্ষোভ শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী যশোরের জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। সেখান থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর একটি বিশাল মিছিল মুজিব সড়ক হয়ে যশোর রেল স্টেশনে পৌঁছায়। রেল লাইনের ওপর কাঠ ফেলে ২০ মিনিট অবরোধ করে রাখে তারা। পরে পুলিশ গিয়ে রেল লাইনের ওপর থেকে কাঠ সরিয়ে দেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ শহরের চাঁচড়া মোড়ে গিয়ে বেনাপোল, ঢাকা, খুলনা ও ঝিনাইদহে যাওয়ার বাইবাস সড়কগুলো অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। 
এদিকে, সকালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন জানিয়ে বিএনপি শহরে মিছিল করেছে। দলটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। 

বগুড়া
কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বগুড়া। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে থানারোড দিয়ে সাতমাথায় আসতে চাইলে পুলিশের সাথে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ব্যাপক ভাংচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণে সাতমাথা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে সাংবাদিক, পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আহতদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলাতেও এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। বগুড়া জেলাজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের সামনেও সংঘর্ষের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেখানেই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নতুন ব্রিজ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ৪০০-৫০০ আন্দোলকারী অবস্থান নিয়েছেন। যান চলাচল করছে না। সড়কে গাড়িও নেই বললেই চলে। আন্দোলকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। সকাল ১১টার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। টিয়ার শেলের ধোঁয়ায় অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা অবস্থান ছাড়ছেন না।

খুলনা
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খুলনা-যশোর রোডে নতুন রাস্তা মোড়, শিববাড়ি মোড়, পিটিআই মোড়, বাবু খান রোড ও সাউথ সেন্ট্রাল রোডে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা সড়কে জড়ো হয়। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় কাঠের টুকরো, গাছের গুড়ি ও ইট ছড়িয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। এতে শত শত গাড়ি আটকে দীর্ঘ জানজটের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষ ভাংচুর আশংকায় বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। সড়কে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে শহরজুড়ে।

আর আগে গতকাল বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট  শাটডাউন’ ঘোষণা করছি।’ 

তিনি আরো বলেন,  ‘বৃহস্পতিবার শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না। সারা দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছি, কর্মসূচি সফল করুন।’

অভিভাবকদের উদ্দেশে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের অভিভাবকদের বলছি, আমরা আপনাদেরই সন্তান। আমাদের পাশে দাঁড়ান, রক্ষা করুন। এই লড়াইটা শুধু ছাত্রদের না, দলমত নির্বিশেষে এদেশের আপামর জনসাধারণের।

 

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

কোটা আন্দোলন : সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছে

আপডেট সময় ০২:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক  :  নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।  সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, প্রগতি সরণি, উত্তরা, মিরপুরসহ রাজধানীর বেশ কিছু পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ তা প্রতিহত করার চেষ্টা করলে বাধছে সংঘর্ষ, ঘটছে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা।

এদিকে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, বগুড়া, খুলনা, রাজশাহী, যশোরেও শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এসব স্থানেও পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। 

যাত্রাবাড়ী
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে কোনো যানবাহন ঢাকা থেকে বের হতে পারছে না। আবার কোনো যানবাহন ঢুকতেও পারছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আটকে আছে শত শত যানবাহন। সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের রায়েরবাগ অংশে ব্যারিকেড দেওয়ার কারণে ঢাকা থেকে কোনো গাড়ি বের হতে পারছে না। ফলে অনেক গাড়ি আটকা পড়েছে। অন্যদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় রাতে পুলিশের সঙ্গে কতিপয় আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) রাত ১০টা থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এরপর হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায় আগুন দেওয়া হয়। 

রামপুরা
সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর রামপুরা পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সাড়ে ১১টার পর থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২ ও ৩ নম্বর গেটের সামনের সড়কে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং তা চলতে থাকে।

প্রগতি সরণি
প্রগতি সরণি এলাকায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে যোগ দিয়েছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি), ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), ভিকারুননিসাসহ অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজার খানেক শিক্ষার্থী কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডাগামী সড়ক বন্ধ করে অবস্থান নেন। সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় রাস্তায় দুপাশে আটকা পড়েছে অসংখ্য মানুষ।

উত্তরা
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কয়েকশ শিক্ষার্থী উত্তরা জমজম টাওয়ারের মোড়ে অবস্থান নেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশের বক্স ও ২টি মিনিবাস ভাঙচুর করে। উত্তরা জসিম উদ্দিন এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বাড্ডা
রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে মেরুল বাড্ডা এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার পর কয়েকশ শিক্ষার্থী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এ সময় মেরুল বাড্ডা এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী সব যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপরে শিক্ষার্থীরা আবারও সড়কে অবস্থান নেয়।

মিরপুর১০
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হটিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর দখলে নেওয়ার পর ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে পুলিশ। ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে, গুলি করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সংঘর্ষের এলাকায় রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কমপক্ষে ৫টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে।

কাজলা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজলা সংলগ্ন টোলপ্লাজা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, শত শত আন্দোলনকারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছেন। 

যশোর
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে যশোরে বিক্ষোভ শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী যশোরের জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। সেখান থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর একটি বিশাল মিছিল মুজিব সড়ক হয়ে যশোর রেল স্টেশনে পৌঁছায়। রেল লাইনের ওপর কাঠ ফেলে ২০ মিনিট অবরোধ করে রাখে তারা। পরে পুলিশ গিয়ে রেল লাইনের ওপর থেকে কাঠ সরিয়ে দেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ শহরের চাঁচড়া মোড়ে গিয়ে বেনাপোল, ঢাকা, খুলনা ও ঝিনাইদহে যাওয়ার বাইবাস সড়কগুলো অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। 
এদিকে, সকালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন জানিয়ে বিএনপি শহরে মিছিল করেছে। দলটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। 

বগুড়া
কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বগুড়া। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে থানারোড দিয়ে সাতমাথায় আসতে চাইলে পুলিশের সাথে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ব্যাপক ভাংচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণে সাতমাথা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে সাংবাদিক, পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আহতদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলাতেও এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। বগুড়া জেলাজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের সামনেও সংঘর্ষের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সেখানেই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নতুন ব্রিজ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ৪০০-৫০০ আন্দোলকারী অবস্থান নিয়েছেন। যান চলাচল করছে না। সড়কে গাড়িও নেই বললেই চলে। আন্দোলকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। সকাল ১১টার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। টিয়ার শেলের ধোঁয়ায় অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা অবস্থান ছাড়ছেন না।

খুলনা
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খুলনা-যশোর রোডে নতুন রাস্তা মোড়, শিববাড়ি মোড়, পিটিআই মোড়, বাবু খান রোড ও সাউথ সেন্ট্রাল রোডে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা সড়কে জড়ো হয়। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় কাঠের টুকরো, গাছের গুড়ি ও ইট ছড়িয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন তারা। এতে শত শত গাড়ি আটকে দীর্ঘ জানজটের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষ ভাংচুর আশংকায় বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। সড়কে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে শহরজুড়ে।

আর আগে গতকাল বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে ১৮ জুলাই সারাদেশে ‘কমপ্লিট  শাটডাউন’ ঘোষণা করছি।’ 

তিনি আরো বলেন,  ‘বৃহস্পতিবার শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না। সারা দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছি, কর্মসূচি সফল করুন।’

অভিভাবকদের উদ্দেশে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের অভিভাবকদের বলছি, আমরা আপনাদেরই সন্তান। আমাদের পাশে দাঁড়ান, রক্ষা করুন। এই লড়াইটা শুধু ছাত্রদের না, দলমত নির্বিশেষে এদেশের আপামর জনসাধারণের।