অনলাইন ডেস্ক
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। এ বিক্ষোভ কর্মসূচি ও দাঙ্গা সৃষ্টির অভিযোগে ৫৭ জন বাংলাদেশিকে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন দেশটির আদালত। এতে করে গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) মানবাধিকার সংস্থাটি এই বিচার প্রক্রিয়াকে ‘বিচারের নামে প্রহসন’ মন্তব্য করে বলেছে, এ ধরনের দ্রুত বিচার ‘ন্যায্যতা এবং যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ’ তৈরি করে।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে বলেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ ৫৭ জন বাংলাদেশি বিক্ষোভকারীকে নির্বিচারে আটক, দোষী সাব্যস্ত ও দীর্ঘমেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে। দ্রুত বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে। ফলে ন্যায্যতা এবং বিচারের যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে।
তারা টিকটক এবং এক্স-এ পোস্ট করা বিক্ষোভের ছয়টি ভিডিও যাচাই করেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, আবুধাবি, আজমান এবং দুবাইয়ের দুটি এলাকা আল সাতওয়া ও দুবাইয়ের রাস্তায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছে এবং মিছিল করছে। এই ভিডিও এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অন্যান্য ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের কেউই সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না। তারা তাদের স্লোগানেও সহিংসতা উস্কে দেওয়ার মতো কোনো ভাষা ব্যবহার করেনি।
এ প্রসঙ্গে এইচআরডব্লিউ’র আমিরাত বিষয়ক গবেষক জোয়ে শিয়া বলেন, ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে রায় ঘোষণার পর আসামিদের সুষ্ঠ বিচার পাওয়ার কোনো উপায় নেই। এই শাস্তি কেবল ন্যায়বিচারকে উপহাস করে। আমিরাতি কর্তৃপক্ষের উচিত সংহতি জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার জন্য দণ্ডিত সবাইকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পেনাল কোডের অধীনে বিক্ষোভ এবং বিক্ষোভ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। যা দেশটির সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান উভয়ই লঙ্ঘন করে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বেশিরভাগ বাংলাদেশি নাগরিক ছাত্র আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়াতে একাধিক স্থানে শান্তিপূর্ণ সংহতি বিক্ষোভ পরিচালনা করে। শুক্রবার (১৯ জুলাই) আমিরাতের অ্যাটর্নি জেনারেল বিক্ষোভের তদন্তের ঘোষণা দেন। এর একদিন পর রবিবার (২১ জুলাই) আবুধাবির ফেডারেল আপিল আদালত বিক্ষোভের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ৫৭ জনকে সাজা প্রদান করেন এবং ৫৭ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ৩ জনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ১১ বছর ও বাকি ৫৩ জনকে ১০ বছর করে কারাবাসের সাজা দেন আদালত।