সিনিয়র রিপোর্টার
কোটা সংস্কার আন্দোলনে হতাহতের প্রতিবাদে ‘ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে রাজধানীর আটটি এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। তবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ অন্তত ২৬ জনকে আটক করেছে। এছাড়া সারাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় পুলিশ অনেক জায়গায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে অনেককে আটক করা হয়।
এদিকে বিক্ষোভ কর্মসূচি উপলক্ষ্যে রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের অন্যান্য জায়গায়ও বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। ঢাকায় যেসব এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণার কথা ছিল, সকাল থেকে সেসব এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং কোথাও সেনা টহলও দেখা গেছে। পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হেলিকপ্টারের টহলও দেখা গেছে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিক্ষোভকারীরা সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরের ইসিবি চত্বর, সায়েন্স ল্যাব, পল্টন, ধানমন্ডি স্টার কাবাব, নিউমার্কেট, বাড্ডার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, মিরপুর ১০ নম্বর এবং সেগুনবাগিচায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। ওইসব এলাকার কিছু সড়ক বন্ধ করে ডাইভারশন করে দেয় পুলিশ।
এর আগে রবিবার রাতে সারা দেশে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেন তিন সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ, মাহিন সরকার ও সহসমন্বয়ক রিফাত রশীদ।
বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা আদৌ বিক্ষোভকারী ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত করেনি পুলিশ। তবে পুলিশ দাবি করেছে, তারা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি সাব্বির বলেন, সকাল থেকেই মিরপুর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন ছিল। এ সময় সন্দেহভাজন ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।
অপরদিকে, ১২টার দিকে মিরপুরের ইসিবি চত্বরে শিক্ষার্থীদের ৫০-৬০ জনের একটি দল জড়ো হয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করে। তবে পুলিশ ছিল সেখানে দুই শতাধিকের বেশি। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়, লাঠিপেটা করে। শিক্ষার্থীরা গলিতে ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন, ওই এলাকা থেকে অন্তত পাঁচজনকে আটক করে।
ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনেও বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেছেন আন্দোলনকারীরা। তবে বিক্ষোভ করার আগেই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় ধানমন্ডি ১, ২-সহ বিভিন্ন সড়কে পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। পরে ধাওয়া করে আন্দোলনকারীদের ১০ জনকে আটক করে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম বলেন, ধানমন্ডি এলাকা থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।
সায়েন্স ল্যাবে শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে দুপুরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় চারজনকে সেখান থেকে আটক করা হয়। মিরপুর সড়ক পুলিশ বন্ধ করে দেয়। এছাড়া কাঁটাবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুযায়ী বাড্ডার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে দুপুরে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ ধাওয়া দিয়ে দুজনকে গাড়িতে তোলে। তবে তাদের আটক বা গ্রেপ্তারের বিষয়ে কিছু জানায়নি পুলিশ।
বাড্ডা এলাকায় দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। এখন যারা মাঠে নামার চেষ্টা করছেন, তারা নাশকতার চেষ্টা করছেন। জনগণের নিরাপত্তার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাড্ডা ছাড়াও পল্টন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বিক্ষোভ শুরুর আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে শাহবাগ থানা-পুলিশ।
এর আগে রবিবার রাতে ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ ছয়জন সমন্বয়ক ভিডিওবার্তায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তবে কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক।