সিনিয়র রিপোর্টার
চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও দেশের কিছু অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে এর মধ্যেও এক থেকে দুটি মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
চলতি বছর বর্ষার শুরুতে জুনের দ্বিতীয়ার্ধে দেশে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে বন্যার কবলে পড়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চল। ঈদের উৎসবের আগে ও পরে দুই সপ্তাহ দুর্ভোগে কাটে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ আশপাশের জেলার বাসিন্দাদের। সে সময় উত্তরাঞ্চলেও পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়।
উজানের ঢলে জুলাইয়ের শুরুতেও দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। এর ফলে প্লাবিত হয় অনেক গ্রাম। অতি ভারি বৃষ্টির মধ্যে ভারত থেকে নেমে আসা তীব্র ঢলের কারণে গত ২০ আগস্ট থেকে দেশের দক্ষিণ ও উত্তর পূর্বাংশের ১১ জেলায় বন্যা দেখা দেয়।
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দুই-তিন দিন মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। এ ছাড়া সারাদেশে তিন-পাঁচ দিন হালকা বজ্রঝড় হতে পারে।
এ মাসে এক থেকে দুটি মৃদু তাপপ্রবাহ (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি থাকতে পারে।
এছাড়া ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু জায়গায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া দফতরের আবহাওয়াবিদ ড. ছাদেকুল ইসলাম বলেন, এ মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে এক-দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এই সেপ্টেম্বর মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দুই-তিন দিন মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় এবং সারা দেশে তিন থেকে পাঁচ দিন হালকা বজ্রঝড়ের শঙ্কা রয়েছে। দেশে বিচ্ছিন্নভাবে এক-দুটি মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা সামান্য বেশি থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয় রয়েছে। এ কারণে বৃষ্টি কমে গেছে। তবে সোমবারের (২ সেপ্টেম্বর) মধ্যে মৌসুমি বায়ু আবারো শক্তি অর্জন করতে পারে। এতে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে, যা কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মৌসুমি বায়ু বিদায় নেওয়ার সময় এখনো আসেনি। ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে আরেকটি স্বল্পমেয়াদি বন্যার শঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, উত্তর অন্ধ্র-দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলীয় এলাকার অদূরে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত মৌসুমি নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে গিয়ে রবিবার ভোরে কলিংগোপাত্তামের কাছ দিয়ে উত্তর অন্ধ্র-দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি আরো উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এ বছরের বর্ষাকালের স্থায়িত্ব বেশি হবে। চলতি সেপ্টেম্বর বিগত ৫০ বছরের গড়ের তুলনায় ১০৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বৃষ্টি বাড়লে ভাটিতে বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়বে।
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক আমল থেকে আবহাওয়া ও বন্যার পূর্বাভাস যেভাবে ও যে ভাষায় দেওয়া হয়, তা সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য নয়। এটি পরিবর্তন করতে হবে। পূর্বাভাসের পাশাপাশি সতর্কতাও জারি করতে হবে সঠিকভাবে, যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্যোগ মোকাবিলায় আবহাওয়া ও বন্যার পূর্বাভাস ব্যবস্থার সংস্কারেও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।