ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি শামীম ওসমান ও তার পরিবার

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৫:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 8

সিনিয়র রিপোর্টার

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এখনও ৫৫টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েনি। এর মধ্যে বেশিরভাগ অস্ত্রই শামীম ওসমান, তার পরিবারের সদস্য ও অনুসারীদের।

গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছিলেন শামীম ওসমান ও তার বাহিনী। এসব অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৭৩৭টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা চার মেয়াদে মোট ৩২১টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দেওয়ার পর বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে দেওয়া ১৯১টি অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে ১০২টি শটগান ও বন্দুক, ৬৭টি পিস্তল, ১৪টি রাইফেল ও ৮টি রিভলভার। তবে জেলার বিভিন্ন থানায় ১৩৬টি অস্ত্র জমা হলেও এখনো ৫৫টি অস্ত্র জমা পড়েনি।

অস্ত্র জমা না দেওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন- শামীম ওসমান, তার ভাই সেলিম ওসমান, ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন ও শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটু। তাদের কাছে আটটি আগ্নেয়াস্ত্র আছে যা তারা জমা দেননি। তাই জেলা প্রশাসন এসব অস্ত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে। অস্ত্র জমা না দেওয়ার তালিকায় নাম রয়েছে এই আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরীরও।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৮ অক্টোবর শামীম ওসমানের নামে পয়েন্ট ২২ বোরের একটি রাইফেলের লাইসেন্স দেওয়া হয়। তিনি এই রাইফেলের লাইসেন্স একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর নবায়নও করেছেন। গত বছরের ২৬ অক্টোবর একটি এনপিবি পিস্তলের লাইসেন্স নেন তিনি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণার পর বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তিনি অস্ত্র দুটি জমা দেননি। সেই কারণে তার অস্ত্র দুটি অবৈধ হিসেবে বর্তমানে জেলা প্রশাসনের তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়েছে।

তার ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানও তার আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি। ২০২০ সালের ১ মার্চ তার নামে একটি পিস্তল ইস্যু করা হয়। তার নামে ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আরেকটি পিস্তলের লাইসেন্সও দেওয়া হয়। সেটিও তিনি জমা দেননি। শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন এখনও তার শটগানটি জমা দেননি।

তার শ্যালক ও বিসিবির সাবেক পরিচালক তানভীর আহম্মেদ টিটুর নামে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর পয়েন্ট ২২ বোরের একটি রাইফেলের লাইসেন্স দেওয়া হয়। গত বছরের ৫ নভেম্বর পয়েন্ট ২২ বোরের একটি এনপিবি পিস্তলেরও লাইসেন্স পান তিনি। অস্ত্র দুটি তিনি এখনও জমা দেননি।

শামীম ওসমানের বেয়াই (ছেলের শ্বশুর) ফয়েজউদ্দিন আহমেদ লাভলুও তার লাইসেন্সপ্রাপ্ত শটগানটি এখনও জমা দেননি।

এছাড়া অস্ত্র জমা দেননি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, তার স্ত্রী তারাব পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র হাছিনা গাজী, বড় ছেলে গাজী গোলাম মূর্তজা ও ছোট ছেলে গাজী গোলাম আসরিয়াও। ২০১৭ সালে তাদের নামে চারটি শটগানের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। তাদের নামে পিস্তলের লাইসেন্সও ছিল যা তারা জমা দেননি।

শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম ও যুবলীগের ক্যাডার নিয়াজুল ইসলাম খানও অস্ত্র জমা দেননি। এর আগে, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে লক্ষ্য করে গুলি চালান নিজাম ও নিয়াজুল। ওই ঘটনায় করা মামলা থেকে তাদের দুইজনকে পুলিশ অব্যাহতি দিলেও গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিয়াজুলের পিস্তলের লাইসেন্স বাতিল করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।

অভিযোগ আছে, শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও তার বাহিনীর কাছেও একাধিক অবৈধ অস্ত্র আছে। প্রায়ই তারা অস্ত্র হাতে শহরে মহড়া দিতেন। যদিও আজমেরী ওসমানের কোনো অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল না। গত বছর তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে একটি শটগান ও পিস্তলের লাইসেন্সের আবেদন করলেও তার অনুমোদন পাননি।

এছাড়া রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল হক ভূঁইয়া, রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও মুন্সিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জয়নাল আবেদীন অস্ত্র জমা দেননি।

নারায়ণগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি, তাদের ওই অস্ত্রগুলো অবৈধ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান চলছে।

ট্যাগস

খুলনা থানায় ঝুলিয়ে নির্যাতনের এক যুগ পর সাবেক ওসিসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি শামীম ওসমান ও তার পরিবার

আপডেট সময় ০৫:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সিনিয়র রিপোর্টার

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এখনও ৫৫টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েনি। এর মধ্যে বেশিরভাগ অস্ত্রই শামীম ওসমান, তার পরিবারের সদস্য ও অনুসারীদের।

গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছিলেন শামীম ওসমান ও তার বাহিনী। এসব অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৭৩৭টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা চার মেয়াদে মোট ৩২১টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা দেওয়ার পর বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে দেওয়া ১৯১টি অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে ১০২টি শটগান ও বন্দুক, ৬৭টি পিস্তল, ১৪টি রাইফেল ও ৮টি রিভলভার। তবে জেলার বিভিন্ন থানায় ১৩৬টি অস্ত্র জমা হলেও এখনো ৫৫টি অস্ত্র জমা পড়েনি।

অস্ত্র জমা না দেওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন- শামীম ওসমান, তার ভাই সেলিম ওসমান, ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন ও শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটু। তাদের কাছে আটটি আগ্নেয়াস্ত্র আছে যা তারা জমা দেননি। তাই জেলা প্রশাসন এসব অস্ত্র অবৈধ ঘোষণা করেছে। অস্ত্র জমা না দেওয়ার তালিকায় নাম রয়েছে এই আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরীরও।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৮ অক্টোবর শামীম ওসমানের নামে পয়েন্ট ২২ বোরের একটি রাইফেলের লাইসেন্স দেওয়া হয়। তিনি এই রাইফেলের লাইসেন্স একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর নবায়নও করেছেন। গত বছরের ২৬ অক্টোবর একটি এনপিবি পিস্তলের লাইসেন্স নেন তিনি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণার পর বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তিনি অস্ত্র দুটি জমা দেননি। সেই কারণে তার অস্ত্র দুটি অবৈধ হিসেবে বর্তমানে জেলা প্রশাসনের তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়েছে।

তার ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমানও তার আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি। ২০২০ সালের ১ মার্চ তার নামে একটি পিস্তল ইস্যু করা হয়। তার নামে ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আরেকটি পিস্তলের লাইসেন্সও দেওয়া হয়। সেটিও তিনি জমা দেননি। শামীম ওসমানের ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন এখনও তার শটগানটি জমা দেননি।

তার শ্যালক ও বিসিবির সাবেক পরিচালক তানভীর আহম্মেদ টিটুর নামে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর পয়েন্ট ২২ বোরের একটি রাইফেলের লাইসেন্স দেওয়া হয়। গত বছরের ৫ নভেম্বর পয়েন্ট ২২ বোরের একটি এনপিবি পিস্তলেরও লাইসেন্স পান তিনি। অস্ত্র দুটি তিনি এখনও জমা দেননি।

শামীম ওসমানের বেয়াই (ছেলের শ্বশুর) ফয়েজউদ্দিন আহমেদ লাভলুও তার লাইসেন্সপ্রাপ্ত শটগানটি এখনও জমা দেননি।

এছাড়া অস্ত্র জমা দেননি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, তার স্ত্রী তারাব পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র হাছিনা গাজী, বড় ছেলে গাজী গোলাম মূর্তজা ও ছোট ছেলে গাজী গোলাম আসরিয়াও। ২০১৭ সালে তাদের নামে চারটি শটগানের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। তাদের নামে পিস্তলের লাইসেন্সও ছিল যা তারা জমা দেননি।

শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম ও যুবলীগের ক্যাডার নিয়াজুল ইসলাম খানও অস্ত্র জমা দেননি। এর আগে, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে লক্ষ্য করে গুলি চালান নিজাম ও নিয়াজুল। ওই ঘটনায় করা মামলা থেকে তাদের দুইজনকে পুলিশ অব্যাহতি দিলেও গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিয়াজুলের পিস্তলের লাইসেন্স বাতিল করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।

অভিযোগ আছে, শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও তার বাহিনীর কাছেও একাধিক অবৈধ অস্ত্র আছে। প্রায়ই তারা অস্ত্র হাতে শহরে মহড়া দিতেন। যদিও আজমেরী ওসমানের কোনো অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল না। গত বছর তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে একটি শটগান ও পিস্তলের লাইসেন্সের আবেদন করলেও তার অনুমোদন পাননি।

এছাড়া রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল হক ভূঁইয়া, রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও মুন্সিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জয়নাল আবেদীন অস্ত্র জমা দেননি।

নারায়ণগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেননি, তাদের ওই অস্ত্রগুলো অবৈধ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান চলছে।