ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘ ১১ বছর পর রোডমার্চ নিয়ে আবারও রাজপথে নামল বিএনপি : হরতাল ও অবরোধসহ সব কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি নিন

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৭:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • 120
অনলাইন ডেস্ক : দীর্ঘ ১১ বছর পর রোডমার্চ নিয়ে আবারও রাজপথে নামল বিএনপি। সরকার পতনের একদফা দাবিতে বৃহস্পতিবার ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত এ কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। ভৈরব পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রোডমার্চ শুরুর আগে এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা লগি-বৈইঠা দিয়ে মানুষ মারি না। বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াই না, পথচারীদের বস্ত্র হরণ করি না। আমরা এখনো হরতাল দিইনি। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে তিনি প্রশ্ন রাখেন, হরতাল দেওয়ার দরকার আছে? অবরোধ দেওয়ার দরকার আছে? আপনারা পালন করবেন? তিন প্রশ্নের উত্তরে নেতাকর্মীরা ‘হ্যাঁ’ জবাব দেন। তখন গয়েশ্বর বলেন, ঠিক আছে রায় পেলাম। আমরা হরতাল করিনি, কিন্তু করব না সেই প্রতিজ্ঞাও করিনি। জনগণের চাপের কারণে এই অবৈধ সরকারকে মাটিতে বসিয়ে দেওয়ার জন্য হরতাল-অবরোধ যা যা করা দরকার, গণতান্ত্রিক পন্থায় সব ধরনের কর্মসূচি হবে। সেজন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এবারের আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় মরব, নয়তো লড়ব। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব, দেশের মানুষের মালিকানা ফেরত দেব। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না, নির্বাচন হতেও দেবে না। দেশের মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। কারণ তারা জানে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।
সর্বশেষ ২০১২ সালের জানুয়ারিতে একই দাবিতে রোডমার্চ করেছিল বিএনপি। ওই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া এগারোটার দিকে ভৈরব থেকে বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলের বিশাল বহর নিয়ে সিলেট অভিমুখে রোডমার্চ শুরু হয়। ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটে মোট পাঁচটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। তবে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জে রোডমার্চ পৌঁছার পরই আকাশ মেঘলা হয়ে পড়ে।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে সমাবেশ শেষ করে মৌলভীবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হতেই নামে বৃষ্টি। সঙ্গে ঝড়-তুফান। এমন পরিবেশেই শেরপুরের সমাবেশ শেষ করে রাত ৮টার দিকে সিলেটের আলিয়া মাদারাসা মাঠে পৌঁছায় রোডমার্চের বহর। বৃষ্টির মধ্যেই সেখানে সমাপনী সমাবেশের মধ্য দিয়ে রোডমার্চ শেষ হয়। কর্মসূচি চলাকালে কখনো হাত নেড়ে, কখনো গাড়ি থামিয়ে রাস্তার দুপাশে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। রোডমার্চে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ নেতাকর্মীর হাতে ছিল জাতীয় কিংবা দলীয় পতাকা। এদিকে রোডমার্চের একপর্যায়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে উভয় পাশে লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়। কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব প্রতিনিধি জানান, রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশে দিনের ভোট আর যেন আগের রাতে না হতে পারে, সে বিষয়ে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার পরামর্শ দেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি আরও বলেন, এখন দেশের সবকিছুর দাম বাড়ছে। কমছে শুধু দুটির দাম। এর একটি শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) আর অপরটি আওয়ামী লীগ। এ সরকারের সময় দেশ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করতে গিয়ে গয়েশ্বর বলেন, তারেক রহমান দেশের বাইরে থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলে সরকারের ১০৪ ডিগ্রি জ্বর হয়ে যায়। আর দেশে থাকলে কী হতো কে জানে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেশ আলী মামুন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, রোডমার্চ উপলক্ষ্যে রাস্তায় লাখো মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছে, বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরব। হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, দুপুরে সিলেট যাওয়ার পথে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা আমরা ফেরত দিতে চাই। ক্ষমতায় আসার জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের অধিকার আর মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে আমরা রাজপথে নেমেছি। এতে আমাদেরই জয় হবে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হাসিমের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহস্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তারের সঞ্চালনায় সমাবেশ হয়। মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের শেরপুরে রোডমার্চের বহর পৌঁছালে সেখানেও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এ সময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, টেইক ব্যাক বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার দিন শেষ। মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও আরও ছিলেন জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জল, সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জিএমএ মোক্তাদির রাজু, সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রুবেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান প্রমুখ। সিলেট ব্যুরো জানায়, রোডমার্চের বহর হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পার হয়ে মৌলভীবাজারে প্রবেশের পরপরই বাগড়া দিয়ে বসে প্রকৃতি। হঠাৎ বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় ঝড়-তুফান। পরে ঝড়-তুফান থামলেও বৃষ্টি অব্যাহত ছিল রাত পর্যন্ত। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই মৌলভীবাজারের শেরপুর হয়ে রাত ৮টার দিকে সিলেটের আলিয়া মাদরাসা মাঠে পৌঁছায় রোডমার্চের বহর। তবে বৃষ্টির কারণে আলিয়া মাঠ কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। মাঠজুড়ে চেয়ার পাতানো হলেও সেসব চেয়ারে তেমন কেউ বসেননি। সবশেষ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে কথা বলছে। তারা বলেনি বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে, তারা শেখ হাসিনাকে দেখতে চায় না এমন কথাও বলেনি। তারা বলেছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা। আর নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।
অন্যদিকে এই নির্বাচন কমিশনকে বিদায় দিয়ে নতুন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দিন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন দিন। আপনাদেরও নির্বাচনে আসতে হবে। যদি তা না হয় গরু-ছাগলের হাটে বসিয়ে নির্বাচন করলে, সে নির্বাচনে যারা যাবেন তাদেরও শায়েস্তা করা হবে। সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ। বৃষ্টির কারণে মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেননি ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, আরিফুল হক চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেশ আলী মামুন প্রমুখ।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘ ১১ বছর পর রোডমার্চ নিয়ে আবারও রাজপথে নামল বিএনপি : হরতাল ও অবরোধসহ সব কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি নিন

আপডেট সময় ০৭:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
অনলাইন ডেস্ক : দীর্ঘ ১১ বছর পর রোডমার্চ নিয়ে আবারও রাজপথে নামল বিএনপি। সরকার পতনের একদফা দাবিতে বৃহস্পতিবার ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত এ কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। ভৈরব পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রোডমার্চ শুরুর আগে এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা লগি-বৈইঠা দিয়ে মানুষ মারি না। বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াই না, পথচারীদের বস্ত্র হরণ করি না। আমরা এখনো হরতাল দিইনি। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে তিনি প্রশ্ন রাখেন, হরতাল দেওয়ার দরকার আছে? অবরোধ দেওয়ার দরকার আছে? আপনারা পালন করবেন? তিন প্রশ্নের উত্তরে নেতাকর্মীরা ‘হ্যাঁ’ জবাব দেন। তখন গয়েশ্বর বলেন, ঠিক আছে রায় পেলাম। আমরা হরতাল করিনি, কিন্তু করব না সেই প্রতিজ্ঞাও করিনি। জনগণের চাপের কারণে এই অবৈধ সরকারকে মাটিতে বসিয়ে দেওয়ার জন্য হরতাল-অবরোধ যা যা করা দরকার, গণতান্ত্রিক পন্থায় সব ধরনের কর্মসূচি হবে। সেজন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এবারের আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় মরব, নয়তো লড়ব। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব, দেশের মানুষের মালিকানা ফেরত দেব। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না, নির্বাচন হতেও দেবে না। দেশের মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। কারণ তারা জানে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।
সর্বশেষ ২০১২ সালের জানুয়ারিতে একই দাবিতে রোডমার্চ করেছিল বিএনপি। ওই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া এগারোটার দিকে ভৈরব থেকে বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলের বিশাল বহর নিয়ে সিলেট অভিমুখে রোডমার্চ শুরু হয়। ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটে মোট পাঁচটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। তবে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জে রোডমার্চ পৌঁছার পরই আকাশ মেঘলা হয়ে পড়ে।
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে সমাবেশ শেষ করে মৌলভীবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হতেই নামে বৃষ্টি। সঙ্গে ঝড়-তুফান। এমন পরিবেশেই শেরপুরের সমাবেশ শেষ করে রাত ৮টার দিকে সিলেটের আলিয়া মাদারাসা মাঠে পৌঁছায় রোডমার্চের বহর। বৃষ্টির মধ্যেই সেখানে সমাপনী সমাবেশের মধ্য দিয়ে রোডমার্চ শেষ হয়। কর্মসূচি চলাকালে কখনো হাত নেড়ে, কখনো গাড়ি থামিয়ে রাস্তার দুপাশে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। রোডমার্চে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ নেতাকর্মীর হাতে ছিল জাতীয় কিংবা দলীয় পতাকা। এদিকে রোডমার্চের একপর্যায়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একপাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে উভয় পাশে লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়। কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব প্রতিনিধি জানান, রোডমার্চের উদ্বোধনী সমাবেশে দিনের ভোট আর যেন আগের রাতে না হতে পারে, সে বিষয়ে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার পরামর্শ দেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি আরও বলেন, এখন দেশের সবকিছুর দাম বাড়ছে। কমছে শুধু দুটির দাম। এর একটি শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) আর অপরটি আওয়ামী লীগ। এ সরকারের সময় দেশ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করতে গিয়ে গয়েশ্বর বলেন, তারেক রহমান দেশের বাইরে থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলে সরকারের ১০৪ ডিগ্রি জ্বর হয়ে যায়। আর দেশে থাকলে কী হতো কে জানে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেশ আলী মামুন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, রোডমার্চ উপলক্ষ্যে রাস্তায় লাখো মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছে, বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরব। হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, দুপুরে সিলেট যাওয়ার পথে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা আমরা ফেরত দিতে চাই। ক্ষমতায় আসার জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের অধিকার আর মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে আমরা রাজপথে নেমেছি। এতে আমাদেরই জয় হবে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হাসিমের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহস্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তারের সঞ্চালনায় সমাবেশ হয়। মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের শেরপুরে রোডমার্চের বহর পৌঁছালে সেখানেও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এ সময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, টেইক ব্যাক বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার দিন শেষ। মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও আরও ছিলেন জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জল, সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জিএমএ মোক্তাদির রাজু, সদস্য সচিব আহমেদ আহাদ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রুবেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান প্রমুখ। সিলেট ব্যুরো জানায়, রোডমার্চের বহর হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পার হয়ে মৌলভীবাজারে প্রবেশের পরপরই বাগড়া দিয়ে বসে প্রকৃতি। হঠাৎ বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় ঝড়-তুফান। পরে ঝড়-তুফান থামলেও বৃষ্টি অব্যাহত ছিল রাত পর্যন্ত। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই মৌলভীবাজারের শেরপুর হয়ে রাত ৮টার দিকে সিলেটের আলিয়া মাদরাসা মাঠে পৌঁছায় রোডমার্চের বহর। তবে বৃষ্টির কারণে আলিয়া মাঠ কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। মাঠজুড়ে চেয়ার পাতানো হলেও সেসব চেয়ারে তেমন কেউ বসেননি। সবশেষ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে কথা বলছে। তারা বলেনি বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে, তারা শেখ হাসিনাকে দেখতে চায় না এমন কথাও বলেনি। তারা বলেছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা। আর নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।
অন্যদিকে এই নির্বাচন কমিশনকে বিদায় দিয়ে নতুন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দিন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন দিন। আপনাদেরও নির্বাচনে আসতে হবে। যদি তা না হয় গরু-ছাগলের হাটে বসিয়ে নির্বাচন করলে, সে নির্বাচনে যারা যাবেন তাদেরও শায়েস্তা করা হবে। সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ। বৃষ্টির কারণে মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেননি ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, আরিফুল হক চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেশ আলী মামুন প্রমুখ।