ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজার সৈকতে নারীদের হয়রানি, যুবক আটক

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৫:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 79
কক্সবাজার প্রতিনিধি  

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দুই নারীকে মারধর ও হয়রানির কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়ানোর পর তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ওই ঘটনায় জড়িত এক যুবককে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে কক্সবাজার শহরের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম (২৩) নামের ওই যুবককে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ।

ডিবির পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ বলেন, সৈকতে নারী পর্যটককে মারধর ও নির্যাতনের কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। পরে পুলিশ ফুটেজগুলোতে দেখা মেলা যুবকটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে শহরের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় সদর থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নিয়েছে। ফারুকুল পরিবারের সঙ্গে ওই এলাকায় থাকলেও তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার চুনতি এলাকায়। এই ঘটনার আগে ফারুকুল তার ফেসবুক আইডিতে গত বুধবার শহরের লালদিঘীর পাড় এলাকায় ভাসমান যৌনকর্মীদের লাঠি নিয়ে তাড়িয়ে মারধর করার একটি ভিডিও দিয়েছিলেন।

শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে আযম খান নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে তিনটি ভিডিও দিয়ে লেখেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শরীয়া পুলিশিং চালাচ্ছে স্থানীয় সমন্বয়কেরা। কোন নারীকে একা পেলে, কারো পোষাক পছন্দ না হলে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের আক্রমণ করছে। কক্সবাজার এখন আফগানিস্তান।

ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কিটকটে একা বসে থাকা এক তরুণীকে লাঠি হাতে ঘিরে ধরেছেন চার যুবক। তারা প্রথমে ওই তরুণীর পরিচয় এবং কেন রাতে একা সৈকতে অবস্থান করছেন জানতে চান। তরুণীটি ঘুরতে আসার কথা জানালে তারা সন্তুষ্ট হননি। এক পর্যায়ে যুবকরা সৈকতের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলে ওই তরুণীকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।

দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, আরেক তরুণীকে ঘিরে রয়েছে কিছু মানুষ। তাদের মধ্যে লাঠি হাতে আছেন কয়েকজন যুবক। ওই যুবকদের মধ্যে একজন লাঠি দেখিয়ে ওই তরুণীকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন কান ধরে উঠবস করতে। পরে ভয়ার্ত ওই তরুণী উঠবস করতে থাকলে ঘিরে থাকা লোকজনকে অশ্লীল মন্তব্য করতে শোনা গেছে ভিডিওতে।

আরেকটি ভিডিওতে সৈকতের ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ভুক্তভোগী এক তরুণীসহ আরো একজনকে দেখা যায়। সেখানে সাধারণ পোশাকের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে এক তরুণী কান্নারত অবস্থায় অভিযোগ করতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর সেখানে প্রবেশ করেন লাঠি হাতে তরুণীকে উঠবস করানো সেই যুবক।

এ সময় ওই তরুণী যুবকে দেখিয়ে বলছিলেন, উনি আমার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। দয়া করে ফোনটি ফেরত দিন। প্রয়োজনে মোবাইলে থাকা সবকিছু ডিলিট করে দেব। এসব ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তৎপর হয় পুলিশ। ভিডিও দেখে ফারুকুলকে শনাক্ত করার পর তাকে আটক করা হয় বলে জানান ডিবি কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ।

এদিকে ঘটনার সময় ওই যুবক নিজেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক’ বলে দাবি করায় অনেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কক্সবাজারে শুরু থেকে সক্রিয় থাকা স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধিরা বলছেন, যুবকটি ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নন।

স্থানীয় সমন্বয়ক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, আটক যুবক জেলার সমন্বয়ক বা নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ নন। আন্দোলনে যেহেতু শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা শ্রেণি-পেশা, মত ও পথের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল; আটক যুবকেরও অংশগ্রহণ থাকতে পারে। তাই বলে তিনি সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না।

তিনি বলেন, ব্যক্তির দায়ভার সংগঠন নেবে না। ব্যক্তির কর্ম-অপকর্মের জবাবদিহি ব্যক্তিকেই করতে হবে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল কালাম বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি তৃতীয় লিঙ্গের কিছু মানুষকে ব্যবসায়ী ও কয়েকজন ছাত্র মিলে সৈকত থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে ও পর্যটকদের নানাভাবে বিরক্ত করছে— এমন অভিযোগ ছিল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। আমরা এ ব্যাপারে আরো খোঁজখবর নিচ্ছি।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেছেন, কক্সবাজার পর্যটনের শহর। এখানে মানুষ আসে সমুদ্র উপভোগ করার জন্য। এখানে এমন ঘটনা দুঃখজনক। ভিডিওর ভুক্তভোগীর ওপর হামলে পড়ে রীতিমতো মারধরের ভয় দেখিয়ে কান ধরানো হয়েছে, সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। এমন ঘটনা পর্যটন শিল্পেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

এদিকে কক্সবাজারের ঘটনাটির আদ্যোপান্ত ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন এএফপি’র ফ্যাক্ট চেক এডিটর কদরুদ্দিন শিশির। শিশিরের পোস্ট শেয়ার করে সাংবাদিক, কলামিস্ট ও উন্নয়নকর্মী শরিফুল হাসান লিখেছেন, ভিডিগুলো ভয়াবহ! মনে হয় না দেশে আইন আছে। যারা এইসব ঘটায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে প্রমাণ করতে হবে সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর!

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

কক্সবাজার সৈকতে নারীদের হয়রানি, যুবক আটক

আপডেট সময় ০৫:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
কক্সবাজার প্রতিনিধি  

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দুই নারীকে মারধর ও হয়রানির কয়েকটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়ানোর পর তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে ওই ঘটনায় জড়িত এক যুবককে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে কক্সবাজার শহরের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম (২৩) নামের ওই যুবককে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ।

ডিবির পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ বলেন, সৈকতে নারী পর্যটককে মারধর ও নির্যাতনের কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। পরে পুলিশ ফুটেজগুলোতে দেখা মেলা যুবকটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে শহরের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় সদর থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নিয়েছে। ফারুকুল পরিবারের সঙ্গে ওই এলাকায় থাকলেও তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার চুনতি এলাকায়। এই ঘটনার আগে ফারুকুল তার ফেসবুক আইডিতে গত বুধবার শহরের লালদিঘীর পাড় এলাকায় ভাসমান যৌনকর্মীদের লাঠি নিয়ে তাড়িয়ে মারধর করার একটি ভিডিও দিয়েছিলেন।

শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে আযম খান নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে তিনটি ভিডিও দিয়ে লেখেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শরীয়া পুলিশিং চালাচ্ছে স্থানীয় সমন্বয়কেরা। কোন নারীকে একা পেলে, কারো পোষাক পছন্দ না হলে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের আক্রমণ করছে। কক্সবাজার এখন আফগানিস্তান।

ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কিটকটে একা বসে থাকা এক তরুণীকে লাঠি হাতে ঘিরে ধরেছেন চার যুবক। তারা প্রথমে ওই তরুণীর পরিচয় এবং কেন রাতে একা সৈকতে অবস্থান করছেন জানতে চান। তরুণীটি ঘুরতে আসার কথা জানালে তারা সন্তুষ্ট হননি। এক পর্যায়ে যুবকরা সৈকতের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলে ওই তরুণীকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।

দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যায়, আরেক তরুণীকে ঘিরে রয়েছে কিছু মানুষ। তাদের মধ্যে লাঠি হাতে আছেন কয়েকজন যুবক। ওই যুবকদের মধ্যে একজন লাঠি দেখিয়ে ওই তরুণীকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন কান ধরে উঠবস করতে। পরে ভয়ার্ত ওই তরুণী উঠবস করতে থাকলে ঘিরে থাকা লোকজনকে অশ্লীল মন্তব্য করতে শোনা গেছে ভিডিওতে।

আরেকটি ভিডিওতে সৈকতের ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ভুক্তভোগী এক তরুণীসহ আরো একজনকে দেখা যায়। সেখানে সাধারণ পোশাকের এক পুলিশ কর্মকর্তাকে এক তরুণী কান্নারত অবস্থায় অভিযোগ করতে দেখা গেছে। কিছুক্ষণ পর সেখানে প্রবেশ করেন লাঠি হাতে তরুণীকে উঠবস করানো সেই যুবক।

এ সময় ওই তরুণী যুবকে দেখিয়ে বলছিলেন, উনি আমার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। দয়া করে ফোনটি ফেরত দিন। প্রয়োজনে মোবাইলে থাকা সবকিছু ডিলিট করে দেব। এসব ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তৎপর হয় পুলিশ। ভিডিও দেখে ফারুকুলকে শনাক্ত করার পর তাকে আটক করা হয় বলে জানান ডিবি কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ।

এদিকে ঘটনার সময় ওই যুবক নিজেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক’ বলে দাবি করায় অনেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কক্সবাজারে শুরু থেকে সক্রিয় থাকা স্থানীয় ছাত্র প্রতিনিধিরা বলছেন, যুবকটি ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নন।

স্থানীয় সমন্বয়ক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, আটক যুবক জেলার সমন্বয়ক বা নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ নন। আন্দোলনে যেহেতু শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা শ্রেণি-পেশা, মত ও পথের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল; আটক যুবকেরও অংশগ্রহণ থাকতে পারে। তাই বলে তিনি সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না।

তিনি বলেন, ব্যক্তির দায়ভার সংগঠন নেবে না। ব্যক্তির কর্ম-অপকর্মের জবাবদিহি ব্যক্তিকেই করতে হবে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবুল কালাম বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি তৃতীয় লিঙ্গের কিছু মানুষকে ব্যবসায়ী ও কয়েকজন ছাত্র মিলে সৈকত থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করছে ও পর্যটকদের নানাভাবে বিরক্ত করছে— এমন অভিযোগ ছিল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। আমরা এ ব্যাপারে আরো খোঁজখবর নিচ্ছি।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেছেন, কক্সবাজার পর্যটনের শহর। এখানে মানুষ আসে সমুদ্র উপভোগ করার জন্য। এখানে এমন ঘটনা দুঃখজনক। ভিডিওর ভুক্তভোগীর ওপর হামলে পড়ে রীতিমতো মারধরের ভয় দেখিয়ে কান ধরানো হয়েছে, সেই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। এমন ঘটনা পর্যটন শিল্পেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

এদিকে কক্সবাজারের ঘটনাটির আদ্যোপান্ত ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন এএফপি’র ফ্যাক্ট চেক এডিটর কদরুদ্দিন শিশির। শিশিরের পোস্ট শেয়ার করে সাংবাদিক, কলামিস্ট ও উন্নয়নকর্মী শরিফুল হাসান লিখেছেন, ভিডিগুলো ভয়াবহ! মনে হয় না দেশে আইন আছে। যারা এইসব ঘটায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে প্রমাণ করতে হবে সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর!