ঢাকা , শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩০ নভেম্বরের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৬:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 35

সিনিয়র রিপোর্টার

সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব দিতে হবে। তবে আগামী বছর থেকে প্রতি বছরের সম্পদের হিসাব দিতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। 

রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সরকারি কর্মচারীদের সম্পত্তির হিসাব জমাদান নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি এও জানান, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হয়েছে বলে গুজব রটানো হচ্ছে।

সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদেও হিসাব জমার বিষয়ে তিনি বলেন, ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারীকে ‘সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি, ১৯৭৯’-এর আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। প্রতি বছরের সম্পদের হিসাব ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে। এবার যেহেতু আমরা নতুন বছর পাইনি, ভাঙা বছর পেয়েছি, এজন্য এ বছরেরটা আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে।

সিনিয়র সচিব বলেন, সম্পদের হিসাব সিলগালা করা খামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। সম্পদ বিবরণীতে ভুল তথ্য কিংবা গোপন এমন কোনো তথ্য থাকে যা মিসলিড করে, এটি হবে ১৯৭৯ সালের বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

‘এই অনুশাসন মানা সব কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকারিভাবে কর্মচারী বলা হয়’, বলেন তিনি।

মোখলেস উর রহমান জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রণীত নির্ধারিত ছকে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করতে হবে। ছকটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

সিনিয়র সচিব বলেন, বিজ্ঞ আদালতের আদর্শ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সম্পদ বিবরণীর তথ্য সম্পূর্ণ অংশবিশেষ হস্তান্তরযোগ্য নয়। সম্পদ বিবরণী অতি গোপনীয় দলিল বিধায় এক্ষেত্রে ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ প্রযোজ্য হবে না।

তিনি বলেন, সম্পদ বিবরণী জমা না দিলে কী হবে- অনেকে তা জানতে চেয়েছিলেন। জমা না দিলে অনেক কিছু হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা কোনো ভুল তথ্য প্রদান কিংবা তথ্য গোপন করা হলে বা সম্পদের কোনোরূপ অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’-এর ৪(৫)(গ) উপবিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’র জন্য লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ড আরোপের বিধান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তিরস্কার, পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা, দায়িত্বে অবহেলার কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ আদায়, বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হচ্ছে লঘুদণ্ড।

অন্যদিকে গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে- নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, চাকরি থেকে অপসারণ ও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা বলে জানান মোখলেস উর রহমান।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর করার বিষয়টি গুজব : সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হচ্ছে বলে যেসব খবর বের হচ্ছে, সেগুলোকে গুজব বলে উল্লেখ করেন মোখলেস উর রহমান। এসব খবরে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর হচ্ছে বলে অনেক জায়গায় সংবাদ হচ্ছে, ‘এ বিষয়ে আপনারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?’ জবাবে মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘আমার একটাই উত্তর, গুজবে কান দেবেন না।’

তখন ওই সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেন, ‘আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?’ জবাবে জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, ‘আমি তো এক কথায় বলে দিলাম, গুজবে কান দেবেন না। আমি যদি এই কথা বলি, তার মানে এটি গুজব।’

বর্তমানে চাকরিতে প্রবেশের সাধারণত সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর। আর অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা ৫৯ বছর। কিছু চাকরিপ্রত্যাশীরা বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ দাবিতে কয়েক দিন আগে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়েছিল। এ ছাড়া প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স ৬৫ বছর করার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করেছিল। তবে বিষয়টি যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধির আওতার মধ্যে পড়ে, তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দাবিসংক্রান্ত সেই চিঠি বা প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু এ-সংক্রান্ত যে প্রস্তাব জমা পড়েছিল, সেটিই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এরপর থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়ছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা হচ্ছে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

৩০ নভেম্বরের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে

আপডেট সময় ০৬:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সিনিয়র রিপোর্টার

সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চলতি বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব দিতে হবে। তবে আগামী বছর থেকে প্রতি বছরের সম্পদের হিসাব দিতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। 

রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সরকারি কর্মচারীদের সম্পত্তির হিসাব জমাদান নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি এও জানান, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হয়েছে বলে গুজব রটানো হচ্ছে।

সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদেও হিসাব জমার বিষয়ে তিনি বলেন, ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারীকে ‘সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি, ১৯৭৯’-এর আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। প্রতি বছরের সম্পদের হিসাব ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে। এবার যেহেতু আমরা নতুন বছর পাইনি, ভাঙা বছর পেয়েছি, এজন্য এ বছরেরটা আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে।

সিনিয়র সচিব বলেন, সম্পদের হিসাব সিলগালা করা খামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। সম্পদ বিবরণীতে ভুল তথ্য কিংবা গোপন এমন কোনো তথ্য থাকে যা মিসলিড করে, এটি হবে ১৯৭৯ সালের বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

‘এই অনুশাসন মানা সব কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরকারিভাবে কর্মচারী বলা হয়’, বলেন তিনি।

মোখলেস উর রহমান জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রণীত নির্ধারিত ছকে সম্পদ-বিবরণী দাখিল করতে হবে। ছকটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে।

সিনিয়র সচিব বলেন, বিজ্ঞ আদালতের আদর্শ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সম্পদ বিবরণীর তথ্য সম্পূর্ণ অংশবিশেষ হস্তান্তরযোগ্য নয়। সম্পদ বিবরণী অতি গোপনীয় দলিল বিধায় এক্ষেত্রে ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ প্রযোজ্য হবে না।

তিনি বলেন, সম্পদ বিবরণী জমা না দিলে কী হবে- অনেকে তা জানতে চেয়েছিলেন। জমা না দিলে অনেক কিছু হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে অথবা কোনো ভুল তথ্য প্রদান কিংবা তথ্য গোপন করা হলে বা সম্পদের কোনোরূপ অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’-এর ৪(৫)(গ) উপবিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’র জন্য লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ড আরোপের বিধান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তিরস্কার, পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা, দায়িত্বে অবহেলার কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ আদায়, বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিত করা হচ্ছে লঘুদণ্ড।

অন্যদিকে গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে- নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, চাকরি থেকে অপসারণ ও চাকরি থেকে বরখাস্ত করা বলে জানান মোখলেস উর রহমান।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর করার বিষয়টি গুজব : সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হচ্ছে বলে যেসব খবর বের হচ্ছে, সেগুলোকে গুজব বলে উল্লেখ করেন মোখলেস উর রহমান। এসব খবরে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর হচ্ছে বলে অনেক জায়গায় সংবাদ হচ্ছে, ‘এ বিষয়ে আপনারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?’ জবাবে মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘আমার একটাই উত্তর, গুজবে কান দেবেন না।’

তখন ওই সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেন, ‘আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?’ জবাবে জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, ‘আমি তো এক কথায় বলে দিলাম, গুজবে কান দেবেন না। আমি যদি এই কথা বলি, তার মানে এটি গুজব।’

বর্তমানে চাকরিতে প্রবেশের সাধারণত সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর। আর অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা ৫৯ বছর। কিছু চাকরিপ্রত্যাশীরা বেশ কয়েক বছর ধরে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ দাবিতে কয়েক দিন আগে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়েছিল। এ ছাড়া প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স ৬৫ বছর করার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করেছিল। তবে বিষয়টি যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধির আওতার মধ্যে পড়ে, তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দাবিসংক্রান্ত সেই চিঠি বা প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু এ-সংক্রান্ত যে প্রস্তাব জমা পড়েছিল, সেটিই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এরপর থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়ছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা হচ্ছে।