ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার চাপে পড়ে বিএনপি নির্বাচনে আসবে, বলছে আওয়ামী লীগ

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • 184

সিনিয়র রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার চাপে পড়ে নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত থেকে বিএনপি সরে আসবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে যে কোনো দেশের জন্য লজ্জাজনক। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। বিএনপি-জামায়াত তাদের অসত্য তথ্য দিয়েছে। আর সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এসব সিদ্ধান্ত আসছে। তাদের মতে, এই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের জন্য কোনো চাপ তৈরি করবে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও আওয়ামী লীগের চাওয়া একই। উভয়েই আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ দেখতে চায়।

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ  ও সুষ্ঠ করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে ভিসানীতি ঘোষণা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ঘোষণা অনুযায়ী, নির্বাচনে কারচুপি, ভীতি প্রদর্শন এবং নাগরিক ও গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতায় যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে বলে জানায় দেশটি। এই ঘোষণার চার মাস পর গত শুক্রবার শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বিবৃতিতে জানান, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা এই ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। অবশ্য নীতি অনুযায়ী কারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন তা প্রকাশ করবে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে শুরু করে মধ্যম সারির নেতারাও বলছেন- ভিসানীতি নিয়ে দল বা সরকারে কোনো চাপ নেই। বরং নির্বাচন ঠেকাতে সহিংসতা করলে বিপদে পড়বেন বিএনপি নেতারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৫৭তম সাধারণ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থানকালে এই বিবৃতি দেওয়া হয়। একই দিনে মিট দ্যা প্রেসে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার সময় ভিসানীতির ইস্যুতেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আশা করেন, বিরোধী দলসহ নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টাকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। তাছাড়া যে দেশ ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তারা উভয় পক্ষ থেকে বা নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি বিবেচনা করবে।

প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরদিন দেশে একাধিক অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। তারা সবাই ভিসানীতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোনো চাপ নেই বলে দাবি করেছেন।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে কোনো পক্ষেরই তৃপ্তিতে ভোগার কারণ নেই। সুষ্ঠ নির্বাচনের লক্ষ্যে দেশটি যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তা ধীরে ধীরে আরও কঠোর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতির পর থেকে রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘনিষ্ঠজনদের কাছে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। বিশেষ করে যাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে আছেন তাদের মধ্যে বেশি উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

কী বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

চিকিৎসা শেষে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না তাদের দল। শান্তিপূর্ণ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায় আওয়ামী লীগ সরকার। অবাধ, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ নির্বাচন যারা চায়, তাদের ভিসানীতি নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।’

মার্কিন ভিসা বিধিনিষেধ যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করায় প্রধান বিরোধী দল সহিংসতা করতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভিসানীতিতে সরকার কিংবা আমাদের দল কোনো চাপ অনুভব করছে না। আমরা এটিকে স্বাগত জানাই। এটির পরিপ্রেক্ষিতে বরং বিএনপির ওপরই চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ভিসানীতি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ব্যাপার। তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। কাকে ভিসা দেবে, নাকি না দেবে, সেটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে ক্ষমতাসীন দলের সব নেতাদের ভাষ্য সরকারও যুক্তরাষ্ট্রের মতো সুষ্ঠ নির্বাচন করতে চায়।

কী বলছে বিএনপি নেতারা

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কথা বলেনি বিএনপি। তবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশটির এমন ঘোষণাকে সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এসে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ এসেছে। এ জন্য বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো দায় নেই, এককভাবে সরকারই দায়ী। বাইডেন প্রশাসন বিশ্বে গণতন্ত্রের কথা বলছে। এর অংশ হিসেবে তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে পদক্ষেপ নিয়েছে। এর আগে তারা গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে এক ধরনের বার্তা দিয়েছিল। পরপর দুটি সম্মেলন থেকে বাদ পড়ার পরও আন্তর্জাতিক বিশ্বের সেই বার্তাকে অনুধাবন করেনি দেশের ক্ষমতাসীনরা। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সরকার তাতেও গুরুত্ব দেয়নি। গত ১৮ বছর ধরে বিরোধী দলের তো কোনো ভূমিকাই নেই, তারা এমন কোনো কাজ করেননি, যে কাজের জন্য একটা সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের টেনশনের কী আছে? আন্তর্জাতিক বিশ্বকে তো বোকা বানানোর সুযোগ নেই। শোনা যাচ্ছে সরকারি দলের অনেক নেতা, প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা এই ভিসানীতির আওতায় পড়েছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র আছেন। শুনতেছি তিনি অতি তাড়াতাড়ি চলে আসবেন। আসেন, দেশে দাঁড়িয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তাহলে কিছুটা হলেও রক্ষার পথ পাওয়া যাবে।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বাংলাদেশ ইতিহাসের বিগত ৫২ বছরে যেটা সামরিক শাসনামলেও হয়নি– সেটা এই সরকারের আমলে হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে তাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবকে রক্তাক্ত করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে প্রার্থী রুমানা মাহমুদকে গুলি করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ আরও অনেক প্রার্থীর ওপরে সরাসরি হামলা করা হয়েছে। এই নির্বাচনেও গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে রেখে আবারও দেশে বাকশাল গঠনের নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ।

দলের কূটনৈতিক উইংয়ের সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো যেভাবে একটি নির্বাচন প্রত্যাশা করছে, সেটার জন্যই তারা এই আন্দোলন করছেন। বর্তমানে কিংবা এরও আগে জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে যারা অধিষ্ঠিত ছিল, তাদেরই বুঝানো হয়েছে।

কী বলছে জাতীয় পার্টির নেতারা

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

পরে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য ফকরুল ইমাম বলেন, ভিসানীতি নিয়ে আমরা তো কোনো চাপ দেখছি না। কারণ আমরাও তো নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আসলে যেটা হয়েছে সেটা হলো ওইভাবে আন্দোলন করার মতো সাংগঠনিক শক্তি তো আমাদের নেই। আমরা সংসদে কথা বলি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছি। আর আমরা তো নির্বাচনে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াই না। সুতরাং আমাদের জন্য কেন দুঃশ্চিন্তার কারণ হবে ভিসানীতি?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘ইটস নট এ গুড নিউজ। যুক্তরাষ্ট্রকে সাত-পাঁচ বুঝিয়ে লাভ নেই। আর যারা এখন চাপ নেই, আমাদের জন্য চিন্তার কারণ নেই বলছেন তারা নিজেদের জাহির করতে এসব কথা বলছেন। তারা যেভাবে বলছেন বিষয়টা মোটেও তেমন নয়। যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্টভাবে বলেছে সরকার ও বিরোধী দলের কথা। অফিসিয়াললি বিরোধী দল তো জাতীয় পার্টি। তাদের এক অংশ সরকারের স্বার্থ দেখছে। আরেক অংশ বিরোধী দল হিসেবে আছে। নিষেধাজ্ঞা কাকে দিয়েছে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের পলিসি অনুযায়ী নাম প্রকাশ করবে না। ফলে কাকে দেওয়া হয়েছে তিনি ছাড়া পরিবারের লোকজনও জানার কথা নয়।’

সামনের দিকে তাহলে কী হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরপর ব্যক্তিগতভাবে স্যাংশন দেওয়া হতে পারে। জিএসপি সুবিধা বাতিলের মতো পদক্ষেপও নেওয়া হতে পারে। এতে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামবে।’

ট্যাগস

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার চাপে পড়ে বিএনপি নির্বাচনে আসবে, বলছে আওয়ামী লীগ

আপডেট সময় ০৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সিনিয়র রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার চাপে পড়ে নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত থেকে বিএনপি সরে আসবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে যে কোনো দেশের জন্য লজ্জাজনক। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। বিএনপি-জামায়াত তাদের অসত্য তথ্য দিয়েছে। আর সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এসব সিদ্ধান্ত আসছে। তাদের মতে, এই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের জন্য কোনো চাপ তৈরি করবে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও আওয়ামী লীগের চাওয়া একই। উভয়েই আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ দেখতে চায়।

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ  ও সুষ্ঠ করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে ভিসানীতি ঘোষণা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ঘোষণা অনুযায়ী, নির্বাচনে কারচুপি, ভীতি প্রদর্শন এবং নাগরিক ও গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতায় যারা বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে বলে জানায় দেশটি। এই ঘোষণার চার মাস পর গত শুক্রবার শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বিবৃতিতে জানান, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা এই ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। অবশ্য নীতি অনুযায়ী কারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন তা প্রকাশ করবে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে শুরু করে মধ্যম সারির নেতারাও বলছেন- ভিসানীতি নিয়ে দল বা সরকারে কোনো চাপ নেই। বরং নির্বাচন ঠেকাতে সহিংসতা করলে বিপদে পড়বেন বিএনপি নেতারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৫৭তম সাধারণ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থানকালে এই বিবৃতি দেওয়া হয়। একই দিনে মিট দ্যা প্রেসে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার সময় ভিসানীতির ইস্যুতেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আশা করেন, বিরোধী দলসহ নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টাকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। তাছাড়া যে দেশ ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তারা উভয় পক্ষ থেকে বা নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি বিবেচনা করবে।

প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরদিন দেশে একাধিক অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। তারা সবাই ভিসানীতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোনো চাপ নেই বলে দাবি করেছেন।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে কোনো পক্ষেরই তৃপ্তিতে ভোগার কারণ নেই। সুষ্ঠ নির্বাচনের লক্ষ্যে দেশটি যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তা ধীরে ধীরে আরও কঠোর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতির পর থেকে রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘনিষ্ঠজনদের কাছে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। বিশেষ করে যাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে আছেন তাদের মধ্যে বেশি উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

কী বলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

চিকিৎসা শেষে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না তাদের দল। শান্তিপূর্ণ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায় আওয়ামী লীগ সরকার। অবাধ, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ নির্বাচন যারা চায়, তাদের ভিসানীতি নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।’

মার্কিন ভিসা বিধিনিষেধ যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করায় প্রধান বিরোধী দল সহিংসতা করতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভিসানীতিতে সরকার কিংবা আমাদের দল কোনো চাপ অনুভব করছে না। আমরা এটিকে স্বাগত জানাই। এটির পরিপ্রেক্ষিতে বরং বিএনপির ওপরই চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ভিসানীতি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ব্যাপার। তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। কাকে ভিসা দেবে, নাকি না দেবে, সেটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে ক্ষমতাসীন দলের সব নেতাদের ভাষ্য সরকারও যুক্তরাষ্ট্রের মতো সুষ্ঠ নির্বাচন করতে চায়।

কী বলছে বিএনপি নেতারা

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কথা বলেনি বিএনপি। তবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশটির এমন ঘোষণাকে সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এসে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ এসেছে। এ জন্য বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো দায় নেই, এককভাবে সরকারই দায়ী। বাইডেন প্রশাসন বিশ্বে গণতন্ত্রের কথা বলছে। এর অংশ হিসেবে তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে পদক্ষেপ নিয়েছে। এর আগে তারা গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে এক ধরনের বার্তা দিয়েছিল। পরপর দুটি সম্মেলন থেকে বাদ পড়ার পরও আন্তর্জাতিক বিশ্বের সেই বার্তাকে অনুধাবন করেনি দেশের ক্ষমতাসীনরা। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সরকার তাতেও গুরুত্ব দেয়নি। গত ১৮ বছর ধরে বিরোধী দলের তো কোনো ভূমিকাই নেই, তারা এমন কোনো কাজ করেননি, যে কাজের জন্য একটা সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের টেনশনের কী আছে? আন্তর্জাতিক বিশ্বকে তো বোকা বানানোর সুযোগ নেই। শোনা যাচ্ছে সরকারি দলের অনেক নেতা, প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা এই ভিসানীতির আওতায় পড়েছে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র আছেন। শুনতেছি তিনি অতি তাড়াতাড়ি চলে আসবেন। আসেন, দেশে দাঁড়িয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তাহলে কিছুটা হলেও রক্ষার পথ পাওয়া যাবে।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বাংলাদেশ ইতিহাসের বিগত ৫২ বছরে যেটা সামরিক শাসনামলেও হয়নি– সেটা এই সরকারের আমলে হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে তাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবকে রক্তাক্ত করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে প্রার্থী রুমানা মাহমুদকে গুলি করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ আরও অনেক প্রার্থীর ওপরে সরাসরি হামলা করা হয়েছে। এই নির্বাচনেও গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে রেখে আবারও দেশে বাকশাল গঠনের নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ।

দলের কূটনৈতিক উইংয়ের সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো যেভাবে একটি নির্বাচন প্রত্যাশা করছে, সেটার জন্যই তারা এই আন্দোলন করছেন। বর্তমানে কিংবা এরও আগে জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে যারা অধিষ্ঠিত ছিল, তাদেরই বুঝানো হয়েছে।

কী বলছে জাতীয় পার্টির নেতারা

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

পরে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য ফকরুল ইমাম বলেন, ভিসানীতি নিয়ে আমরা তো কোনো চাপ দেখছি না। কারণ আমরাও তো নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আসলে যেটা হয়েছে সেটা হলো ওইভাবে আন্দোলন করার মতো সাংগঠনিক শক্তি তো আমাদের নেই। আমরা সংসদে কথা বলি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছি। আর আমরা তো নির্বাচনে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াই না। সুতরাং আমাদের জন্য কেন দুঃশ্চিন্তার কারণ হবে ভিসানীতি?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘ইটস নট এ গুড নিউজ। যুক্তরাষ্ট্রকে সাত-পাঁচ বুঝিয়ে লাভ নেই। আর যারা এখন চাপ নেই, আমাদের জন্য চিন্তার কারণ নেই বলছেন তারা নিজেদের জাহির করতে এসব কথা বলছেন। তারা যেভাবে বলছেন বিষয়টা মোটেও তেমন নয়। যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্টভাবে বলেছে সরকার ও বিরোধী দলের কথা। অফিসিয়াললি বিরোধী দল তো জাতীয় পার্টি। তাদের এক অংশ সরকারের স্বার্থ দেখছে। আরেক অংশ বিরোধী দল হিসেবে আছে। নিষেধাজ্ঞা কাকে দিয়েছে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের পলিসি অনুযায়ী নাম প্রকাশ করবে না। ফলে কাকে দেওয়া হয়েছে তিনি ছাড়া পরিবারের লোকজনও জানার কথা নয়।’

সামনের দিকে তাহলে কী হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরপর ব্যক্তিগতভাবে স্যাংশন দেওয়া হতে পারে। জিএসপি সুবিধা বাতিলের মতো পদক্ষেপও নেওয়া হতে পারে। এতে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামবে।’