ঢাকা , শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্মান্তরের কারণে মা-মেয়ের নিপীড়ন : একটু শান্তিতে চলাফেরার জন্যই তারা আমেরিকায় চলে যেতে বাধ্যহন

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৭:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • 48
অনলাইন ডেস্ক  :  কাউসার জাহান সমাজের প্রতিক্রিয়ার শিকার রাজধানী ঢাকার একটি সাধারণ পরিবার। একটি ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির শিকার কাউসার জাহান ও তাঁর কন্যা। দীর্ঘদিন ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে জীবন যাপন করার পর, ব্যক্তিগত বিশ্বাসের পরিবর্তনে কাউসার এবং তাঁর কন্যা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এই সিদ্ধান্তটি ছিল সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় এবং গভীর ধর্মীয় চিন্তাভাবনার ফল, কিন্তু সমাজ এবং পরিবার তাদের জন্য পরিস্থিতি করেছে কঠিন ও অসম্ভব। আত্মীয়-স্বজনসহ সমাজের একটি বড় অংশ তাদের একঘরে করেছিল বলেই মা ও মেয়ে তারা আর দেশে থাকতে না পারায় বিদেশে সুদুর আমেরিকায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বিভিন্ন মহলের অপমান লাঞ্ছনা থেকে বাঁচার জন্য একটু শান্তিতে চলাফেরার জন্যই তারা আমেরিকায় চলে যেতে বাধ্য হন।
কাউসার জাহান একজন সফল ব্যাংকার তিনি দীর্ঘ দিন ১৪ বছর ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মরত ছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ইউনিয়ন ব্যাংকেও যোগদান করে সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। স্বামীর সাথে বিবাহিত জীবনের মধ্যেই তিনি তাঁর ধর্মান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। তবে, এই সিদ্ধান্ত তাঁকে এবং তাঁর কন্যাকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে অপমান, লাঞ্ছনা এবং হুমকির মুখে ফেলে দেয়। প্রতিবেশী থেকে শুরু করে অফিসের সহকর্মী, মেয়ের স্কুলের ক্লাসমেট, এমনকি আত্মীয়-স্বজনও এই পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে পারেনি। সমাজের একটি বড় অংশ তাদেরকে একঘরে করে তুলেছে। তাদের বিরুদ্ধে সমাজের অভিযোগ শুধু ধর্ম পরিবর্তনের কারণে নয়, বরং ধর্মান্তরের কারণে তাদের জীবনধারায় যে পরিবর্তন এসেছে, তা মেনে নিতে পারেনি অনেকেই। মেয়ে স্কুলে লাঞ্ছনার শিকার, আর তাকে অফিসের সহকর্মীদের কাছ থেকে শুনতে হচ্ছে নানা ধরনের কটূক্তি। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে কাউসার এবং তাঁর কন্যা শুধুমাত্র মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন না, তাঁর গৃহে স্বামীর কাছ থেকেও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের উপর প্রহারের ঘটনা নিয়মিত ঘটেছে, যা তাঁদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে কাউসার জাহান বলেন, “আমি আমার বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই ধর্মান্তরিত হয়েছি। কিন্তু আমার এই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের জন্য আমার জীবনটা এতটা কঠিন হয়ে যাবে, তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আমার মেয়ে এবং আমি দুজনেই সমাজ এবং পরিবারের কাছ থেকে যে হারে নিপীড়নের শিকার হয়েছি এবং হচ্ছি, তাতে আমাদের জীবনে শান্তি যেন হারিয়ে গেছে” আমাদের জীবন এখন হুমকির মুখে। ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা হলেও, সমাজে ধর্মান্তরিত মানুষদের প্রতি এমন আচরণ ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কাউসারের মতো মানুষদের সমাজের প্রতিটি স্তরে সমান অধিকার ও সম্মান পাওয়া অধিকার আছে ,কিন্তু বাস্তবতা যেন ঠিক তার উল্টো।
এমন অবস্থায় ধর্মান্তরিত কাউসার এবং তাঁর কন্যার জীবনের ওপর চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে সমাজের সচেতন অংশ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সমাজে এমন কুসংস্কার এবং অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি।
ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

ধর্মান্তরের কারণে মা-মেয়ের নিপীড়ন : একটু শান্তিতে চলাফেরার জন্যই তারা আমেরিকায় চলে যেতে বাধ্যহন

আপডেট সময় ০৭:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
অনলাইন ডেস্ক  :  কাউসার জাহান সমাজের প্রতিক্রিয়ার শিকার রাজধানী ঢাকার একটি সাধারণ পরিবার। একটি ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির শিকার কাউসার জাহান ও তাঁর কন্যা। দীর্ঘদিন ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে জীবন যাপন করার পর, ব্যক্তিগত বিশ্বাসের পরিবর্তনে কাউসার এবং তাঁর কন্যা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এই সিদ্ধান্তটি ছিল সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় এবং গভীর ধর্মীয় চিন্তাভাবনার ফল, কিন্তু সমাজ এবং পরিবার তাদের জন্য পরিস্থিতি করেছে কঠিন ও অসম্ভব। আত্মীয়-স্বজনসহ সমাজের একটি বড় অংশ তাদের একঘরে করেছিল বলেই মা ও মেয়ে তারা আর দেশে থাকতে না পারায় বিদেশে সুদুর আমেরিকায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বিভিন্ন মহলের অপমান লাঞ্ছনা থেকে বাঁচার জন্য একটু শান্তিতে চলাফেরার জন্যই তারা আমেরিকায় চলে যেতে বাধ্য হন।
কাউসার জাহান একজন সফল ব্যাংকার তিনি দীর্ঘ দিন ১৪ বছর ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মরত ছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ইউনিয়ন ব্যাংকেও যোগদান করে সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। স্বামীর সাথে বিবাহিত জীবনের মধ্যেই তিনি তাঁর ধর্মান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। তবে, এই সিদ্ধান্ত তাঁকে এবং তাঁর কন্যাকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে অপমান, লাঞ্ছনা এবং হুমকির মুখে ফেলে দেয়। প্রতিবেশী থেকে শুরু করে অফিসের সহকর্মী, মেয়ের স্কুলের ক্লাসমেট, এমনকি আত্মীয়-স্বজনও এই পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে পারেনি। সমাজের একটি বড় অংশ তাদেরকে একঘরে করে তুলেছে। তাদের বিরুদ্ধে সমাজের অভিযোগ শুধু ধর্ম পরিবর্তনের কারণে নয়, বরং ধর্মান্তরের কারণে তাদের জীবনধারায় যে পরিবর্তন এসেছে, তা মেনে নিতে পারেনি অনেকেই। মেয়ে স্কুলে লাঞ্ছনার শিকার, আর তাকে অফিসের সহকর্মীদের কাছ থেকে শুনতে হচ্ছে নানা ধরনের কটূক্তি। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে কাউসার এবং তাঁর কন্যা শুধুমাত্র মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন না, তাঁর গৃহে স্বামীর কাছ থেকেও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের উপর প্রহারের ঘটনা নিয়মিত ঘটেছে, যা তাঁদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে কাউসার জাহান বলেন, “আমি আমার বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই ধর্মান্তরিত হয়েছি। কিন্তু আমার এই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের জন্য আমার জীবনটা এতটা কঠিন হয়ে যাবে, তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আমার মেয়ে এবং আমি দুজনেই সমাজ এবং পরিবারের কাছ থেকে যে হারে নিপীড়নের শিকার হয়েছি এবং হচ্ছি, তাতে আমাদের জীবনে শান্তি যেন হারিয়ে গেছে” আমাদের জীবন এখন হুমকির মুখে। ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা হলেও, সমাজে ধর্মান্তরিত মানুষদের প্রতি এমন আচরণ ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কাউসারের মতো মানুষদের সমাজের প্রতিটি স্তরে সমান অধিকার ও সম্মান পাওয়া অধিকার আছে ,কিন্তু বাস্তবতা যেন ঠিক তার উল্টো।
এমন অবস্থায় ধর্মান্তরিত কাউসার এবং তাঁর কন্যার জীবনের ওপর চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে সমাজের সচেতন অংশ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সমাজে এমন কুসংস্কার এবং অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি।