কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। সোমবার (২১ অক্টোবর) ভোরে উখিয়া ১৭ নম্বর ক্যাম্পে এই ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ক্যাম্প-১৭ এক্স ব্লকের বাসিন্দা আহাম্মদ হোসেন (৬৫), তার ছেলে সৈয়দুল আমিন (২৮) ও মেয়ে আসমা বেগম (১৫)। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আরিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ভোররাতে ঘরে ডুকে একই পরিবারের তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে কী কারণে হত্যা করা হয়েছে সেটি এখনো জানা যায়নি। এই মুহূর্তে ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ভোর সাড়ে ১৫-২০ জনের একটি দুর্বৃত্ত দল আহাম্মদ হোসেন ও তার পরিবারের ওপর গুলি ছোড়ে। এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন। আহত অবস্থায় আসমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হলে তারও মৃত্যু হয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি ইকবাল বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে নিহত সৈয়দুল আমিন মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে প্রতিপক্ষের অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ তদন্তের পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে।
পুলিশ ও রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের ২১ অক্টোবর পর্যন্ত সাড়ে নয় মাসে আশ্রয়শিবিরগুলোতে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৭৪ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন। এসব সংঘর্ষের মধ্যে আরসা ও আরএসও এবং ক্যাম্পে সক্রিয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে ঘটেছে।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। এর মধ্যে আট লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে বাস্তুচ্যুত হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে আশ্রয় নেওয়া। এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা বলছেন, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে সক্রিয় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা ও আরএসওর মধ্যে ক্যাম্পের আধিপত্য বিস্তার, মতাদর্শগত বিরোধ, মাদক পাচার ও চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ক্যাম্পে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।