সিনিয়র রিপোর্টার
ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান, বগুড়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরী ও সাবেক কর কমিশনার রঞ্জিত কুমার তালুকদারসহ আট ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার দুদকের পৃথক চারটি আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন।
দুদকের উপ-পরিচালক সিরাজুল হক এক আবেদনে ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান, তার স্ত্রী শামিমা হাবিব এবং দুই সন্তান আবুল হাসান তানিম ও সনিয়া হাসান তন্নির বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন।
আবেদন বলা হয়, হাবিব হাসানের বিরুদ্ধে ভূমি দস্যুতা, পরিবহন চাঁদাবাজি, পদ বাণিজ্য, অনুদানের নামে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এসব অর্থ পাচার করে ছেলের নামে কানাডায় বাড়ি কেনার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। অভিযোগ অনুসন্ধানে মামলা রুজু হতে পারে। অনুসন্ধানের বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বার্থে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তারা বিদেশে পলায়ন করতে পারেন বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমন রহিতকরণ প্রয়োজন। শুনানি শেষে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন আদালত।
অপর আবেদনে দুদকের উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান উল্লেখ করেন, বগুড়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান। দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এ বিষয়ে শুনানি করেন।
ওই আবেদনে বলা হয়, নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নিজের পদের অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ আছে।দেশের বর্তমান বাস্তবতায় মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার দেশত্যাগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক।
সাবেক কর কমিশনার রঞ্জিত কুমার তালুকদার ও তার স্ত্রী ঝুমুর মজুমদারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম।
আবেদনে বলা হয়, রঞ্জিত কুমারের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের অর্থ নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তার অবৈধ আয়ে নিজ এলাকায় কৃষি জমি, ফ্ল্যাট, প্লট ক্রয় কিনেছেন। তার স্ত্রী ঝুমুর মজুমদারের নামে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার ২২টি এফডিআর রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার টাকা আছে।
গোপন অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতেও তার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। রঞ্জিত কুমার তালুকদার এবং তার স্ত্রী কুমুর মজুমদার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে/ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। শুনানি শেষে বিচারক তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন।
এদিকে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করে দুদকের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান। দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এ বিষয়ে শুনানি করেন। সাবেক কর কমিশনার রঞ্জিত কুমার তালুকদার ও তার স্ত্রী ঝুমুর মজুমদারের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন একই আদালত।
আবেদনে বলা হয়, মোকাম্মেল তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে এস আলম গ্রুপের পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে বেআইনিভাবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। তিনি পদের অপব্যবহার করে ও রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে তথ্য মিলেছে। তিনি দেশ ত্যাগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বিদেশ গমন রহিত করা আবশ্যক।