ঢাকা , বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেন্টমার্টিনে যেতে লাগছে এনআইডি ও অনুমতি

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৪:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪
  • 4

কক্সবাজার প্রতিনিধি 

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আনুষ্ঠানিক কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও দ্বীপের বাসিন্দা ছাড়া সেখানে কেউ বেড়াতে যেতে পারছেন না। নভেম্বর মাসে পর্যটকরা যেতে পারবেন, তবে থাকতে পারবেন না এমন ঘোষণা থাকলেও দ্বীপ ভ্রমণের সব ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।

দ্বীপটির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাদের আত্মীয় স্বজনরাও বেড়াতে আসতে পারছেন না। অন্যদিকে সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে বাধা থাকার কথা নয়।

এদিকে যাতায়াতের জন্য এখনো সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী একটিও জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। স্পিডবোট চলাচলও বন্ধ। গত বছর জানুয়ারিতে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে বন্ধ হয় টেকনাফ রুট। পরে ইনানী সৈকতের নৌ-জেটি ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে আসা-যাওয়া করতো পর্যটকরা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে ইনানী জেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে জাহাজ চলাচলের সুযোগ নেই।

এদিকে যাত্রীবাহী ট্রলার বা সার্ভিস বোট চলাচল করলেও ভ্রমণ করতে লিখিত অনুমতি লাগছে। সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ছাড়া কাউকে ভ্রমণ করতে দেওয়া হচ্ছে না। দ্বীপের অধিবাসী কিনা নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ট্রলারের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। দফায় দফায় কোস্টগার্ড যাত্রীদের এনআইডি যাচাই করছে।

সেন্টমার্টিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজশাহী থেকে বেড়াতে এসেছিল আয়েশা সিদ্দিকার পরিবার। কিন্তু হলো না ভ্রমণ বন্ধ থাকায়। তিনি বলেন, খুবই আপসেট। অনেকেই আমাদের মতো আশা নিয়ে আছেন। আমরা চাই এই বন্ধটি তাড়াতাড়ি খুলে দিক। যাতে তারা আমাদের মতো আপসেট না হয়। 

স্থানীয় বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম বলেন, সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন দেশ, আমি যদি এখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে পারলে, আমার সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের অংশ হয়ে স্বাধীনভাবে আমার বাংলাদেশের লোকজন আসতে পারবে না কেন?

সি ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার থেকে জাহাজ দিনে গিয়ে ফেরা সম্ভব নয়। তাই নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে পর্যটন জাহাজ যাতায়াত শুরু করতে পারবে কিনা সেটি অনিশ্চিত।

তিনি আরো বলেন, আমরা হতাশার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি। সরকারের নভেম্বর মাসে পর্যটন চালু আছে ঘোষণা, বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। টেকনাফ থেকে জাহাজ দিনে গিয়ে দিনে আসা সম্ভব ছিল। কক্সবাজার থেকে কোনোভাবেই দিনে গিয়ে দিনে আসা সম্ভব না। ইনানী থেকে চার ঘণ্টায় সেন্টমার্টিন যাওয়া সম্ভব। তবে ক্ষতিগ্রস্ত জেটি ২২ নভেম্বর নাগাদ সংস্কার হওয়ার কথা আছে, সেটি ঠিক হবে কিনা বলা যাচ্ছে না।

রিসোর্টের ব্যবসায়ী মো. জসিম বলেন, সেন্টমার্টিনে দ্বীপের ১০ হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা এবং পরিবেশ দুটোই সমান গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ দুই মাস পর্যটন দিয়ে আমাদের ১২ মাস চালানো সম্ভব না। পর্যটক যদি না আসে আমিতো উপোস থাকতে পারবো না। মানে এমন একটা পর্যায় চলে যাচ্ছে যে আমাদের এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া লাগবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী বলেন, পর্যটন পারপাসে এখন অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এখন এনজিও কর্মী, গবেষণার কাজে কিংবা সংবাদ সংগ্রহের মতো জরুরি প্রয়োজনে যারা যায়, তাদেরকেই কেবল অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

সেন্টমার্টিনে কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার এস এম রাশাদ হায়দার বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ভ্রমণ করতে কেউ সেন্টমার্টিন যেন না আসতে পারে সেজন্য তারা মনিটরিং করছেন। কেউ যদি সেন্টমার্টিন দ্বীপে চলে আসে তাকে ফেরত পাঠানো হবে।

তিনি আরো বলেন, সমন্বয় সাধন করেই যাওয়া-আসা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এখানে যাদের অনুমতি আছে, তাদের আসতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু ভ্রমণটি যেহেতু এখনো নিষিদ্ধ, ভ্রমণ শুরু হলে আসা যাবে।

এ বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, একচল্লিশ ভাগ প্রবাল ক্ষয় হয়ে গেছে, এটি হচ্ছে জাতীয় পরিসংখ্যান। আন্তর্জাতিক সকল গ্রহণযোগ্য জার্নালে বলা হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে ২০৪৫ সালের মধ্যে সকল কোরাল ক্ষয় হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি ডুবে যাবে। তখন পর্যটন থাকবে কোথায়?

তিনি আরো বলেন, সেন্টমার্টিন বাঁচাবো, একই সঙ্গে পর্যটনও বাঁচাতে হবে। পর্যটন আমরা কিন্তু নিষেধ করিনি।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে এ সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে : মির্জা ফখরুল

সেন্টমার্টিনে যেতে লাগছে এনআইডি ও অনুমতি

আপডেট সময় ০৪:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার প্রতিনিধি 

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আনুষ্ঠানিক কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও দ্বীপের বাসিন্দা ছাড়া সেখানে কেউ বেড়াতে যেতে পারছেন না। নভেম্বর মাসে পর্যটকরা যেতে পারবেন, তবে থাকতে পারবেন না এমন ঘোষণা থাকলেও দ্বীপ ভ্রমণের সব ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।

দ্বীপটির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাদের আত্মীয় স্বজনরাও বেড়াতে আসতে পারছেন না। অন্যদিকে সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে বাধা থাকার কথা নয়।

এদিকে যাতায়াতের জন্য এখনো সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী একটিও জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। স্পিডবোট চলাচলও বন্ধ। গত বছর জানুয়ারিতে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে বন্ধ হয় টেকনাফ রুট। পরে ইনানী সৈকতের নৌ-জেটি ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে আসা-যাওয়া করতো পর্যটকরা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে ইনানী জেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে জাহাজ চলাচলের সুযোগ নেই।

এদিকে যাত্রীবাহী ট্রলার বা সার্ভিস বোট চলাচল করলেও ভ্রমণ করতে লিখিত অনুমতি লাগছে। সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ছাড়া কাউকে ভ্রমণ করতে দেওয়া হচ্ছে না। দ্বীপের অধিবাসী কিনা নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে ট্রলারের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। দফায় দফায় কোস্টগার্ড যাত্রীদের এনআইডি যাচাই করছে।

সেন্টমার্টিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজশাহী থেকে বেড়াতে এসেছিল আয়েশা সিদ্দিকার পরিবার। কিন্তু হলো না ভ্রমণ বন্ধ থাকায়। তিনি বলেন, খুবই আপসেট। অনেকেই আমাদের মতো আশা নিয়ে আছেন। আমরা চাই এই বন্ধটি তাড়াতাড়ি খুলে দিক। যাতে তারা আমাদের মতো আপসেট না হয়। 

স্থানীয় বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম বলেন, সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন দেশ, আমি যদি এখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে পারলে, আমার সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের অংশ হয়ে স্বাধীনভাবে আমার বাংলাদেশের লোকজন আসতে পারবে না কেন?

সি ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার থেকে জাহাজ দিনে গিয়ে ফেরা সম্ভব নয়। তাই নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে পর্যটন জাহাজ যাতায়াত শুরু করতে পারবে কিনা সেটি অনিশ্চিত।

তিনি আরো বলেন, আমরা হতাশার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি। সরকারের নভেম্বর মাসে পর্যটন চালু আছে ঘোষণা, বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। টেকনাফ থেকে জাহাজ দিনে গিয়ে দিনে আসা সম্ভব ছিল। কক্সবাজার থেকে কোনোভাবেই দিনে গিয়ে দিনে আসা সম্ভব না। ইনানী থেকে চার ঘণ্টায় সেন্টমার্টিন যাওয়া সম্ভব। তবে ক্ষতিগ্রস্ত জেটি ২২ নভেম্বর নাগাদ সংস্কার হওয়ার কথা আছে, সেটি ঠিক হবে কিনা বলা যাচ্ছে না।

রিসোর্টের ব্যবসায়ী মো. জসিম বলেন, সেন্টমার্টিনে দ্বীপের ১০ হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা এবং পরিবেশ দুটোই সমান গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ দুই মাস পর্যটন দিয়ে আমাদের ১২ মাস চালানো সম্ভব না। পর্যটক যদি না আসে আমিতো উপোস থাকতে পারবো না। মানে এমন একটা পর্যায় চলে যাচ্ছে যে আমাদের এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া লাগবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী বলেন, পর্যটন পারপাসে এখন অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এখন এনজিও কর্মী, গবেষণার কাজে কিংবা সংবাদ সংগ্রহের মতো জরুরি প্রয়োজনে যারা যায়, তাদেরকেই কেবল অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

সেন্টমার্টিনে কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার এস এম রাশাদ হায়দার বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ভ্রমণ করতে কেউ সেন্টমার্টিন যেন না আসতে পারে সেজন্য তারা মনিটরিং করছেন। কেউ যদি সেন্টমার্টিন দ্বীপে চলে আসে তাকে ফেরত পাঠানো হবে।

তিনি আরো বলেন, সমন্বয় সাধন করেই যাওয়া-আসা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এখানে যাদের অনুমতি আছে, তাদের আসতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু ভ্রমণটি যেহেতু এখনো নিষিদ্ধ, ভ্রমণ শুরু হলে আসা যাবে।

এ বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, একচল্লিশ ভাগ প্রবাল ক্ষয় হয়ে গেছে, এটি হচ্ছে জাতীয় পরিসংখ্যান। আন্তর্জাতিক সকল গ্রহণযোগ্য জার্নালে বলা হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে ২০৪৫ সালের মধ্যে সকল কোরাল ক্ষয় হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি ডুবে যাবে। তখন পর্যটন থাকবে কোথায়?

তিনি আরো বলেন, সেন্টমার্টিন বাঁচাবো, একই সঙ্গে পর্যটনও বাঁচাতে হবে। পর্যটন আমরা কিন্তু নিষেধ করিনি।