ঢাকা , সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্দোলনে ‘নিহত’ ব্যক্তি থানায় হাজির

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৪:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪
  • 26

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি 

স্বামী আলামিন গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ‘নিহত’ হয়েছেন বলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগের ১৩০ নেতাকর্মীর নামে মামলা  করেন স্ত্রী কুলসুম বেগম। এদিকে মামলার কয়েকদিন পর ‘নিহত’ আলামিন সোমবার (১১ নভেম্বর) সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় গিয়ে হাজির হন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে আশুলিয়া থানা পুলিশ তাকে সেখান থেকে নিয়ে আসে। এ ছাড়া বুধবার (১৩ নভেম্বর) আলামিনকে আদালতে উঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ।

ওই নারী ২৪ অক্টোবর ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করার আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে সেটি ৮ নভেম্বর আশুলিয়া থানায় এজাহারভুক্ত হলে তদন্তে নামে পুলিশ।

মামলা সূত্র জানায়, মানিকগঞ্জের ঘিওর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালেকের মেয়ে কুলসুম। তার স্বামী আলামিন রংপুর এলাকার সুমন মিয়ার ছেলে। কাজের সুবাদে সিলেটে থাকেন তিনি।

গত ৫ আগস্ট আন্দোলনে বাইপাইল এলাকায় নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। পরে নরসিংহপুর এলাকার নারী ও শিশু হাসপাতালে মরদেহ গোসল করানোর পর স্থানীয় একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এদিকে কুলসুম বেগম সেই ভিডিওফুটেজ দেখে তাকে নিজের স্বামী বলে শনাক্ত করে এ ঘটনায় আদালতে মামলার আবেদন করেন। পরে গত ৮ নভেম্বর মামলাটি আশুলিয়া থানায় এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলায় বাদি তার নিজ এলাকা মানিকগঞ্জের আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করেছেন।

আলামিন জানান, ছাত্র আন্দোলনের সময় তার স্ত্রী সিলেটে তার সঙ্গেই থাকতেন। পরে পারিবারিক ঝামেলা হওয়ার কারণে তিনি বাপের বাড়ি চলে যান। তিনি বলেন, আমি আন্দোলনেই অংশগ্রহণ করিনি, মারা গেলাম কীভাবে? তিনি জানান, দুই দিন আগে জানতে পারেন তাকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে তিনি সোমবার রাতে তার কর্মস্থলের পাশে সিলেটের থানায় গিয়ে বিষয়টি জানান।

দক্ষিণ সুরমা থানায় ধারণ করা এক ভিডিওতে আলামিনকে বলতে শুনা যায়, ‘ভাই, আমি মরি নাই, কেউ যদি আমার অজান্তে কাগজে-কলমে মাইরা ফালায়, তাহলে আমার কী বা করার আছে? আমারে যে মরা দেখাইয়া মামলা করছে আমার বৌ, তা আমি জানতাম না। যখন শুনলাম, তখন ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি। নিজের স্ত্রী যদি স্বামীকে মৃত বানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে, তাহলে সেই স্বামী সবচেয়ে দুর্ভাগা।’

তাদের এক কন্যা সন্তান থাকার তথ্য তুলে ধরে আলামিন বলেন, কয়েক মাস ধরে পারিবারিক কলহ বেড়ে যাওয়ায় সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। দেশে গণ্ডগোলের পুরোটা সময় আমি ও আমার স্ত্রী মৌলভীবাজারের জুড়িতে অবস্থান করেছি। সেসময় আশুলিয়ায় একবারের জন্যও যাইনি। অথচ আমাকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলা করেছে আমার স্ত্রী। এ মামলার বাদির ছবি দেখে আলামিন নিশ্চিত হয়েছেন, ছবির মানুষটি তার স্ত্রী।

আলামিনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ভাই বেঁচে আছে। সে তিন দিন আগে আমাকে বলেছে, মামলার বিষয়টি। আলামিন থানায়ও গিয়েছিল, কিন্তু থানা থেকে সমাধানের কোনো পথ দেখাতে পারেনি। তাই ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে।

ছেলেকে মৃত দেখিয়ে মামলার ঘটনায় হতবাক আলামিনের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, এমনটি হওয়ায় আমাদের পুরো পরিবার আতঙ্কিত। ছেলের বৌ কুলসুম কেন এমনটি করেছে তা মাথায়ও আসছে না। বিষয়টি নিয়ে কুলসুমও কোনো কথা বলছে না।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর বলেন, আলামিনকে সিলেটের সুরমা থানা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। বুধবার তাকে আদালতে নেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলার বাদিকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। 

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন বলেন, জীবিত থাকার বিষয়ে আলামিন থানায় বসে ভিডিওতে সবকিছু বলেছেন। হত্যা মামলাটি আশুলিয়া থানার তদন্তাধীন হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাকিব মঙ্গলবার এসে তাকে নিয়ে গেছেন।

ওসি বলেন, আলামিনের পরিবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর এলাকায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন। কাজের সূত্রে থাকতেন মৌলভীবাজারের জুড়িতে। 

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

দুদেশের জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক চায় দিল্লি : ভারতের পররাষ্ট্র সচিব

আন্দোলনে ‘নিহত’ ব্যক্তি থানায় হাজির

আপডেট সময় ০৪:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি 

স্বামী আলামিন গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ‘নিহত’ হয়েছেন বলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগের ১৩০ নেতাকর্মীর নামে মামলা  করেন স্ত্রী কুলসুম বেগম। এদিকে মামলার কয়েকদিন পর ‘নিহত’ আলামিন সোমবার (১১ নভেম্বর) সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় গিয়ে হাজির হন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে আশুলিয়া থানা পুলিশ তাকে সেখান থেকে নিয়ে আসে। এ ছাড়া বুধবার (১৩ নভেম্বর) আলামিনকে আদালতে উঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ।

ওই নারী ২৪ অক্টোবর ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করার আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে সেটি ৮ নভেম্বর আশুলিয়া থানায় এজাহারভুক্ত হলে তদন্তে নামে পুলিশ।

মামলা সূত্র জানায়, মানিকগঞ্জের ঘিওর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালেকের মেয়ে কুলসুম। তার স্বামী আলামিন রংপুর এলাকার সুমন মিয়ার ছেলে। কাজের সুবাদে সিলেটে থাকেন তিনি।

গত ৫ আগস্ট আন্দোলনে বাইপাইল এলাকায় নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। পরে নরসিংহপুর এলাকার নারী ও শিশু হাসপাতালে মরদেহ গোসল করানোর পর স্থানীয় একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এদিকে কুলসুম বেগম সেই ভিডিওফুটেজ দেখে তাকে নিজের স্বামী বলে শনাক্ত করে এ ঘটনায় আদালতে মামলার আবেদন করেন। পরে গত ৮ নভেম্বর মামলাটি আশুলিয়া থানায় এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলায় বাদি তার নিজ এলাকা মানিকগঞ্জের আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করেছেন।

আলামিন জানান, ছাত্র আন্দোলনের সময় তার স্ত্রী সিলেটে তার সঙ্গেই থাকতেন। পরে পারিবারিক ঝামেলা হওয়ার কারণে তিনি বাপের বাড়ি চলে যান। তিনি বলেন, আমি আন্দোলনেই অংশগ্রহণ করিনি, মারা গেলাম কীভাবে? তিনি জানান, দুই দিন আগে জানতে পারেন তাকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে তিনি সোমবার রাতে তার কর্মস্থলের পাশে সিলেটের থানায় গিয়ে বিষয়টি জানান।

দক্ষিণ সুরমা থানায় ধারণ করা এক ভিডিওতে আলামিনকে বলতে শুনা যায়, ‘ভাই, আমি মরি নাই, কেউ যদি আমার অজান্তে কাগজে-কলমে মাইরা ফালায়, তাহলে আমার কী বা করার আছে? আমারে যে মরা দেখাইয়া মামলা করছে আমার বৌ, তা আমি জানতাম না। যখন শুনলাম, তখন ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি। নিজের স্ত্রী যদি স্বামীকে মৃত বানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে, তাহলে সেই স্বামী সবচেয়ে দুর্ভাগা।’

তাদের এক কন্যা সন্তান থাকার তথ্য তুলে ধরে আলামিন বলেন, কয়েক মাস ধরে পারিবারিক কলহ বেড়ে যাওয়ায় সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। দেশে গণ্ডগোলের পুরোটা সময় আমি ও আমার স্ত্রী মৌলভীবাজারের জুড়িতে অবস্থান করেছি। সেসময় আশুলিয়ায় একবারের জন্যও যাইনি। অথচ আমাকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলা করেছে আমার স্ত্রী। এ মামলার বাদির ছবি দেখে আলামিন নিশ্চিত হয়েছেন, ছবির মানুষটি তার স্ত্রী।

আলামিনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ভাই বেঁচে আছে। সে তিন দিন আগে আমাকে বলেছে, মামলার বিষয়টি। আলামিন থানায়ও গিয়েছিল, কিন্তু থানা থেকে সমাধানের কোনো পথ দেখাতে পারেনি। তাই ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে।

ছেলেকে মৃত দেখিয়ে মামলার ঘটনায় হতবাক আলামিনের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, এমনটি হওয়ায় আমাদের পুরো পরিবার আতঙ্কিত। ছেলের বৌ কুলসুম কেন এমনটি করেছে তা মাথায়ও আসছে না। বিষয়টি নিয়ে কুলসুমও কোনো কথা বলছে না।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর বলেন, আলামিনকে সিলেটের সুরমা থানা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। বুধবার তাকে আদালতে নেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলার বাদিকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। 

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন বলেন, জীবিত থাকার বিষয়ে আলামিন থানায় বসে ভিডিওতে সবকিছু বলেছেন। হত্যা মামলাটি আশুলিয়া থানার তদন্তাধীন হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাকিব মঙ্গলবার এসে তাকে নিয়ে গেছেন।

ওসি বলেন, আলামিনের পরিবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর এলাকায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন। কাজের সূত্রে থাকতেন মৌলভীবাজারের জুড়িতে।