ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋণের প্রলোভনে ঢাকায় জড়ো হচ্ছিলেন অনেক জেলার মানুষ

সিনিয়র রিপোর্টার

 ‘বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে জনপ্রতি এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে, এজন্য শাহবাগে বিশাল সমাবেশে জড়ো হতে হবে।’ এমন কথা বলে রাজধানীর শাহবাগে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশের চেষ্টা করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অভিযোগ উঠেছে অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে।

রবিবার (২৪ নভেম্বর) রাত থেকে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’র ব্যানারে বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস, ট্রাক, পিকআপে করে মানুষ জড়ো হতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি এবং শাহবাগ এলাকায়। তবে পুলিশ এবং শিক্ষার্থীরা তাদের ফেরত পাঠিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, একটি চক্র কৌশলে রাতের আঁধারে ঢাকার শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা দখলের পাঁয়তারা করেছিল। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা ছিল তাদের।

২৫ নভেম্বর ‘রাজধানীর শাহবাগে মহাসবেশ’ লেখা ব্যানারও দেখা গেছে জড়ো হওয়া লোকজনের গাড়িতে।

আ.ব.ম. মোস্তফা আমীন নামে এক ব্যক্তির নামে লিফলেট পাওয়া গেছে তাদের কাছে। যেখানে মোস্তফা আমীনকে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি লিফলেটে সমাবেশের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৮ আগস্ট, স্থান-শাহবাগ মোড়।

তবে আরেকটি লিফলেটে ২৫ নভেম্বর সকাল ১০টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা বলা হয়েছে। ওই লিফলেটের শিরোনাম ‘লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধার করবো, বিনা সুদে পুঁজি নেবো’। 

তবে গ্রামের সাধারণ মানুষকে টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জড়ো করা হচ্ছে জানতে পেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়ো হওয়া মানুষ এবং তাদের যানবাহনগুলো ফেরত পাঠান।

প্রলোভন দেখানো বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ভুয়া গণঅভ্যুত্থান ও প্রতিবিপ্লবের ডাক দেওয়া চক্রের হোতাদের খুঁজে বের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জানা যায়, অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের সংগঠনটি সারাদেশের খেটে খাওয়া গরিব মানুষগুলোকে টার্গেট করে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত এনে সেগুলো বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। এর বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ জনপ্রতি এক হাজার করে টাকাও হাতিয়ে নেয় তারা।

বাসে করে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ লোকজনেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছেন। তাদের বেশিরভাগই জানেন না এখানে কী হবে। শুধু জানেন শাহবাগে আসলে লোন পাওয়া যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজুল হক বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা আর পুলিশ প্রশাসন কী করে? আমরা শুনেছি, ঢাকা শহরে রাত থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৮০০ বাস প্রবেশ করেছে। শাহবাগে আন্দোলন করার জন্য বাস ভর্তি লোক নিয়ে আসা হচ্ছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসি থেকেই প্রায় শতাধিক গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছি।

রাত ৩টার দিকে গাড়ি ফেরানো অবস্থায় পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে জানান, অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের সংগঠনটি আমাদের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ করার জন্য অনুমতিও চেয়েছিল। আমরা তাদের অতীত ঘেঁটে দেখলাম অতীতেও তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এরা এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ লোকদের থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গাইবান্ধা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশ থেকে তারা লোকজন নিয়ে এসেছে।

তিনি বলেন, আমরা রাত ১২টার পর থেকেই বাসের মানুষগুলো প্রতারণার শিকার হয়েছে এটি বুঝিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছি। কিন্তু একের পর এক বাস আসছেই। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকও করা হয়েছে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা

ঋণের প্রলোভনে ঢাকায় জড়ো হচ্ছিলেন অনেক জেলার মানুষ

আপডেট সময় এক ঘন্টা আগে

সিনিয়র রিপোর্টার

 ‘বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে জনপ্রতি এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে, এজন্য শাহবাগে বিশাল সমাবেশে জড়ো হতে হবে।’ এমন কথা বলে রাজধানীর শাহবাগে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশের চেষ্টা করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অভিযোগ উঠেছে অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে।

রবিবার (২৪ নভেম্বর) রাত থেকে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’র ব্যানারে বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস, ট্রাক, পিকআপে করে মানুষ জড়ো হতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি এবং শাহবাগ এলাকায়। তবে পুলিশ এবং শিক্ষার্থীরা তাদের ফেরত পাঠিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, একটি চক্র কৌশলে রাতের আঁধারে ঢাকার শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা দখলের পাঁয়তারা করেছিল। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা ছিল তাদের।

২৫ নভেম্বর ‘রাজধানীর শাহবাগে মহাসবেশ’ লেখা ব্যানারও দেখা গেছে জড়ো হওয়া লোকজনের গাড়িতে।

আ.ব.ম. মোস্তফা আমীন নামে এক ব্যক্তির নামে লিফলেট পাওয়া গেছে তাদের কাছে। যেখানে মোস্তফা আমীনকে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি লিফলেটে সমাবেশের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৮ আগস্ট, স্থান-শাহবাগ মোড়।

তবে আরেকটি লিফলেটে ২৫ নভেম্বর সকাল ১০টায় শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথা বলা হয়েছে। ওই লিফলেটের শিরোনাম ‘লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধার করবো, বিনা সুদে পুঁজি নেবো’। 

তবে গ্রামের সাধারণ মানুষকে টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জড়ো করা হচ্ছে জানতে পেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়ো হওয়া মানুষ এবং তাদের যানবাহনগুলো ফেরত পাঠান।

প্রলোভন দেখানো বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ভুয়া গণঅভ্যুত্থান ও প্রতিবিপ্লবের ডাক দেওয়া চক্রের হোতাদের খুঁজে বের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জানা যায়, অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের সংগঠনটি সারাদেশের খেটে খাওয়া গরিব মানুষগুলোকে টার্গেট করে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত এনে সেগুলো বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। এর বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ জনপ্রতি এক হাজার করে টাকাও হাতিয়ে নেয় তারা।

বাসে করে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ লোকজনেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছেন। তাদের বেশিরভাগই জানেন না এখানে কী হবে। শুধু জানেন শাহবাগে আসলে লোন পাওয়া যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজুল হক বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা আর পুলিশ প্রশাসন কী করে? আমরা শুনেছি, ঢাকা শহরে রাত থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৮০০ বাস প্রবেশ করেছে। শাহবাগে আন্দোলন করার জন্য বাস ভর্তি লোক নিয়ে আসা হচ্ছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসি থেকেই প্রায় শতাধিক গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছি।

রাত ৩টার দিকে গাড়ি ফেরানো অবস্থায় পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে জানান, অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের সংগঠনটি আমাদের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ করার জন্য অনুমতিও চেয়েছিল। আমরা তাদের অতীত ঘেঁটে দেখলাম অতীতেও তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এরা এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ লোকদের থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গাইবান্ধা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ সারাদেশ থেকে তারা লোকজন নিয়ে এসেছে।

তিনি বলেন, আমরা রাত ১২টার পর থেকেই বাসের মানুষগুলো প্রতারণার শিকার হয়েছে এটি বুঝিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছি। কিন্তু একের পর এক বাস আসছেই। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকও করা হয়েছে।