সিনিয়র রিপোর্টার
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত ও সমালেচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান বিদেশ যাওয়ার জন্য হাইকোর্টে রিট করেছেন।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিটটি করেন তার আইনজীবী।
এর আগে, গত (২১ অক্টোবর) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত শুনানি শেষে; মতিউর রহমান তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশ গমনে আবারো নিষেধাজ্ঞা দেন।
ওইদিন দুদক উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেন ফের তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কামিজ ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণবের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের জন্য ছয় সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমন রহিত করার জন্য পুনরায় আদেশ দেওয়া আবশ্যক।
গত (১৮ আগস্ট) কমিশনের পূর্বানুমোদনক্রমে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এরপর (৩১ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ছাগলকাণ্ডে বিতর্কিত এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে অবসরে পাঠানো হয়।
মতিউর ও তার পরিবারের সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। দুদকের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত তাদের প্রায় সাড়ে তিন হাজার শতাংশ জমি, বহুতল ভবন, ছয়টি ফ্ল্যাট, ১১৬টি ব্যাংক হিসাব এবং ২৩টি বিও হিসাব ক্রোক হয়েছে। তাদের আরো সম্পদের খোঁজ চলছে।
এর আগে, মতিউর রহমানকে প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত (৩০ জুন) মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ক্রয় করা কোনো জমি আছে কি না, সেটি জানতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি দেয় দুদক।
জানা যায়, মতিউরের বিরুদ্ধে এর আগে চারবার দুর্নীতির অভিযোগ পায় দুদক। কিন্তু প্রতিবারই নানা কৌশলে প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগ মুছে ক্লিন শিট পেয়েছিলেন তিনি। মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম দুদকে অভিযোগ আসে ২০০৪ সালে। সে সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের। অভিযোগ আছে, হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা টাকা প্রবাসী কোনো এক আত্মীয়ের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে তা রেমিট্যান্স বাবদ দেখিয়েছিলেন ট্যাক্স ফাইলে।
২০০৮ সালে আবারো দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে তার বিরুদ্ধে। এবার অভিযোগ, বিলাসবহুল পণ্যের শুল্ক মাফ করে দেওয়ার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের। কিন্তু তদন্ত শুরু হতে না হতেই প্রভাবশালীদের চাপে তা চাপা পড়ে যায়, ক্লিন শিট পান মতিউর। এরপর ২০১৩ ও ২০২১ সালে আরো দুবার দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল অবৈধ সম্পদ ও সম্পত্তির। কিন্তু কৌশলী মতিউর অবৈধ সম্পদকে পারিবারিক ব্যবসা ও ঋণ দেখিয়ে প্রস্তুত করেন ট্যাক্স ফাইল। ফলে আবারো ক্লিন শিট পান তিনি।
তবে পঞ্চমবারের মতো তদন্তে নেমে দুদক আগের চারবারের প্রতিটি বিষয়ে পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছে। একইসঙ্গে যে বা যাদের মাধ্যমে বারবার দায়মুক্তি পেয়েছেন মতিউর, তা-ও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানায় দুদক।
ঈদুল আজহার আগে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর প্রেক্ষিতেই এনবিআরের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।