ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুদকের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল, দুই দশকেও স্বাধীন সত্ত্বা রূপ পরিগ্রহ করতে পারেনি সংস্থাটি

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৫:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 10

সোহেলী চৌধুরী

আগামীকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ বিলুপ্ত করে দুদক আইন ২০০৪ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা হয় স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে সংস্থাটিকে। কমিশন গঠনের পর দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি দুই দশক পূর্ণ করল। এই দুই দশকে গত হয়েছে ৫টি কমিশন।

তিন সদস্য বিশিষ্ট স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। সেই সময়ে চার বছর মেয়াদি কমিশনের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করার আগেই বিদায় নিতে হয় তাকে। অপর দুই কমিশনার হলেন- প্রফেসর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞা এবং মো. মনিরউদ্দীন আহমদ।

চারটি কমিশনে যথাক্রেম- লে. জে. (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত সচিব গোলাম রহমান, মো. বদিউজ্জামান এবং অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন মো. বদিউজ্জামান কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছে ৬ষ্ঠ কমিশন। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান। বিলুপ্ত ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ ছিলো প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীন একটি সংস্থা। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার চাপে সংস্থাটিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন থেকে বের করে ‘স্বাধীন’ দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

কিন্তু প্রতিষ্ঠার দুই দশকেও সংস্থাটি স্বাধীন সত্ত্বা রূপ পরিগ্রহ করতে পারেনি। আইনত. ‘স্বাধীন’ হলেও কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে অনুসন্ধান- তদন্তসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে এখনও সরকারাশ্রয়ী। যখন যে সরকার ক্ষমতায় ছিলো, প্রতিষ্ঠানটি সেই সরকারের আজ্ঞাবহতার পরিচয় দেয়। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ফলে দুদক কখনোই ‘স্বাধীন সংস্থা’ হিসেবে পরিচালিত হতে পারেনি। 

অনুসন্ধান-তদন্তের নামে নিরীহ মানুষকে হয়রানি, দুর্নীতির রাঘব বোয়ালদের দায়মুক্তি প্রদান, দুর্নীতি দমনের পরিবর্তে কোনো কোনো কর্মকর্তা নিজেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে যাওয়া এবং ‘পিক অ্যান্ড চ্যুজ’র অভিয়োগ রয়েছে দুদকের বিরুদ্ধে । দীর্ঘ সময়ে বের হতে পারেনি আমলাতন্ত্রের গহ্বর থেকেও। এসব কারণে দুদক তার প্রতিশ্রুত দায়িত্ব পালন করছে কিনা- এ নিয়ে রয়েছে নানান বিতর্ক।

এর আগে, ‘তারুণ্যের একতায় দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর ২০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকালে কমিশনের সম্মেলনকক্ষে সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন এর সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, তারুণ্যের দায়িত্ব হলো দুর্নীতিকে চ্যালেঞ্জ করা। তারুণ্যের উদ্দীপনাকে প্রজ্বলিত করতে পারলে দুর্নীতি দমন সহজ হবে। ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন’ ২০০৪ এ দুর্নীতি দমন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ এ দু’টি কাজ যুগপৎভাবে পরিচালনার বিধান রাখা হয়েছে। কেবল আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত বা সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব নয়। দুর্নীতি দমনের পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা গেলে দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যাবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

লিগ্যাল এন্ড প্রসিকিউশনের মহাপরিচালক মীর রুহুল আমীন বলেন, কোন অভিযোগের অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে কোন নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়ে আমাদের কর্মকর্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। যা দুর্নীতি প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। 

বিদ্যমান তথ্যপ্রযুক্তির সমান্তরালে দুর্নীতি মোকাবেলায় দুদকের প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি মহাপরিচালক শিরীন পারভীন, অর্থ পাচার রোধে দুদকের করণীয় বিষয়ে মানিলন্ডারিংয়ের পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী, অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্য পরিচালনায় নিযুক্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও প্রস্তুতি বিষয়ে বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক দুদকের বিভিন্ন কার্যক্রম বিষয়ে বক্তব্য রাখেন সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঠাকুরগাঁয়ের উপপরিচালক তাহসিন মুনাবীল হক।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে তার স্থলাভিষিক্ত হন লে. জে. (অব) হাসান মশহুদ চৌধুরী। তবে সেনা সমর্থিত এই কমিশনারও চেয়ারম্যান হিসেবে পূর্ণ মেয়াদ দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তৃতীয়বারের মতো কমিশন পুনর্গঠন করা হয়।

কমিশনের তৃতীয় চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত সচিব গোলাম রহমান। তিনি প্রথম পূর্ণ মেয়াদে দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একইসঙ্গে দুদক আইনের সংশোধনী এনে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের মেয়াদকাল চার বছর থেকে পাঁচ বছরে উন্নীত করেন।  

২০১৩ সালে গোলাম রহমান অবসরে গেলে বদিউজ্জামানকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি অবসরে গেলে ২০১৬ সালে অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইকবাল মাহমুদ দুদকের পঞ্চম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান।

ইকবাল মাহমুদ ২০২১ সালে অবসরে গেলে কমিশনের ষষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহকে। তিনি ২০১৮ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান। দুদকে নিয়োগ পাওয়ার আগে ২০১৯ সাল থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত উন্নয়ন সংস্থা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সনদ United Nations Convention Against Corruption (UNCAC)-এর আলোকে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স, বাংলাদেশ এর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০২৪ উদধাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে সদয় সম্মতি জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও কমিশন প্রধান দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান।

স্বাগত বক্তব্য রাখবেন দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।সভাপতির বক্তব্য রাখবেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্বে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী-মসজিদের ইমাম একসঙ্গে পালিয়েছেন : দুদক চেয়ারম্যান

দুদকের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল, দুই দশকেও স্বাধীন সত্ত্বা রূপ পরিগ্রহ করতে পারেনি সংস্থাটি

আপডেট সময় ০৫:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

সোহেলী চৌধুরী

আগামীকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ বিলুপ্ত করে দুদক আইন ২০০৪ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা হয় স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে সংস্থাটিকে। কমিশন গঠনের পর দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি দুই দশক পূর্ণ করল। এই দুই দশকে গত হয়েছে ৫টি কমিশন।

তিন সদস্য বিশিষ্ট স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। সেই সময়ে চার বছর মেয়াদি কমিশনের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করার আগেই বিদায় নিতে হয় তাকে। অপর দুই কমিশনার হলেন- প্রফেসর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞা এবং মো. মনিরউদ্দীন আহমদ।

চারটি কমিশনে যথাক্রেম- লে. জে. (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত সচিব গোলাম রহমান, মো. বদিউজ্জামান এবং অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন মো. বদিউজ্জামান কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছে ৬ষ্ঠ কমিশন। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান। বিলুপ্ত ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’ ছিলো প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীন একটি সংস্থা। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার চাপে সংস্থাটিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন থেকে বের করে ‘স্বাধীন’ দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

কিন্তু প্রতিষ্ঠার দুই দশকেও সংস্থাটি স্বাধীন সত্ত্বা রূপ পরিগ্রহ করতে পারেনি। আইনত. ‘স্বাধীন’ হলেও কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে অনুসন্ধান- তদন্তসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে এখনও সরকারাশ্রয়ী। যখন যে সরকার ক্ষমতায় ছিলো, প্রতিষ্ঠানটি সেই সরকারের আজ্ঞাবহতার পরিচয় দেয়। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ফলে দুদক কখনোই ‘স্বাধীন সংস্থা’ হিসেবে পরিচালিত হতে পারেনি। 

অনুসন্ধান-তদন্তের নামে নিরীহ মানুষকে হয়রানি, দুর্নীতির রাঘব বোয়ালদের দায়মুক্তি প্রদান, দুর্নীতি দমনের পরিবর্তে কোনো কোনো কর্মকর্তা নিজেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে যাওয়া এবং ‘পিক অ্যান্ড চ্যুজ’র অভিয়োগ রয়েছে দুদকের বিরুদ্ধে । দীর্ঘ সময়ে বের হতে পারেনি আমলাতন্ত্রের গহ্বর থেকেও। এসব কারণে দুদক তার প্রতিশ্রুত দায়িত্ব পালন করছে কিনা- এ নিয়ে রয়েছে নানান বিতর্ক।

এর আগে, ‘তারুণ্যের একতায় দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর ২০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকালে কমিশনের সম্মেলনকক্ষে সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন এর সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, তারুণ্যের দায়িত্ব হলো দুর্নীতিকে চ্যালেঞ্জ করা। তারুণ্যের উদ্দীপনাকে প্রজ্বলিত করতে পারলে দুর্নীতি দমন সহজ হবে। ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন’ ২০০৪ এ দুর্নীতি দমন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ এ দু’টি কাজ যুগপৎভাবে পরিচালনার বিধান রাখা হয়েছে। কেবল আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত বা সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব নয়। দুর্নীতি দমনের পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা গেলে দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা যাবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

লিগ্যাল এন্ড প্রসিকিউশনের মহাপরিচালক মীর রুহুল আমীন বলেন, কোন অভিযোগের অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে কোন নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়ে আমাদের কর্মকর্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। যা দুর্নীতি প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। 

বিদ্যমান তথ্যপ্রযুক্তির সমান্তরালে দুর্নীতি মোকাবেলায় দুদকের প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও তথ্য প্রযুক্তি মহাপরিচালক শিরীন পারভীন, অর্থ পাচার রোধে দুদকের করণীয় বিষয়ে মানিলন্ডারিংয়ের পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী, অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্য পরিচালনায় নিযুক্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও প্রস্তুতি বিষয়ে বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক দুদকের বিভিন্ন কার্যক্রম বিষয়ে বক্তব্য রাখেন সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঠাকুরগাঁয়ের উপপরিচালক তাহসিন মুনাবীল হক।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে তার স্থলাভিষিক্ত হন লে. জে. (অব) হাসান মশহুদ চৌধুরী। তবে সেনা সমর্থিত এই কমিশনারও চেয়ারম্যান হিসেবে পূর্ণ মেয়াদ দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তৃতীয়বারের মতো কমিশন পুনর্গঠন করা হয়।

কমিশনের তৃতীয় চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত সচিব গোলাম রহমান। তিনি প্রথম পূর্ণ মেয়াদে দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একইসঙ্গে দুদক আইনের সংশোধনী এনে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের মেয়াদকাল চার বছর থেকে পাঁচ বছরে উন্নীত করেন।  

২০১৩ সালে গোলাম রহমান অবসরে গেলে বদিউজ্জামানকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি অবসরে গেলে ২০১৬ সালে অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইকবাল মাহমুদ দুদকের পঞ্চম চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান।

ইকবাল মাহমুদ ২০২১ সালে অবসরে গেলে কমিশনের ষষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহকে। তিনি ২০১৮ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান। দুদকে নিয়োগ পাওয়ার আগে ২০১৯ সাল থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত উন্নয়ন সংস্থা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সনদ United Nations Convention Against Corruption (UNCAC)-এর আলোকে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স, বাংলাদেশ এর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০২৪ উদধাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে সদয় সম্মতি জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও কমিশন প্রধান দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান।

স্বাগত বক্তব্য রাখবেন দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।সভাপতির বক্তব্য রাখবেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।