ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে নিহতের ঘটনায় জড়িত দুই পেশাদার ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

সিনিয়র রিপোর্টার

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপর ছিনতাইকারীদের হাতে হাফেজ কামরুল হাসান (২৩) নিহতের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দুই পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলো- শাকিল (১৬) ও আশরাফুল ইসলাম (১৭)।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ছয়টায় যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা যায়, গত (১৮ ডিসেম্বর) হাফেজ কামরুল হাসান তার বন্ধুদের সাথে সাজেক যাওয়ার জন্য রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে রওনা করেন। রাত অনুমানিক ৮টা ৪০মিনিটের দিকে সায়েদাবাদ এলাকায় নেমে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ফ্লাইওভারের ওপর সাথী আবাসিক হোটেল বরাবর পৌঁছালে কয়েকজন ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে চায়। এ সময় ভিকটিম কামরুল হাসান ছিনতাইকারীদের বাঁধা দেওয়ায় তাদের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয়।  

একপর্যায়ে ছিনতাইকারী রোহান তার হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে কামরুল হাসানের বুকে আঘাত করলে সে ফ্লাইওভারের ওপর লুটিয়ে পড়ে। পরে ছিনতাইকারীরা তার কাছে থাকা একটি মোবাইল ফোন যার আনুমানিক মূল্য ১১ হাজার টাকা ও নগদ ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় কামরুলকে  ফ্লাইওভারের ওপর পড়ে থাকতে দেখে পথচারী জনৈক রুবেল চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ধলপুরের ইসলামিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে কামরুলের বাবা দ্রুত হাসপাতালে ছুঁটে যান। পরবর্তীতে ইসলামিয়া হাসপাতাল থেকে ওইদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত (২০ ডিসেম্বর) কামরুলের বাবা মো. ইমাম হোসেন বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেন।

মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থল ও আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের সনাক্ত করা হয়। এরপর যাত্রাবাড়ী থানার একটি টিম শনিবার সকাল সাড়ে ছয়টায় যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শাকিল ও আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত শাকিল ও আশরাফুল ছিনতাই ও হত্যাকান্ডের সময় যে পোশাক, ক্যাপ এবং জুতা পরিহিত অবস্থায় ছিলো সেই পোশাক, ক্যাপ ও জুতা পরিহিত অবস্থাতেই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা মূলত মাদক সেবনের অর্থ সংগ্রহের জন্য যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারসহ আশেপাশের এলাকায় পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করতো তারা। প্রাথমিকভাবে তারা এই হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

ঘটনার দিন গ্রেপ্তারকৃত শাকিল ও আশরাফুলসহ পলাতক আপন (১৫), রোহান (১৭) ও সিফাত (১৫) ভিকটিম কামরুল হাসানের কাছ থেকে মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়ার সময় ভিকটিম বাঁধা দেয়ায় তার সাথে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রোহান চাকু দিয়ে তার বুকে আঘাত করে। এরপর ভিকটিমের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।  গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ছিনতাইকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

বিমানবন্দর থেকে সাবেক সচিব ইসমাইল হোসেন গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে নিহতের ঘটনায় জড়িত দুই পেশাদার ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

আপডেট সময় ১৫ মিনিট আগে

সিনিয়র রিপোর্টার

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপর ছিনতাইকারীদের হাতে হাফেজ কামরুল হাসান (২৩) নিহতের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দুই পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলো- শাকিল (১৬) ও আশরাফুল ইসলাম (১৭)।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ছয়টায় যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা যায়, গত (১৮ ডিসেম্বর) হাফেজ কামরুল হাসান তার বন্ধুদের সাথে সাজেক যাওয়ার জন্য রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে রওনা করেন। রাত অনুমানিক ৮টা ৪০মিনিটের দিকে সায়েদাবাদ এলাকায় নেমে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ফ্লাইওভারের ওপর সাথী আবাসিক হোটেল বরাবর পৌঁছালে কয়েকজন ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতে চায়। এ সময় ভিকটিম কামরুল হাসান ছিনতাইকারীদের বাঁধা দেওয়ায় তাদের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয়।  

একপর্যায়ে ছিনতাইকারী রোহান তার হাতে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে কামরুল হাসানের বুকে আঘাত করলে সে ফ্লাইওভারের ওপর লুটিয়ে পড়ে। পরে ছিনতাইকারীরা তার কাছে থাকা একটি মোবাইল ফোন যার আনুমানিক মূল্য ১১ হাজার টাকা ও নগদ ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় কামরুলকে  ফ্লাইওভারের ওপর পড়ে থাকতে দেখে পথচারী জনৈক রুবেল চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ধলপুরের ইসলামিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে কামরুলের বাবা দ্রুত হাসপাতালে ছুঁটে যান। পরবর্তীতে ইসলামিয়া হাসপাতাল থেকে ওইদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত (২০ ডিসেম্বর) কামরুলের বাবা মো. ইমাম হোসেন বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেন।

মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থল ও আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের সনাক্ত করা হয়। এরপর যাত্রাবাড়ী থানার একটি টিম শনিবার সকাল সাড়ে ছয়টায় যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শাকিল ও আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত শাকিল ও আশরাফুল ছিনতাই ও হত্যাকান্ডের সময় যে পোশাক, ক্যাপ এবং জুতা পরিহিত অবস্থায় ছিলো সেই পোশাক, ক্যাপ ও জুতা পরিহিত অবস্থাতেই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা মূলত মাদক সেবনের অর্থ সংগ্রহের জন্য যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারসহ আশেপাশের এলাকায় পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করতো তারা। প্রাথমিকভাবে তারা এই হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

ঘটনার দিন গ্রেপ্তারকৃত শাকিল ও আশরাফুলসহ পলাতক আপন (১৫), রোহান (১৭) ও সিফাত (১৫) ভিকটিম কামরুল হাসানের কাছ থেকে মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়ার সময় ভিকটিম বাঁধা দেয়ায় তার সাথে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রোহান চাকু দিয়ে তার বুকে আঘাত করে। এরপর ভিকটিমের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।  গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ছিনতাইকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।