সিনিয়র রিপোর্টার
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ঢাকা মহানগরের বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নতি সাধন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। জনসম্পৃক্তার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে রমনা থানা এলাকায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ভবনে পুলিশ, ছাত্র-জনতা ও সম্মানিত নাগরিকবৃন্দের সমন্বয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা একটি জনবহুল শহর। এই শহরের যে পরিকল্পনা তা সঠিকভাবে তৈরি করা হয়নি। রাস্তাঘাট যেটি ২৫ শতাংশ থাকার কথা সেটি রয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। ফলে এই শহরে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। গত এক মাসে আমরা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সাধারণ জনগণের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে এর জন্য বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত নয়। মতবিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনার টেবিলে সমাধান করা উচিত।
শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান সমূহ একটি নির্দিষ্ট স্থানে করা উচিত। কেননা রাস্তায় সভা সমাবেশ করলে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে হাসপাতালগামী রোগী, বিদেশগামী যাত্রীগণসহ সর্বস্তরের মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে যেন এই মিছিল অথবা সমাবেশ যেন অন্যের কাজে বিঘ্ন না ঘটায়। চাঁদাবাজি একটি সামাজিক সমস্যা। এটি মোকাবেলার জন্য সমাজের প্রতিটি অঙ্গ সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। কোথায় চাঁদাবাজি হচ্ছে, কারা চাঁদাবাজি করছে তাদের তথ্য আমাদের সরবরাহ করুন। চাঁদাবাজির জন্য নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। চাঁদাবাজি ঠেকানোর জন্য আমাদের উপর অনেক দায়িত্ব, আমরা চাঁদাবাজদের একটি হালনাগাদ তালিকা তৈরি করছি। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।
তিনি বলেন, হকার উচ্ছেদের ক্ষেত্রে কিছু মানবিক বিষয় আমাদের লক্ষ্য রাখতে হয়। তবে এক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ যাতে তৈরি না হয় সে ব্যপারে আমরা সতর্কভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া কনস্ট্রাকশনের কাজে ব্যবহৃত ইট, বালু যত্রতত্র রাস্তায় রেখে সাধারন পথচারীর সমস্যা তৈরি না করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। মাদক সমস্যার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া মামলাযোগ্য ঘটনার ক্ষেত্রে অবশ্যই থানায় মামলা রুজু হবে। এক্ষেত্রে কোন ঘটনা যাতে আড়াল না হয় সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। গাড়ীর অতিরিক্ত হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আইন প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছাত্র-জনতা ও রমনা থানা এলাকার সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ ডিএমপি কমিশনারের কাছে তাদের বিভিন্ন মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন। এ সময় ডিএমপি কমিশনার উপস্থিত সকলের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং ডিএমপির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
রমনা থানার বিশিষ্ট নাগরিক একরামুল বলেন, পুলিশ জনতা ভাই ভাই। গত ৫ আগস্টের পর পুলিশের কাজ প্রশংসনীয়। একারণে মানবাধিকার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে।
সভায় উপস্থিত ফৌজিয়া ইসলাম নওশীন বলেন, আপনারা ছাত্রদের ডেকেছেন, আমাদের কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেন এজন্য আপনাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই উদ্যোগের ফলে আমাদের এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত হবে এবং সমাধানের একটি পথ বের হবে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম বিপিএম। সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) মো. ইসরাইল হাওলাদার; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ এবং ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে, পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে মতবিনিময় সভা শুরু করা হয়। এরপর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন ও পরে সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য মোনাজাত করা হয়।