ঢাকা , বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মামলার অনুমতি, শামিম ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ

সিনিয়র রিপোর্টার

প্রায় ২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার স্ত্রী সালমা ওসমান ও তানভীর আহমেদকে আসামি করে মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকালে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক প্রতিরোধ মো. আক্তার হোসেন।

দুদকের মহাপরিচালক প্রতিরোধ মো. আক্তার হোসেন বলেন, কে টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেডের মাধ্যমে তারা এ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। আগামীকালের মধ্যেই মামলাটি দায়ের করা হবে বলে জানান তিনি। দুদকের অনুসন্ধানের সময় বিটিআরসি থেকে পাওয়া রেকর্ডপত্র ও তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, কে টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেডের আন্তর্জাতিক কিংবা বৈদেশিক ইনকামিং কল আনা তথা সেবা রফতানির জন্য বিটিআরসি থেকে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান। যার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ।

আক্তার হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল বা সেবা রফতানি বাবদ রাষ্ট্রের স্বার্থে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং তার সংশ্লেষে রেভিনিউ সংগ্রহ সংক্রান্ত সরকারি কর্তব্য সম্পাদনে কমিশন আকারে পারিশ্রমিক প্রাপ্তি কিংবা রেভেনিউ শেয়ারিং প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিটিআরসি থেকে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স পাওয়ার মাধ্যমে কে টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেড আইজিডব্লিউ অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পায়। সে অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল বা সেবা রফতানি সংশ্লেষে তার মূল্য বাবদ অর্জিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উক্ত আইজিডব্লিউ অপারেটরের ব্যাংকিং চ্যানেলে ফরেন কারেন্সি (এফসি) অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে নিয়ে আসার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। কিন্তু তারা সেই অর্থে দেশে না এনে মানিলন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

তিনি বলেন, দুদকের অনুসন্ধানের সময় ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে বা আইজিডব্লিউ অপারেটরকে টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেডের আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল আনয়ন কিংবা সেবা রফতানি এবং তার সংশ্লেষে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশে আনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, আইজিডব্লিউ অপারেট ২০১২ সালের  সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত (১৪ মাস) সময়ে ৯১ কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার ৮৬৫ কল মিনিট সেবা রফতানি করে। রফতানি করা এ সেবার মূল্য ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৬ মার্কিন ডলার। উক্ত বৈদেশিক মুদ্রা আইন অনুযায়ী ফরেন রেমিটেন্স হিসেবে বাংলাদেশে নিয়ে আসার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। এজন্য নারায়ণগঞ্জের আইএফআইসি ব্যাংকের শাখা থেকে পাঠানো উক্ত আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরের বিবরণীতে দেখা যায়, ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৬ মার্কিন ডলারের স্থলে ২২ লাখ ৬৯ হাজার ৪২৭ মার্কিন ডলার আনা হয়েছে। আনা হয়নি ২ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৮ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৯৩ কোটি ৯১ লাখ ১৮ হাজার ৬০৩ টাকা। তাছাড়া বিটিআরসি থেকেও এ সংক্রান্তে অনুরূপ তথ্য পাওয়া যায়। এ সময়ে আইজিডব্লিউ অপারেটরের চেয়ারম্যান হিসেবে সালমা ওসমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তানভীর আহমেদ দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, নারায়নগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের সহযোগিতায় চেয়ারম্যান হিসেবে সালমা ওসমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তানভীর আহমেদ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় উল্লিখিত আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের স্বার্থ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান মানিলন্ডারিং আইন অমান্য করে ১৯৩ কোটি ৯১ লাখ ১৮ হাজার ৬০৩ টাকা মূল্যের ২ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৮ মার্কিন ডলার পাচার কিংবা মানিলন্ডারিং করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় পাচারের অপরাধ হয়েছে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

মামলার অনুমতি, শামিম ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ

আপডেট সময় ২৭ মিনিট আগে

সিনিয়র রিপোর্টার

প্রায় ২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার স্ত্রী সালমা ওসমান ও তানভীর আহমেদকে আসামি করে মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকালে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক প্রতিরোধ মো. আক্তার হোসেন।

দুদকের মহাপরিচালক প্রতিরোধ মো. আক্তার হোসেন বলেন, কে টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেডের মাধ্যমে তারা এ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। আগামীকালের মধ্যেই মামলাটি দায়ের করা হবে বলে জানান তিনি। দুদকের অনুসন্ধানের সময় বিটিআরসি থেকে পাওয়া রেকর্ডপত্র ও তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, কে টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেডের আন্তর্জাতিক কিংবা বৈদেশিক ইনকামিং কল আনা তথা সেবা রফতানির জন্য বিটিআরসি থেকে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান। যার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ।

আক্তার হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল বা সেবা রফতানি বাবদ রাষ্ট্রের স্বার্থে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং তার সংশ্লেষে রেভিনিউ সংগ্রহ সংক্রান্ত সরকারি কর্তব্য সম্পাদনে কমিশন আকারে পারিশ্রমিক প্রাপ্তি কিংবা রেভেনিউ শেয়ারিং প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিটিআরসি থেকে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স পাওয়ার মাধ্যমে কে টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেড আইজিডব্লিউ অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পায়। সে অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল বা সেবা রফতানি সংশ্লেষে তার মূল্য বাবদ অর্জিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা উক্ত আইজিডব্লিউ অপারেটরের ব্যাংকিং চ্যানেলে ফরেন কারেন্সি (এফসি) অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে নিয়ে আসার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। কিন্তু তারা সেই অর্থে দেশে না এনে মানিলন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

তিনি বলেন, দুদকের অনুসন্ধানের সময় ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে বা আইজিডব্লিউ অপারেটরকে টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেডের আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল আনয়ন কিংবা সেবা রফতানি এবং তার সংশ্লেষে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশে আনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, আইজিডব্লিউ অপারেট ২০১২ সালের  সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত (১৪ মাস) সময়ে ৯১ কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার ৮৬৫ কল মিনিট সেবা রফতানি করে। রফতানি করা এ সেবার মূল্য ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৬ মার্কিন ডলার। উক্ত বৈদেশিক মুদ্রা আইন অনুযায়ী ফরেন রেমিটেন্স হিসেবে বাংলাদেশে নিয়ে আসার বাধ্য বাধকতা রয়েছে। এজন্য নারায়ণগঞ্জের আইএফআইসি ব্যাংকের শাখা থেকে পাঠানো উক্ত আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরের বিবরণীতে দেখা যায়, ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৬ মার্কিন ডলারের স্থলে ২২ লাখ ৬৯ হাজার ৪২৭ মার্কিন ডলার আনা হয়েছে। আনা হয়নি ২ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৮ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৯৩ কোটি ৯১ লাখ ১৮ হাজার ৬০৩ টাকা। তাছাড়া বিটিআরসি থেকেও এ সংক্রান্তে অনুরূপ তথ্য পাওয়া যায়। এ সময়ে আইজিডব্লিউ অপারেটরের চেয়ারম্যান হিসেবে সালমা ওসমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তানভীর আহমেদ দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, নারায়নগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের সহযোগিতায় চেয়ারম্যান হিসেবে সালমা ওসমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তানভীর আহমেদ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় উল্লিখিত আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের স্বার্থ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান মানিলন্ডারিং আইন অমান্য করে ১৯৩ কোটি ৯১ লাখ ১৮ হাজার ৬০৩ টাকা মূল্যের ২ কোটি ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৮ মার্কিন ডলার পাচার কিংবা মানিলন্ডারিং করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় পাচারের অপরাধ হয়েছে।