আন্তর্জাতিক ডেস্ক
স্কি ছুটিতে থাকা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও তার পরিবারকে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি শনিবার (১ মার্চ) পরিবারের সঙ্গে ভারমন্ট রাজ্যে ছুটিতে গেলে একদল ইউক্রেন সমর্থক বিক্ষোভকারী তাকে ঘিরে ফেলেন।
ফলে সেই ছুটি বাধাগ্রস্ত হয়। ওভাল অফিসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ বৈঠকের পরই এই বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে হওয়া বৈঠক থেকে।
সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং মূলত সেই উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ভ্যান্স। বৈঠকটি সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে শুরু হলেও হঠাৎ করেই ভ্যান্স জেলেনস্কির ওপর তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন যা জেলেনস্কিকে পুরোপুরি অপ্রস্তুত করে ফেলে।
ফক্স নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী শনিবার ভ্যান্স ও তার পরিবারকে অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, কারণ তিনি ইউক্রেন সমর্থক বিক্ষোভকারীদের সম্মুখীন হন। বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং ভ্যান্সকে উদ্দেশ্য করে তীব্র ভাষায় গালিগালাজ করে। অনেকে হাতে প্ল্যাকার্ড ধরে ছিলেন যেখানে লেখা ছিল ‘রাশিয়ায় গিয়ে স্কি কর।’
ওই বৈঠকে যখন জেলেনস্কি কূটনৈতিক সমাধান নিয়ে ভ্যান্সের বক্তব্য জানতে চান তখন ভ্যান্স পাল্টা বলেন, ‘আমি এমন কূটনীতির কথা বলছি, যা আপনার দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবে।’ ভ্যান্স আরো বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আপনার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আমেরিকান মিডিয়ার সামনে এসে এভাবে বিষয়টি উত্থাপন করা আপনার পক্ষ থেকে অসম্মানজনক।’ এরপর তিনি অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন জেলেনস্কি।
এছাড়া রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়তে যুক্তরাষ্ট্র যে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দিয়েছে তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি। এই নাটকীয় বাকবিতণ্ডার পর ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি স্পষ্ট করে বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে কোনোভাবেই ক্ষমা চাইতে বাধ্য নন। ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রেসিডেন্টের প্রতি ভ্যান্সের আচরণে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন।
তবে, কিছু রিপাবলিকান নেতা ভ্যান্সের অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। দক্ষিণ ক্যারোলিনার সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম, যিনি দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনের পক্ষে এবং কঠোর পররাষ্ট্রনীতির সমর্থক হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি জেডি ভ্যান্সের এমন সাহসী অবস্থানের জন্য গর্বিত।’
এই ঘটনার ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্ক আরো অবনতির দিকে গেছে। বিশেষজ্ঞরা এখন প্রশ্ন তুলছেন মস্কোর ক্রমবর্ধমান হামলার মধ্যে ওয়াশিংটন আদৌ কিয়েভের প্রতি কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থান থেকে এক ধরনের বিচ্যুতি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডেইলি এক্সপ্রেস ইউএস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দ্য সুফান সেন্টারের গবেষক নিকি লিউবারস্কি বলেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক যখন সবচেয়ে ভালো ছিল, তখনো সেখানে চাপা উত্তেজনা ও অবিশ্বাস ছিল। এমন ‘ভাতৃপ্রতীম’ সম্পর্ক আগে কখনো দেখা যায়নি।