ঢাকা , সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন 

অনলাইন ডেস্ক  : 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও ধর্মঘট করেছেন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন। সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এদিন সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ও সড়কে অবস্থান নেন।

বিশেষ করে রাজু ভাস্কর্য, টিএসসি, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, সায়েন্সল্যাব, গুলশান, বাড্ডা, মিরপুর-১২, উত্তরা, বারিধারাসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন দূতাবাসের সামনেও শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান দেন।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর শিক্ষার্থীরা মিরপুরে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাড্ডায়, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটে এবং ঢামেকসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার ও টিএসসি চত্বরে বিক্ষোভ করেন।

বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন। তাদের দাবি, ইসরায়েলের এই হামলা আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া উচিত এবং বিশ্ব নেতাদের উচিত এই বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করা।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যা ঘটছে তা সম্পূর্ণ যুদ্ধাপরাধ। এই বর্বরতা বন্ধ করতে হবে।’ তারা বাংলাদেশ সরকারকে ফিলিস্তিনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর প্রতি একত্রিত হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিবাদ জানানোর দাবি জানান। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান এবং সেসব দেশকে বয়কট করার দাবি জানান, যারা ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘গাজার জনগণের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাস্তায় নেমেছি। কারণ সেখানে ফিলিস্তিনিদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও ভাটারায়ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। অনেকের হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা। 

সরজমিনে দেখা গেছে, শিশুরাও এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। রাজপথে দাঁড়িয়ে তারা ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই’, ‘ইসরায়েলের বিচার চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। এই আন্দোলন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ নামক আন্তর্জাতিক কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার (৬ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন। ঢাবি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এই কর্মসূচির প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানিয়েছে। বিক্ষোভ ঘিরে গুলশান ও বারিধারার কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং এক লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার প্রায় ৬৯ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ইসরায়েলের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ও যুদ্ধাপরাধের প্রতিবাদেই আজকের এই বিশ্বব্যাপী কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

গাজায় হামলার প্রতিবাদে সরব বাংলাদেশ, ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

গাজায় হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন 

আপডেট সময় ৩৭ মিনিট আগে
অনলাইন ডেস্ক  : 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও ধর্মঘট করেছেন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন। সোমবার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এদিন সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ও সড়কে অবস্থান নেন।

বিশেষ করে রাজু ভাস্কর্য, টিএসসি, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, সায়েন্সল্যাব, গুলশান, বাড্ডা, মিরপুর-১২, উত্তরা, বারিধারাসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন দূতাবাসের সামনেও শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান দেন।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর শিক্ষার্থীরা মিরপুরে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাড্ডায়, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটে এবং ঢামেকসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার ও টিএসসি চত্বরে বিক্ষোভ করেন।

বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন। তাদের দাবি, ইসরায়েলের এই হামলা আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া উচিত এবং বিশ্ব নেতাদের উচিত এই বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করা।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যা ঘটছে তা সম্পূর্ণ যুদ্ধাপরাধ। এই বর্বরতা বন্ধ করতে হবে।’ তারা বাংলাদেশ সরকারকে ফিলিস্তিনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর প্রতি একত্রিত হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিবাদ জানানোর দাবি জানান। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান এবং সেসব দেশকে বয়কট করার দাবি জানান, যারা ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘গাজার জনগণের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাস্তায় নেমেছি। কারণ সেখানে ফিলিস্তিনিদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও ভাটারায়ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। অনেকের হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা। 

সরজমিনে দেখা গেছে, শিশুরাও এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। রাজপথে দাঁড়িয়ে তারা ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই’, ‘ইসরায়েলের বিচার চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। এই আন্দোলন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ নামক আন্তর্জাতিক কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার (৬ এপ্রিল) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন। ঢাবি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এই কর্মসূচির প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানিয়েছে। বিক্ষোভ ঘিরে গুলশান ও বারিধারার কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং এক লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার প্রায় ৬৯ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ইসরায়েলের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ও যুদ্ধাপরাধের প্রতিবাদেই আজকের এই বিশ্বব্যাপী কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।