ঢাকা , শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গৃহকর্মী হত্যার অভিযোগ : বিচার দাবি বাবার

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৮:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • 7

ঢাকার তেজগাঁওয়ের ন্যাম ভবনে বসবাসরত এসএসএফ বাহিনীর এসপি মো. তরিকুল ইসলামের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতো মীনা খাতুন। তার বয়স ছিল ১৪ বছর। মীনা খাতুনের মর্মান্তিক ও সন্দেহজনক মৃত্যুর বিচার চেয়েছেন খুলনার পাইকগাছা রাউলী গ্রামের ৫৯ বছর বয়সী ভ্যান চালক মো. আব্দুল হামিদ।

সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে আবদুল হামিদ বলেন, তিনি একজন দরিদ্র, অশিক্ষিত, নাগরিক। তার এক ছেলে ও ৪ মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে মীনা এসপি মো. তরিকুল ইসলাম দম্পতির বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজ করতো। মীনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন তরিকুলের বাবা সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম এবং তার স্ত্রী-যিনি মীনার পরিবারকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে মীনা তাদের সন্তান এবং একজন বৃদ্ধ মহিলার যত্ন নিতে সাহায্য করবে।

এসপি মো. তরিকুল ইসলাম দম্পতির বাড়িতে প্রায় এক মাসযাবত গৃহ পরিচারিকার কাজ করার সময় ভিকটিম মীনা খাতুন তার মাকে ফোন করে জানায় যে, এসপি তরিকুলের স্ত্রী এবং তার মা তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এ সময় মেয়ের কথা শুনে চেয়ারম্যানকে বলে মেয়েকে দেখার জন্য গ্রামের বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসে। কিছু দিন পর তরিকুলের বাবা চেয়ারম্যান আবুল কালাম ও তার স্ত্রী আমার বাড়িতে এসে অনুনয় বিনয় করে আমার (হামিদের) ভাঙ্গা বসতঘরটাকে মেরামত করে দেবার কথা দিয়ে আমার মেয়ে মিনাকে আবার তার ছেলের বাসায় কাজে নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে গত ৬ নভেম্বর ২০১০ তারিখে আমাকে জানানো হয়, আমার মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এরপর আমি ঢাকায় গেলে আমাকে পুলিশের গাড়িতে হাসপাতালে  নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখি মেয়েকে কাফনের কাপড় পরানো। কিছুক্ষণ পর আসামী রফিকের সহযোগিতায় পুলিশের গাড়িসহ ঢাকা থেকে এ্যাম্বুলেন্সে মেয়ের লাশ গ্রামে নিয়ে আসে। এর পরপরই তড়িঘড়ি করে পুলিশের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যান আবুল কালাম নিজে দাড়িয়ে থেকে ভোর ৬টার সময়  মিনাকে (ভিকটিম) কবর দেয়। এ সময় আমার পরিবার ও এলাকাবাসীকে লাশ দেখার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর সাংবাদিকরা আমার বাড়িতে এসে মেয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আমি তাদেরকে তার মৃত্যুর খবর জানাই। এরপর সাংবাদিকরা আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে যায় এবং তার সাথে অনেক বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে  সাংবাদিকদের জেরার মুখে এসপি তরিকুলের বাবা চেয়ারম্যান আবুল কালাম স্বীকার করে যে মিনা আত্মহত্যা করেছে। আমার ১৪ বছরের শিশু কন্যার আত্মহত্যা করার কথা শুনে আমি অবাক হই। আমার মেয়ে নাবালিকা। আসামীদের বাসায় কাজ করত। আত্মহত্যা করার কোন কারণ নাই। আমি বিশ্বাস করি, আমার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করে এসপি তরিকুল ও তার স্ত্রী হত্যা করে তা আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে। পরবর্তীতে আমি ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করি। যাহার নং সি.আর. ১৩৭/২০২৫, ধারা- ৩০২ ও ৩৪। উক্ত মামলায় বিজ্ঞ আদালত উপ-মহাপরিদর্শক, পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশ দেন। আমি আমার নাবালিকা মেয়ের মৃত্যুর সত্য উদঘাটনের জন্য একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তের অনুরোধ করছি

উল্লেখ্য যে, ১৯৯১ সালে তৎকালীন খুলনার পুলিশ সুপার এ. জেড. আই তালুকদার সাহেবের অফিস স্মারক নং ৪৩/ডি, তাং ০৬/০১/১৯৯১ মোতাবেক বিজ্ঞ পিপি খুলনার মতামত নিয়া মামলাটি পুনঃরুজ্জীবিত করিয়া দাকোপ সার্কেল তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার জনাব কামালকে তদন্ত ভার অর্পন করেন। তদন্তে তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ চেয়ারম্যান আফসার আলী গাজী হত্যার অভিযুক্ত হন এবং আসামী আবুল কালাম আজাদ এখনও পলাতক হিসাবে আছেন বলে মামলায় বর্ণিত।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

প্রতারক চক্রের খপ্পরে দুই অনলাইন শাড়ী ব্যবসায়ী : শাড়ী উদ্ধারসহ প্রতারক চক্রের চার সদস্য গ্রেপ্তার

পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গৃহকর্মী হত্যার অভিযোগ : বিচার দাবি বাবার

আপডেট সময় ০৮:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

ঢাকার তেজগাঁওয়ের ন্যাম ভবনে বসবাসরত এসএসএফ বাহিনীর এসপি মো. তরিকুল ইসলামের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতো মীনা খাতুন। তার বয়স ছিল ১৪ বছর। মীনা খাতুনের মর্মান্তিক ও সন্দেহজনক মৃত্যুর বিচার চেয়েছেন খুলনার পাইকগাছা রাউলী গ্রামের ৫৯ বছর বয়সী ভ্যান চালক মো. আব্দুল হামিদ।

সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে আবদুল হামিদ বলেন, তিনি একজন দরিদ্র, অশিক্ষিত, নাগরিক। তার এক ছেলে ও ৪ মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে মীনা এসপি মো. তরিকুল ইসলাম দম্পতির বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজ করতো। মীনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন তরিকুলের বাবা সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম এবং তার স্ত্রী-যিনি মীনার পরিবারকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে মীনা তাদের সন্তান এবং একজন বৃদ্ধ মহিলার যত্ন নিতে সাহায্য করবে।

এসপি মো. তরিকুল ইসলাম দম্পতির বাড়িতে প্রায় এক মাসযাবত গৃহ পরিচারিকার কাজ করার সময় ভিকটিম মীনা খাতুন তার মাকে ফোন করে জানায় যে, এসপি তরিকুলের স্ত্রী এবং তার মা তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এ সময় মেয়ের কথা শুনে চেয়ারম্যানকে বলে মেয়েকে দেখার জন্য গ্রামের বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসে। কিছু দিন পর তরিকুলের বাবা চেয়ারম্যান আবুল কালাম ও তার স্ত্রী আমার বাড়িতে এসে অনুনয় বিনয় করে আমার (হামিদের) ভাঙ্গা বসতঘরটাকে মেরামত করে দেবার কথা দিয়ে আমার মেয়ে মিনাকে আবার তার ছেলের বাসায় কাজে নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে গত ৬ নভেম্বর ২০১০ তারিখে আমাকে জানানো হয়, আমার মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এরপর আমি ঢাকায় গেলে আমাকে পুলিশের গাড়িতে হাসপাতালে  নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখি মেয়েকে কাফনের কাপড় পরানো। কিছুক্ষণ পর আসামী রফিকের সহযোগিতায় পুলিশের গাড়িসহ ঢাকা থেকে এ্যাম্বুলেন্সে মেয়ের লাশ গ্রামে নিয়ে আসে। এর পরপরই তড়িঘড়ি করে পুলিশের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যান আবুল কালাম নিজে দাড়িয়ে থেকে ভোর ৬টার সময়  মিনাকে (ভিকটিম) কবর দেয়। এ সময় আমার পরিবার ও এলাকাবাসীকে লাশ দেখার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর সাংবাদিকরা আমার বাড়িতে এসে মেয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আমি তাদেরকে তার মৃত্যুর খবর জানাই। এরপর সাংবাদিকরা আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে যায় এবং তার সাথে অনেক বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে  সাংবাদিকদের জেরার মুখে এসপি তরিকুলের বাবা চেয়ারম্যান আবুল কালাম স্বীকার করে যে মিনা আত্মহত্যা করেছে। আমার ১৪ বছরের শিশু কন্যার আত্মহত্যা করার কথা শুনে আমি অবাক হই। আমার মেয়ে নাবালিকা। আসামীদের বাসায় কাজ করত। আত্মহত্যা করার কোন কারণ নাই। আমি বিশ্বাস করি, আমার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করে এসপি তরিকুল ও তার স্ত্রী হত্যা করে তা আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে। পরবর্তীতে আমি ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করি। যাহার নং সি.আর. ১৩৭/২০২৫, ধারা- ৩০২ ও ৩৪। উক্ত মামলায় বিজ্ঞ আদালত উপ-মহাপরিদর্শক, পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশ দেন। আমি আমার নাবালিকা মেয়ের মৃত্যুর সত্য উদঘাটনের জন্য একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তের অনুরোধ করছি

উল্লেখ্য যে, ১৯৯১ সালে তৎকালীন খুলনার পুলিশ সুপার এ. জেড. আই তালুকদার সাহেবের অফিস স্মারক নং ৪৩/ডি, তাং ০৬/০১/১৯৯১ মোতাবেক বিজ্ঞ পিপি খুলনার মতামত নিয়া মামলাটি পুনঃরুজ্জীবিত করিয়া দাকোপ সার্কেল তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার জনাব কামালকে তদন্ত ভার অর্পন করেন। তদন্তে তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ চেয়ারম্যান আফসার আলী গাজী হত্যার অভিযুক্ত হন এবং আসামী আবুল কালাম আজাদ এখনও পলাতক হিসাবে আছেন বলে মামলায় বর্ণিত।