ঢাকা , রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপেক্ষা করুন, আদালতের হাত অনেক লম্বা: প্রধান বিচারপতি

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৫:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩
  • 68

সিনিয়র রিপোর্টার : নিবন্ধন বাতিলের পরও জামায়াতে ইসলাম সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আপিল বিভাগের নজরে আনলে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, অপেক্ষা করুন, আদালতের হাত অনেক লম্বা। চিন্তা-ভাবনা করেই এ বিষয়ে আদেশ দেব। রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধন বাতিলের পর জামায়াতের সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে বারবার সময় নেওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আজ বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। আদালতে রিটকারী আইনজীবীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।

জামায়াতের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন তুহিনের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল হাসান বলেন, কেন বার বার সময় নিচ্ছেন। সময় নিয়ে কোর্টে আসেন না কেন। এখানে সময় নেবেন আর অন্য কোর্টে মামলা করবেন তা হতে পারে না। আমরা সবই সিসি ক্যামেরায় দেখতে পাই। আমরা শেষ বারের মত সময় দিচ্ছি। এটা মনে রাখবেন আদালতের হাত অনেক লম্বা। এরপর আগামী ৬ নভেম্বর এই মামলা শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ।

এর আগে আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। তিনি বলেন, আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। সেই রায় বহাল আছে। কিন্তু রায় বহাল থাকার পরেও জামায়াত সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে। যা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের লঙ্ঘন। এজন্য শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সভা-সমাবেশ যাতে না করতে পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা চাচ্ছি। এসময় তিনি পত্রিকার কিছু ছবি ও প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। 

প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে আদেশ দেব।

জামায়াতের পক্ষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন তুহিন বলেন, প্রস্তুতির জন্য সময় দরকার। প্রধান বিচারপতি বলেন, কিসের প্রস্তুতি। যদি কেস না চালান তাহলে বলবেন তাহলে আমরা সেভাবে আদেশ দেব।

তানিয়া আমীর আদালতে বলেন, গত জুলাই মাসে আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। এরপর চার মাস পেরিয়ে গেছে। প্রতিপক্ষ বারবার সময় আবেদন করেই যাচ্ছে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, অবকাশের খোলার পর এই মামলাটি শুনব।

প্রসঙ্গত, ১০ বছর আগে উচ্চ আদালতের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়। ঘোষিত ঐ রায়ের বিরুদ্ধে তখনই আপিল করে দলটি। এখন ওই আপিলটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় গত ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশ করে দলটি। আর এই সমাবেশে আপত্তি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের মামলার রিটকারী পক্ষের।

রিটকারী পক্ষ বলছে, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতের সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ কোনো ধরনের রাজৈনতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কর্মসূচি পালন করতে না পারে তার নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত ৬ জুলাই আবেদন করা হয়। কারণ নিবন্ধনবিহীন দলটির যেকোনো কর্মসূচি পালন উচ্চ আদালতের রায়ের বরখেলাপ। আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় জামায়াতে ইসলামী কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলে বিচারাধীন আপিলটি অকার্যকর হয়ে পড়বে।

জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে গত ২৬ জুন আবেদন করেছেন মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, মো. হুমায়ুন কবির ও ইমদাদুল হক নামে তিন ব্যক্তি। এর আগে গত ২ জুন আপিল বিভাগের অবকাশকালীন বিচারপতি মো.আবু জাফর সিদ্দিকীর চেম্বার জজ আদালত রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদন আপিল বিভাগের শুনারির জন্য পাঠিয়ে দেন।

২৬ জুন আইনজীবী তানিয়া আমীর বলেছিলেন, আমরা দুটি আবেদন করেছি। একটা হচ্ছে হাইকোর্টের রায় বলবৎ থাকার পরও ১০ বছর পরে জামায়াত কর্মসূচি পালন করেছে। আরেকটা আদালত অবমাননার। কারণ তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন যেখানে আদালত অবমাননার বিষয় আছে। অথচ হাইকোর্টের রায়ে তাদের নিবন্ধন অবৈধ। চেম্বার আদালত আবেদন দুটি গ্রহণ করে শুনানির জন্য ৩১ জুলাই দিন ঠিক করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গত ৩১ জুলাই শুনানি না হয়ে এ বিষয়ে আজ শুনানি হয়েছে।

২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে সাময়িক নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আদালতে দাখিল করা হলফনামায় বলা হয়-দলটিকে সাময়িক গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে ইসি কর্তৃক গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০ ডি-এর ‘ব্যতিক্রম বিধান অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে নিবন্ধন প্রদান করা হয়। এই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফসহ ২৫ জন।

ওই রিটের ওপর জারিকৃত রুল গ্রহণ করে ২০১৩ সালের পহেলা আগস্ট বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন প্রদানকে অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে রায় দেয়। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হক এই রায় দেন। তবে এই রায়ে একমত হতে পারেননি বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেন। তিনি জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দেন। তবে জ্যেষ্ঠ বিচারপতির এই মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে দুই বিচারপতির দেওয়া রায়ে বলা হয়, নিবন্ধনের সময় দাখিলকৃত জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রটির উল্লেখযোগ্য ধারা বা বিধানসমূহ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। অর্থাৎ গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০সি (এ) ও (বি) শর্তসমূহ পূরণে সক্ষম হয়নি। যেহেতু সাময়িক গঠনতন্ত্রটি নিবন্ধনকালীন ৯০ সি-এর শর্তসমূহ পূরণ করে দাখিল করা হয়নি, সুতরাং নির্বাচন কমিশন বেআইনি ও আইন বহির্ভূতভাবে তর্কিত নিবন্ধনটি প্রদান করেছে, যা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হয়েছে এবং এর কোনও আইনগত কার্যকারিতা নেই। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। 

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দলটি। দলের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী ও মহাসচিব আলী আহসান মুজাহিদ এই আপিল করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সরকার। 

এদিকে এক দশক পেরিয়ে গেলেও ঐ আপিল শুনানির জন্য এখনো প্রস্তুত হয়নি। দলটির পক্ষ থেকে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল না করায় শুনানি শুরু করতে পারেনি দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপর আপিলের সার সংক্ষেপ দাখিলের জন্য গত ৩১ জানুয়ারি দুই মাস সময় বেঁধে দেন আপিল বিভাগ।

তখন আদালত বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করবেন। যদি এটা দাখিলে ব্যর্থ হন, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপিলটি খারিজ হয়ে যাবে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ট্যাগস

অপেক্ষা করুন, আদালতের হাত অনেক লম্বা: প্রধান বিচারপতি

আপডেট সময় ০৫:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩

সিনিয়র রিপোর্টার : নিবন্ধন বাতিলের পরও জামায়াতে ইসলাম সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আপিল বিভাগের নজরে আনলে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, অপেক্ষা করুন, আদালতের হাত অনেক লম্বা। চিন্তা-ভাবনা করেই এ বিষয়ে আদেশ দেব। রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধন বাতিলের পর জামায়াতের সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে বারবার সময় নেওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আজ বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। আদালতে রিটকারী আইনজীবীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।

জামায়াতের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন তুহিনের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল হাসান বলেন, কেন বার বার সময় নিচ্ছেন। সময় নিয়ে কোর্টে আসেন না কেন। এখানে সময় নেবেন আর অন্য কোর্টে মামলা করবেন তা হতে পারে না। আমরা সবই সিসি ক্যামেরায় দেখতে পাই। আমরা শেষ বারের মত সময় দিচ্ছি। এটা মনে রাখবেন আদালতের হাত অনেক লম্বা। এরপর আগামী ৬ নভেম্বর এই মামলা শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ।

এর আগে আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। তিনি বলেন, আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। সেই রায় বহাল আছে। কিন্তু রায় বহাল থাকার পরেও জামায়াত সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে। যা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের লঙ্ঘন। এজন্য শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সভা-সমাবেশ যাতে না করতে পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা চাচ্ছি। এসময় তিনি পত্রিকার কিছু ছবি ও প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। 

প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে আদেশ দেব।

জামায়াতের পক্ষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন তুহিন বলেন, প্রস্তুতির জন্য সময় দরকার। প্রধান বিচারপতি বলেন, কিসের প্রস্তুতি। যদি কেস না চালান তাহলে বলবেন তাহলে আমরা সেভাবে আদেশ দেব।

তানিয়া আমীর আদালতে বলেন, গত জুলাই মাসে আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। এরপর চার মাস পেরিয়ে গেছে। প্রতিপক্ষ বারবার সময় আবেদন করেই যাচ্ছে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, অবকাশের খোলার পর এই মামলাটি শুনব।

প্রসঙ্গত, ১০ বছর আগে উচ্চ আদালতের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়। ঘোষিত ঐ রায়ের বিরুদ্ধে তখনই আপিল করে দলটি। এখন ওই আপিলটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় গত ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশ করে দলটি। আর এই সমাবেশে আপত্তি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের মামলার রিটকারী পক্ষের।

রিটকারী পক্ষ বলছে, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতের সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ কোনো ধরনের রাজৈনতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কর্মসূচি পালন করতে না পারে তার নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত ৬ জুলাই আবেদন করা হয়। কারণ নিবন্ধনবিহীন দলটির যেকোনো কর্মসূচি পালন উচ্চ আদালতের রায়ের বরখেলাপ। আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় জামায়াতে ইসলামী কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলে বিচারাধীন আপিলটি অকার্যকর হয়ে পড়বে।

জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে গত ২৬ জুন আবেদন করেছেন মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, মো. হুমায়ুন কবির ও ইমদাদুল হক নামে তিন ব্যক্তি। এর আগে গত ২ জুন আপিল বিভাগের অবকাশকালীন বিচারপতি মো.আবু জাফর সিদ্দিকীর চেম্বার জজ আদালত রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদন আপিল বিভাগের শুনারির জন্য পাঠিয়ে দেন।

২৬ জুন আইনজীবী তানিয়া আমীর বলেছিলেন, আমরা দুটি আবেদন করেছি। একটা হচ্ছে হাইকোর্টের রায় বলবৎ থাকার পরও ১০ বছর পরে জামায়াত কর্মসূচি পালন করেছে। আরেকটা আদালত অবমাননার। কারণ তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন যেখানে আদালত অবমাননার বিষয় আছে। অথচ হাইকোর্টের রায়ে তাদের নিবন্ধন অবৈধ। চেম্বার আদালত আবেদন দুটি গ্রহণ করে শুনানির জন্য ৩১ জুলাই দিন ঠিক করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গত ৩১ জুলাই শুনানি না হয়ে এ বিষয়ে আজ শুনানি হয়েছে।

২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে সাময়িক নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আদালতে দাখিল করা হলফনামায় বলা হয়-দলটিকে সাময়িক গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে ইসি কর্তৃক গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০ ডি-এর ‘ব্যতিক্রম বিধান অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে নিবন্ধন প্রদান করা হয়। এই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফসহ ২৫ জন।

ওই রিটের ওপর জারিকৃত রুল গ্রহণ করে ২০১৩ সালের পহেলা আগস্ট বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন প্রদানকে অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে রায় দেয়। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল-হক এই রায় দেন। তবে এই রায়ে একমত হতে পারেননি বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেন। তিনি জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দেন। তবে জ্যেষ্ঠ বিচারপতির এই মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে দুই বিচারপতির দেওয়া রায়ে বলা হয়, নিবন্ধনের সময় দাখিলকৃত জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রটির উল্লেখযোগ্য ধারা বা বিধানসমূহ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। অর্থাৎ গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০সি (এ) ও (বি) শর্তসমূহ পূরণে সক্ষম হয়নি। যেহেতু সাময়িক গঠনতন্ত্রটি নিবন্ধনকালীন ৯০ সি-এর শর্তসমূহ পূরণ করে দাখিল করা হয়নি, সুতরাং নির্বাচন কমিশন বেআইনি ও আইন বহির্ভূতভাবে তর্কিত নিবন্ধনটি প্রদান করেছে, যা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হয়েছে এবং এর কোনও আইনগত কার্যকারিতা নেই। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। 

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দলটি। দলের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী ও মহাসচিব আলী আহসান মুজাহিদ এই আপিল করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে সরকার। 

এদিকে এক দশক পেরিয়ে গেলেও ঐ আপিল শুনানির জন্য এখনো প্রস্তুত হয়নি। দলটির পক্ষ থেকে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল না করায় শুনানি শুরু করতে পারেনি দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপর আপিলের সার সংক্ষেপ দাখিলের জন্য গত ৩১ জানুয়ারি দুই মাস সময় বেঁধে দেন আপিল বিভাগ।

তখন আদালত বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করবেন। যদি এটা দাখিলে ব্যর্থ হন, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপিলটি খারিজ হয়ে যাবে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।