অনলাইন ডেস্ক : আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একটি মহল নির্বাচন বানচাল করে অনির্বাচিত সরকার আনার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে—এটা বুঝতে পেরেই তারা এই ষড়যন্ত্র করছে। তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সে কারণে নির্বাচন বানচাল করতে পারলে একটি অনির্বাচিত সরকার এনে তাদের ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র করতে বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসতে পারে বলেও জানান তিনি। গতকাল রবিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠক সূত্র ইত্তেফাককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংসদীয় দলের প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদ ভবনের সরকারি দলের সভাকক্ষে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক। সেখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে সংসদ সদস্যদের মধ্যে মোতাহার হোসেন, শামীম ওসমান, নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, কাজী কেরামত আলী, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, রুবিনা আক্তার মিরা, অ্যারোমা দত্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সূত্র জানায় বৈঠকে জরিপের ভিত্তিতে যোগ্য ও জনপ্রিয়দের মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী মনোনয়ন দেওয়া হবে। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। প্রার্থী মনোনয়ন আমি দেব, কে প্রার্থী আপনারা সেটা দেখতে যাবেন না, যাচাই করতে যাবেন না। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাকে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’ বৈঠকে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা হাত তুলে প্রধানমন্ত্রীর উল্লেখিত আহ্বান মেনে চলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। কাউকে জয়ী করার দায়িত্ব নিতে পারবেন না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এই ভোটে সবাইকে জিতে আসতে হবে। কাউকে জিতিয়ে আনার দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। আমি কারও চেহারা দেখে মনোনয়ন দেব না। দেখে-শুনে যে জনপ্রিয় ব্যক্তি তাদের নমিনেশন দেব। এখানে যারা আছেন, সবাই মনোনয়ন না-ও পেতে পারেন। যাকে নমিনেশন দেব, তার জন্য কাজ করতে হবে। নমিনেশন পান বা না পান, নৌকার বিরোধিতা করা যাবে না। যারা নৌকার বিরোধিতা করবেন, তাদের রাজনীতি চিরতরে শেষ বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি তার বক্তব্যকালে নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা বলেন। একজন সংসদ সদস্য জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারে। সে কারণে নির্বাচন বাদ দিয়ে অনির্বাচিত সরকারকে চায় দেশি-বিদেশি অনেকেই। কারণ অনির্বাচিত সরকার হলে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে সুবিধা হয়।’ তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না:জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপির চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘তারা আন্দোলন করতে চায় করবে। কোনো সমস্যা নেই। আমরা বাধা দেব না। তবে অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুর করলে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা সব মোকাবিলা করতে অভ্যস্ত। হেফাজত মোকাবিলা করেছি। জামায়াত-বিএনপি মোকাবিলা করেছি। এবারও করব। জানা গেছে, বৈঠকে কাজী কেরামত আলী জেলা আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করেন। তার ভাইকে সাধারণ সম্পাদক করার পর থেকে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এলাকায় গিয়ে এমপিদের মিটিং করার জন্য। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের কথা হচ্ছে, তাদের অনুমতি ছাড়া কোনো মিটিং করা যাবে না। এমপি হয়েও কি তিনি এলাকায় যেতে পারবেন না—এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি। শামীম ওসমান তার বক্তব্যে অন্তর্কোন্দল ভুলে গিয়ে আগামী নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করে শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। বৈঠকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ‘আমাদের ত্যাগী নেতাকর্মী রয়েছে। তার পরও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের আসন ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা চাই আমাদের চারটা সিটই (লক্ষ্মীপুর জেলার চারটি সংসদীয় আসন) আওয়ামী লীগের যেন হয়। আমরা সবাই একজোট। আশা করি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জিতে আসতে পারব। টানা ১৫ বছর ধরে দেশের শাসনক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরে যত উন্নয়ন হয়েছে, সেসব তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ডের চিত্রও জনগণের কাছে তুলে ধরার নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণের পাশে থাকে, জনগণ উপকৃত হয়। সবার জন্য আমরা কাজ করব—এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব।’
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে ধ্বংস করা পায়তারা চলছে। এ সময় প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার কথা তুলে ধরে বলেন, সম্প্রতি লুলা ডি সিলভার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, যেভাবে ব্রাজিলকে গুছিয়ে রেখে গিয়েছিলাম এসে দেখি ছারখার করে দিয়েছে। এখন আমাদের দেশেও যদি অন্য কেউ ক্ষমতায় আসে দেশটা ধ্বংস করে দেবে। সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ থেকে এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তাই নিজ যোগ্যতায় জয়ী হয়ে আসতে হবে।