সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাক প্রতিবন্ধী মাকে রাস্তায় ফেলে গেছেন তার ছেলেরা। পরে এক প্রতিবেশী তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন ওই বৃদ্ধাকে।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (৮ জুলাই) সকালে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামে। কল্যাণপুর গ্রামের মৃত খেলাফত মোল্লার স্ত্রী বৃদ্ধা সাহেরা খাতুন। বয়স তার আশির ঊর্ধ্বে। তার সংসারে রয়েছে তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। বড় ছেলে হকাজ্জেল, মেজ ছেলে তুষার, ছোট ছেলে আবু হানিফ। মেজ ও ছোট ছেলে থাকেন বিদেশে। সবাই স্বাবলম্বী। সাহেরা খাতুনের স্বামী মারা গেছেন ২০ বছর আগে। সন্তানদের বড় করে তুলতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। আশা ছিল সন্তানেরা উপার্জনক্ষম হলে বৃদ্ধ বয়সে তাকে দেখবে। কিন্তু তা হয়নি।
তার সন্তানেরা কৌশলে ৫ বোনকে ফাঁকি দিয়ে স্থাবর-অস্থাবরসহ সব সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন। এরপর থেকে সাহেরা খাতুনের ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু করেন তার ছেলেরা ও তাদের স্ত্রীরা। সম্পদ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মেয়েরাও খোঁজ নেন না মায়ের। অবশেষে বাক প্রতিবন্ধী মাকে তারা ফেলে গেছেন রাস্তায়। বৃষ্টির মধ্যে ভিজে আর্তনাদ করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি তাকে রক্ষায়।
প্রতিবেশী বাবলু জানান, মায়ের ভরণপোষণ ও খাওয়ানোর বিষয়ে তিন ভায়ের মধ্যে সমঝোতা হয়। ১০ দিন করে একেক সন্তান মাকে খাওয়াবে ও যত্ন নেবে। অথচ কেউ সঠিকভাবে তা করেনি। যার কাছেই যায় সেই নির্যাতন করে। সবশেষ মেজ ছেলের কাছে ছিল সাহেরা খাতুন। কিন্তু সন্তান ও স্ত্রী রুপিয়া খাতুন মা সাহেরাকে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় ফেলে যায়।
প্রতিবেশী সাজিয়া খাতুন জানান, সন্তানদের কারো কোনো অভাব নেই সংসারে। বৃদ্ধা এমনিতেই প্রতিবন্ধী। আর কয়দিন বাঁচবে সে? অথচ তাকে দুমুঠো ভাত না দিয়ে অকথ্য নির্যাতন করছে। প্রতিনিয়ত ওই পরিবারের লোকজন বৃদ্ধাকে মারধর করে।
সাহেরা খাতুনের দেবর হারেজ আলী জানান, সাহেরা খাতুনের স্বামী মারা যাবার সময় নগদ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে যান স্ত্রী তার দাফন কাফনের জন্য। হারেজ আলী সহ কয়েকজন ওই টাকা স্থানীয় কাউছার মেম্বরের কাছে জমা রাখা হয়। কিন্তু সেই টাকারও হদিস নেই। আবার বয়স্কভাতা প্রাপ্ত টাকা গুলোও সন্তানেরা ভাগ করে নিয়ে নেয়।
এদিকে ৪০ হাজার টাকা গচ্ছিত রাখার ব্যাপারে স্থানীয় মেম্বর কাউছার মেম্বরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
সাহেরা খাতুনের বড় ছেলে হকাজ্জেল বলেন, আমরা তিন ভাই মিলে মাকে ১০ দিন করে বাড়িতে রাখি। দুই ভাই বিদেশ থাকে। তাদের স্ত্রীরাও আমার মাকে ১০ দিন করে রাখেন। আমার পালা শেষে মেজ ভাইয়ের বাড়িতে রাখা হয়েছিল। আজ সকালে আমার মাকে মেজ ভাইয়ের স্ত্রী রাস্তায় ফেলে এসেছে বলে প্রতিবেশীদের মুখে শুনেছি।
তেতুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস আফসোস করে বলেন, বৃদ্ধা সাহেরা খাতুনের সব ছেলের অবস্থা ভালো। তারা পালাক্রমে মাকে দেখাশোনা করে। ছেলের বউরা বৃদ্ধাকে অত্যাচার করে। মায়ের মতো অমূল্য সম্পদকে যদি কেউ এমন অবজ্ঞা করে তাহলে তাদের নিয়ে কোন মন্তব্য করা আমার সাধ্যের বাইরে।
গাংনী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।