ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলা সাবেক মেয়র মুক্তির জামিনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে : আইনমন্ত্রী

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৪:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩
  • 125

অনলাইন ডেস্ক : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি টাঙ্গাইলের সাবেক পৌরমেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিএনপির নেতাকর্মীদের জামিন ও বিচারের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না সরকার। তাদের দাবির সত্যতা নেই। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর একটা ৪৭ মিনিটে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তার খাস কামরায় সাক্ষাত করেন আইনমন্ত্রী। ২৫ মিনিটের বৈঠকে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে এ বিষয়ে মুখ খোলেননি তিনি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘এটা ছিলো পুরোপুরি সৌজন্য সাক্ষাত।’

সহিদুর টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে। তার ভাই আমানুর রহমান খান রানা ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।

মামলার বরাতে এপিপি মনিরুল বলেন, হত্যা মামলায় ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছিলেন সহিদুর। পরে মামলার বাদী অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ বর্ধিত না করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে একই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত জামিন বাতিলের আদেশ দেয়। এরপর থেকে সহিদুর কারাগারে ছিলেন।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি কলেজপাড়ায় নিজ বাসার পাশ থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ২০১৪ সালের অগাস্টে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে আদালতে তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে হত্যার সঙ্গে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান খান কাকন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। এরপর তারা আত্মগোপনে চলে যান।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ আমানুর রহমান খান ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। ছয় বছর পলাতক থাকার পর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সহিদুর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিকে টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার আসামি সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি। কারাগারে আছেন কয়েক বছর ধরে। গত আগস্টে তাকে জামিন না দিয়ে এ মামলা ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশনা দিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কিন্তু এ নির্দেশনা গোপন রেখে হাইকোর্টে ওই আসামির জামিন চাওয়া হয়। গত ২০ নভেম্বর মুক্তিকে জামিন দেন বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এই জামিন আদেশ কারাগারে পৌছানোর পর গত বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে কারাগার থেকে মুক্তি পান হত্যা মামলার এই আসামি। এদিকে এই আসামির মুক্তিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে সরকারের শীর্ষ মহলে। কীভাবে এই আসামি জামিনে মুক্তি পেল তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘গত বুধবার দুপুরে বিষয়টি জানার পর দেখলাম মামলাটি টাঙ্গাইল জেলার হলেও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় ঢাকার জেলার নাম উল্লেখ করা রয়েছে। শুধু জেলার নাম ভুলই নয়, আসামির নামও ভুল লেখা হয়েছে। ছিল না কোন টেন্ডার নম্বর। জামিন চাইতে পারেন যে কোনো আসামি। কারণ এটা আসামির অধিকার। জামিন পেতেও পারেন। তবে এভাবে ভুল তথ্য দিয়ে জামিন হাসিল করাটা কতটা ন্যায়সঙ্গত।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, ‘আপিল বিভাগ এই আসামিকে জামিন না দিয়ে মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিল বিচারিক আদালতকে। কিন্তু এই তথ্য গোপন রেখে হাইকোর্ট থেকে জামিন হাসিল করেছে আসামি পক্ষ।’

উল্লেখ্য- এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের কাছে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এতে জামিন স্থগিত চাওয়া হয়েছে। বুধবার আবেদনটি শুনানির জন্য পেশ করা হলে মুক্তির আইনজীবী আদালতকে জানান যে আসামি কারামুক্তি পেয়েছেন। এরপরই আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখেছে আদালত।’

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলা সাবেক মেয়র মুক্তির জামিনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে : আইনমন্ত্রী

আপডেট সময় ০৪:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি টাঙ্গাইলের সাবেক পৌরমেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির জামিনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিএনপির নেতাকর্মীদের জামিন ও বিচারের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না সরকার। তাদের দাবির সত্যতা নেই। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর একটা ৪৭ মিনিটে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তার খাস কামরায় সাক্ষাত করেন আইনমন্ত্রী। ২৫ মিনিটের বৈঠকে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে এ বিষয়ে মুখ খোলেননি তিনি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘এটা ছিলো পুরোপুরি সৌজন্য সাক্ষাত।’

সহিদুর টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের ছেলে। তার ভাই আমানুর রহমান খান রানা ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।

মামলার বরাতে এপিপি মনিরুল বলেন, হত্যা মামলায় ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছিলেন সহিদুর। পরে মামলার বাদী অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ বর্ধিত না করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে একই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত জামিন বাতিলের আদেশ দেয়। এরপর থেকে সহিদুর কারাগারে ছিলেন।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি কলেজপাড়ায় নিজ বাসার পাশ থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ২০১৪ সালের অগাস্টে আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে আদালতে তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে হত্যার সঙ্গে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী জাহিদুর রহমান খান কাকন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। এরপর তারা আত্মগোপনে চলে যান।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ আমানুর রহমান খান ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। ছয় বছর পলাতক থাকার পর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সহিদুর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিকে টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার আসামি সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি। কারাগারে আছেন কয়েক বছর ধরে। গত আগস্টে তাকে জামিন না দিয়ে এ মামলা ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশনা দিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কিন্তু এ নির্দেশনা গোপন রেখে হাইকোর্টে ওই আসামির জামিন চাওয়া হয়। গত ২০ নভেম্বর মুক্তিকে জামিন দেন বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এই জামিন আদেশ কারাগারে পৌছানোর পর গত বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে কারাগার থেকে মুক্তি পান হত্যা মামলার এই আসামি। এদিকে এই আসামির মুক্তিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে সরকারের শীর্ষ মহলে। কীভাবে এই আসামি জামিনে মুক্তি পেল তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘গত বুধবার দুপুরে বিষয়টি জানার পর দেখলাম মামলাটি টাঙ্গাইল জেলার হলেও হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় ঢাকার জেলার নাম উল্লেখ করা রয়েছে। শুধু জেলার নাম ভুলই নয়, আসামির নামও ভুল লেখা হয়েছে। ছিল না কোন টেন্ডার নম্বর। জামিন চাইতে পারেন যে কোনো আসামি। কারণ এটা আসামির অধিকার। জামিন পেতেও পারেন। তবে এভাবে ভুল তথ্য দিয়ে জামিন হাসিল করাটা কতটা ন্যায়সঙ্গত।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, ‘আপিল বিভাগ এই আসামিকে জামিন না দিয়ে মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিল বিচারিক আদালতকে। কিন্তু এই তথ্য গোপন রেখে হাইকোর্ট থেকে জামিন হাসিল করেছে আসামি পক্ষ।’

উল্লেখ্য- এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের কাছে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এতে জামিন স্থগিত চাওয়া হয়েছে। বুধবার আবেদনটি শুনানির জন্য পেশ করা হলে মুক্তির আইনজীবী আদালতকে জানান যে আসামি কারামুক্তি পেয়েছেন। এরপরই আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য রেখেছে আদালত।’