ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘স্বতন্ত্র’ নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন বিএনপির সাবেক ৩ নেতা এবং মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে এলাকায়

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩
  • 124
অনলাইন ডেস্ক : এক দফার আন্দোলনে বিএনপি যখন রাজপথে তখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বগুড়ায় দলটির সাবেক তিন নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তারা স্বতন্ত্র নাকি নতুন কোনো দল থেকে নির্বাচন করবেন তা স্পষ্ট করেননি। ইতিমধ্যে এই তিন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে এলাকায় এবং চায়ের আড্ডায়।
বিএনপির সাবেক ওই নেতারা হলেন-জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শোকরানা, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল এবং জেলা বিএনপির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম।
এর মধ্যে মোহাম্মদ শোকরানা বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা), বিউটি বেগম বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) ও সরকার বাদল বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বগুড়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান ওই তিন নেতার মনোনয়নপত্র নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গুঞ্জন উঠেছে, সরকার বাদল ও বিউটি বেগম বিএনএম থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। যদিও সরকার বাদল ও মোহাম্মদ শোকরানা স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে বগুড়া-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ শোকরানা। বগুড়ার তিন তারকা হোটেল নাজ গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী শোকরানা পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এতে ব্যর্থ হয়ে ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর তিনি স্বেচ্ছায় বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শোকরানা পদত্যাগপত্রে লিখেছিলেন, ‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে দলের সব পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। এখন থেকে বিএনপির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
সূত্র জানায়, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালে বগুড়ার নেতৃত্বে থাকা শোকরানা ১৯৯৯ সালে তারেক রহমানের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। পরে তিনি জেলা বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। সরকার বাদল নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০৩ সালে তিনি সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি হন। পরে সদর উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে শাজাহানপুর উপজেলা গঠিত হলে ২০১৪ সালে বিএনপির সমর্থনে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে পাননি তিনি। সর্বশেষ ২০২২ সালে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন।
বিউটি বেগম নিজ এলাকা শিবগঞ্জে দেড় দশক আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। একপর্যায়ে তিনি বগুড়া জেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিউটি বেগম ২০১৪ সালে দলের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। তবে ২০১৮ সালে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ওই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলে তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সাবেক বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শোকরানা বলেন, ‘বিএনপির জন্য অনেক কিছু করেছি। কিন্তু আমাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। এমনকি ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এসব কারণে চার বছর আগে আমি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছি। আমার বয়স এখন ৭৪ বছর। এর পরের (ত্রয়োদশ সংসদ) নির্বাচন আসতে আসতে শারীকিভাবে সক্ষম থাকব কি না, জানি না। যেহেতু দলীয়ভাবে সম্ভব হলো না সেজন্য এবার (দ্বাদশ সংসদ) স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সরকার বাদল বলেন, ‘আমি বিএনপিতে ছিলাম। ভবিষ্যতে থাকতে পারব কি না সেটা সময়ের ব্যাপার।’ বিএনএমের হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম থেকে আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে আপাতত স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন বিউটি বেগম। তিনি বলেন, ‘কত দলই তো কথা বলছে। দেখা যাক কী হয়।’ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর হেনা বলেন, সরকার বাদলকে অনেক আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি এখন বিএনপির কেউ নন। 

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

‘স্বতন্ত্র’ নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন বিএনপির সাবেক ৩ নেতা এবং মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে এলাকায়

আপডেট সময় ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩
অনলাইন ডেস্ক : এক দফার আন্দোলনে বিএনপি যখন রাজপথে তখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বগুড়ায় দলটির সাবেক তিন নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তারা স্বতন্ত্র নাকি নতুন কোনো দল থেকে নির্বাচন করবেন তা স্পষ্ট করেননি। ইতিমধ্যে এই তিন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে এলাকায় এবং চায়ের আড্ডায়।
বিএনপির সাবেক ওই নেতারা হলেন-জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শোকরানা, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল এবং জেলা বিএনপির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম।
এর মধ্যে মোহাম্মদ শোকরানা বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা), বিউটি বেগম বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) ও সরকার বাদল বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বগুড়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান ওই তিন নেতার মনোনয়নপত্র নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গুঞ্জন উঠেছে, সরকার বাদল ও বিউটি বেগম বিএনএম থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। যদিও সরকার বাদল ও মোহাম্মদ শোকরানা স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে বগুড়া-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ শোকরানা। বগুড়ার তিন তারকা হোটেল নাজ গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী শোকরানা পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এতে ব্যর্থ হয়ে ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর তিনি স্বেচ্ছায় বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শোকরানা পদত্যাগপত্রে লিখেছিলেন, ‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে দলের সব পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। এখন থেকে বিএনপির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
সূত্র জানায়, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালে বগুড়ার নেতৃত্বে থাকা শোকরানা ১৯৯৯ সালে তারেক রহমানের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। পরে তিনি জেলা বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। সরকার বাদল নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০৩ সালে তিনি সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি হন। পরে সদর উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে শাজাহানপুর উপজেলা গঠিত হলে ২০১৪ সালে বিএনপির সমর্থনে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে পাননি তিনি। সর্বশেষ ২০২২ সালে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন।
বিউটি বেগম নিজ এলাকা শিবগঞ্জে দেড় দশক আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। একপর্যায়ে তিনি বগুড়া জেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিউটি বেগম ২০১৪ সালে দলের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। তবে ২০১৮ সালে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ওই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলে তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সাবেক বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শোকরানা বলেন, ‘বিএনপির জন্য অনেক কিছু করেছি। কিন্তু আমাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। এমনকি ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এসব কারণে চার বছর আগে আমি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছি। আমার বয়স এখন ৭৪ বছর। এর পরের (ত্রয়োদশ সংসদ) নির্বাচন আসতে আসতে শারীকিভাবে সক্ষম থাকব কি না, জানি না। যেহেতু দলীয়ভাবে সম্ভব হলো না সেজন্য এবার (দ্বাদশ সংসদ) স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সরকার বাদল বলেন, ‘আমি বিএনপিতে ছিলাম। ভবিষ্যতে থাকতে পারব কি না সেটা সময়ের ব্যাপার।’ বিএনএমের হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম থেকে আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে আপাতত স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এদিকে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন বিউটি বেগম। তিনি বলেন, ‘কত দলই তো কথা বলছে। দেখা যাক কী হয়।’ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর হেনা বলেন, সরকার বাদলকে অনেক আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি এখন বিএনপির কেউ নন।