সিনিয়র রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের যৌক্তিক কারণ দেখছি না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, আমাদের নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ। সুতরাং নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোন যৌক্তিক কারণ আমরা দেখছি না। বরং যারা সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার পথ বেছে নিয়েছেন তাদের ওপরই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক আন্দোলন ব্যর্থ। এখন তারা আগুন দিচ্ছে।’
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এবার যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামীকাল (১০ ডিমেস্বর) রবিবার মানবাধিকার দিবস ও মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ৭৫তম বার্ষিকীর প্রাক্কালে শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও অর্থ বিষয়ক দপ্তর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। ভিসা বিধি-নিষেধ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় পড়া ৩৭ ব্যক্তি আফগানিস্তান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো, হাইতি, ইরান, লাইবেরিয়া, চীন, সুদান, দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা, জিম্বাবুয়ে, সিরিয়া ও জিম্বাবুয়ের নাগরিক। ২০২১ সালের এই সময়ে বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মানবাধিকার দিবসের কর্মসূচির নামে নাশকতার ছক কষছে বিএনপি। কর্মসূচির নামে যাতে তারা নাশকতা করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ব্যর্থ আন্দোলন করেই বিএনপি ক্ষ্যান্ত হয়নি। এখন তারা সন্ত্রাসী পথ বেছে নিয়েছে। যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে, তারা ১৫ ও ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড এবং জোট সরকারের নিপীড়নের কথা বলেন না। এ দেশে মানবাধিকারের ইতিহাস বড়ই ট্র্যাজিক। ১৫ আগস্টে সপরিবারে অবলা নারী, অবুঝ শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীকে বর্বরোচিত যে হত্যাকাণ্ড এ ব্যাপারে তাদের অনেককেই দেখেছি নীরব। তাদের অনেকেই স্বৈরশাসকদের তাবেদারি করেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বের সব দেশের রাজনৈতিক অভিযোগের বিষয়টা তো জাতিসংঘের কাছেই যায়। কিছু কিছু চাপের ব্যাপার নিশ্চয়ই আছে, তা না-হলে এত কিছু হলো কেন? বাংলাদেশে গত কয়েক মাস কত রকমের ঘটনা ঘটেছে। এই নিষেধাজ্ঞা আসলো-আসলো এমন কথা চলছিল। এসব বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘকে জানিয়ে রাখলেন, আমরা ভালো নির্বাচন করতেছি। কোনও অসুবিধা নেই, অহেতুক কেউ যেন আমাদেরকে চাপ না দেয়।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৯ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে মানবাধিকার কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে। আওয়ামী লীগ মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জন্মলগ্ন থেকেই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাসানী থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আজকে শেখ হাসিনা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই অব্যাহত রেখেছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা প্রমুখ।
প্রসঙ্গত- যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ও কানাডাকে সঙ্গে নিয়ে এসব নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং ক্ষতিকর মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলোর কয়েকটি মোকাবেলা করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সংঘাতসম্পর্কিত যৌন সহিংসতা, জোরপূর্বক শ্রম ও আন্তর্দেশীয় নিপীড়ন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত রাখবে।