ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে জাপার ফের বৈঠক

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
  • 130

সিনিয়র রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনের বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে আজ (১০ ডিসেম্বর) রাতে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগ। সংসদ ভবন এলাকায় অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতার বিষয়টি আজকালের মধ্যে ফয়সালা হতে পারে।

‘এবার আমরা কোনো আসন সমঝোতায় যাব না। আমরা এককভাবেই লাঙ্গল নিয়ে প্রায় ৩০০ আসনে নির্বাচন করব, এটা আমাদের রাজনৈতিক কৌশল’- বেশ কয়েক দিন যাবত জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমন কথা বলে আসলেও গত তিন বারের মতো এবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেই নির্বাচনে যেতে চায় দলটি। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত বিভিন্ন মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ও কথাবার্তা চলে আসছিল।

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে গুলশানে একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েক নেতার সঙ্গে প্রথম বার আনুষ্ঠানিকভাবে দীর্ঘ বৈঠক করেন জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও দলটির নেতাদের মধ্যে ছিলেন মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আবারও বৈঠক করেছেন জাপার এই নেতারা।

শনিবার বৈঠকের আগে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আলোচনা চলছে। আরো আলোচনা হবে। যে কোনো সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠক হতে পারে।’ আসন সমঝোতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আলোচনা হচ্ছে, কিছু জটিলতা আছে, আশা করছি দুই-এক দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।’

আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘জাপা যে আসনগুলোতে ছাড় পাবে, সেখানে নৌকা প্রতীক না রাখার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সায় রয়েছে। তবে আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের রাখা-না রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়নি।’

জাপার দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা যায়, জাপা ৩৫ থেকে ৫০টি আসনে ছাড় দাবি করলেও আওয়ামী লীগ প্রথমে ১০-১৫টিতে ছাড় দিতে রাজি হয়। বুধবারের বৈঠকে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। জাপার প্রস্তাব অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ যে কয়টি আসনে ছাড় দেবে, সেগুলোতে ‘নৌকা’ প্রতীক রাখা হবে না, এ ব্যাপারে দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে। যেসব আসনে ছাড় দেওয়া হবে, সেখানে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও রাখা যাবে না- জাপার পক্ষ থেকে এমন দাবিও তোলা হয়। তবে বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি। শনিবার বৈঠকে যাওয়ার আগে জাপা ৪৫ জনের একটি তালিকা করেছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের কাছে তালিকাটি হস্তান্তর করা হয়। তাদের দাবি, ৩৫ থেকে ৪০টি আসনে ছাড় পাওয়ার আশা করছে জাপা।

বুধবারের মতো শনিবারের বৈঠকেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাপাকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের আলোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ীই সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে।

বর্তমানে একাদশ সংসদে জাপার আসন রয়েছে ২৬টি। এর মধ্যে ২২ জন সরাসরি নির্বাচিত আর চার জন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য। বর্তমানের ২২টিসহ ৩৫ থেকে ৫০টি আসনে ছাড় দাবি করেছে জাপা। কোন আসনে জাপা কেন ছাড় চায়, সে ব্যাপারে আসন ধরে ধরে দলটির পক্ষ থেকে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগও কোন কোন আসনে কেন এবার ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়, সেই যুক্তি উপস্থাপন করে। এই ইস্যুতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাপাকে বলা হয়েছে, এবার নতুন-পুরোনো বিভিন্ন নিবন্ধিত ছোট ছোট দল ও জোট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, বিএনপির সাবেক কয়েক জন এমপিও অংশ নিচ্ছেন। তাদেরও আসন ছাড় দেওয়ার বিষয় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত জাপাকে যে কয়টি আসনেই ছাড় দেওয়া হোক না কেন, সেগুলোতে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে নিজেদের প্রার্থী রাখবে না। এর বাইরে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া জাপার অন্য প্রার্থীদের দলীয় ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে এবং নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হলে জাপা তাতে সায় দিয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় কিছু বিষয় আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা

আজ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে জাপার ফের বৈঠক

আপডেট সময় ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

সিনিয়র রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনের বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে আজ (১০ ডিসেম্বর) রাতে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগ। সংসদ ভবন এলাকায় অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতার বিষয়টি আজকালের মধ্যে ফয়সালা হতে পারে।

‘এবার আমরা কোনো আসন সমঝোতায় যাব না। আমরা এককভাবেই লাঙ্গল নিয়ে প্রায় ৩০০ আসনে নির্বাচন করব, এটা আমাদের রাজনৈতিক কৌশল’- বেশ কয়েক দিন যাবত জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমন কথা বলে আসলেও গত তিন বারের মতো এবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেই নির্বাচনে যেতে চায় দলটি। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত বিভিন্ন মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ও কথাবার্তা চলে আসছিল।

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে গুলশানে একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েক নেতার সঙ্গে প্রথম বার আনুষ্ঠানিকভাবে দীর্ঘ বৈঠক করেন জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও দলটির নেতাদের মধ্যে ছিলেন মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আবারও বৈঠক করেছেন জাপার এই নেতারা।

শনিবার বৈঠকের আগে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আলোচনা চলছে। আরো আলোচনা হবে। যে কোনো সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠক হতে পারে।’ আসন সমঝোতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আলোচনা হচ্ছে, কিছু জটিলতা আছে, আশা করছি দুই-এক দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।’

আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘জাপা যে আসনগুলোতে ছাড় পাবে, সেখানে নৌকা প্রতীক না রাখার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সায় রয়েছে। তবে আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের রাখা-না রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়নি।’

জাপার দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা যায়, জাপা ৩৫ থেকে ৫০টি আসনে ছাড় দাবি করলেও আওয়ামী লীগ প্রথমে ১০-১৫টিতে ছাড় দিতে রাজি হয়। বুধবারের বৈঠকে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। জাপার প্রস্তাব অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ যে কয়টি আসনে ছাড় দেবে, সেগুলোতে ‘নৌকা’ প্রতীক রাখা হবে না, এ ব্যাপারে দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে। যেসব আসনে ছাড় দেওয়া হবে, সেখানে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও রাখা যাবে না- জাপার পক্ষ থেকে এমন দাবিও তোলা হয়। তবে বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি। শনিবার বৈঠকে যাওয়ার আগে জাপা ৪৫ জনের একটি তালিকা করেছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের কাছে তালিকাটি হস্তান্তর করা হয়। তাদের দাবি, ৩৫ থেকে ৪০টি আসনে ছাড় পাওয়ার আশা করছে জাপা।

বুধবারের মতো শনিবারের বৈঠকেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাপাকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের আলোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ীই সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে।

বর্তমানে একাদশ সংসদে জাপার আসন রয়েছে ২৬টি। এর মধ্যে ২২ জন সরাসরি নির্বাচিত আর চার জন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য। বর্তমানের ২২টিসহ ৩৫ থেকে ৫০টি আসনে ছাড় দাবি করেছে জাপা। কোন আসনে জাপা কেন ছাড় চায়, সে ব্যাপারে আসন ধরে ধরে দলটির পক্ষ থেকে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগও কোন কোন আসনে কেন এবার ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়, সেই যুক্তি উপস্থাপন করে। এই ইস্যুতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাপাকে বলা হয়েছে, এবার নতুন-পুরোনো বিভিন্ন নিবন্ধিত ছোট ছোট দল ও জোট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, বিএনপির সাবেক কয়েক জন এমপিও অংশ নিচ্ছেন। তাদেরও আসন ছাড় দেওয়ার বিষয় রয়েছে। শেষ পর্যন্ত জাপাকে যে কয়টি আসনেই ছাড় দেওয়া হোক না কেন, সেগুলোতে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে নিজেদের প্রার্থী রাখবে না। এর বাইরে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া জাপার অন্য প্রার্থীদের দলীয় ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে এবং নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হলে জাপা তাতে সায় দিয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় কিছু বিষয় আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।