নির্বাচনী হলফনামা শূন্য থেকে কোটিপতি প্রতিমন্ত্রী পলক ও তার স্ত্রী
-
ডেস্ক :
-
আপডেট সময়
০৩:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩
- 146
অনলাইন ডেস্ক : ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীকে জুনাইদ আহমেদ পলক যখন প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করেছিলেন, তখন তার এবং তার স্ত্রীর তেমন কোনো সঞ্চয় ছিল না। প্রথমবার ধার-দেনার টাকায় নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সেবার জুনাইদ আহমেদ পলক তার হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ (টাকা, সোনা ইত্যাদি) দেখিয়েছিলেন ২ লাখ টাকার কিছু বেশি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সেই আয় বেড়েছে ১২ গুণ। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সে সময় প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকার নামে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ ছিল। এখন ৬ গুণ বেড়ে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার সম্পদ হয়েছে। রয়েছে ৩০ ভরি সোনাসহ কিছু ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম। এবারের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জন্য দাখিল করা হলফ নামায় এসব তথ্য উপস্থাপন করেছেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
জানা গেছে, নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালের আরও একটি নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হন তিনি। এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তাকে একই আসনে নৌকা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। হলফনামা ঘেঁটে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, জুনাইদ আহমেদ হলফ নামায় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে স্নাতকোত্তর উল্লেখ্য করেছেন। পেশা আইনজীবী। তার বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি মামলা থেকে অব্যহতি পেয়েছেন এবং নথিজাত অবস্থায় রয়েছে একটি।
পলক ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে স্থাপনা ভাড়া, আইন পেশা ও কৃষি খাত থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এখন তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৩২ লাখ টাকার বেশি। তবে আয়ের খাত বেড়েছে। এই আয়ের ২১ লাখ টাকার মতো এসেছে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া সম্মানী থেকে। এ ছাড়া ৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা তার আয় দেখানো হয়েছে ব্যাংক জমা এবং সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে। ২ লাখ ২ হাজার টাকা তিনি আয় করেছেন টকশো থেকে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ধারদেনা করে খরচ জোগানো জুনাইদ আহমেদ পলকের ব্যাংকে ছিল ২০ হাজার এবং স্ত্রীর ছিল ১০ হাজার টাকা। এখন তার নিজের নামে ৪ কোটি ৭১ লাখ ৮২ হাজার ৪৪৫ টাকার হিসাব দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে তার স্ত্রীর বার্ষিক আয় ৮৪ হাজার থেকে এখন হয়েছে ১৯ লাখ টাকা। এসব আয়ের খাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে কৃষি, স্থাপনা ভাড়া এবং সঞ্চয়পত্রের মতো বিনিয়োগ।
এবারের হলফনামায় দেওয়া তথ্য মতে, পলকের হাতে নগদ রয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে ১০ হাজার মার্কিন ডলার, ব্যাংকে জমা আছে প্রায় ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনা আছে। ৯৫ লাখ টাকার মতো ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রয়েছে। এছাড়া প্রতিমন্ত্রীর ২লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের একটি শটগান ও একটি পিস্তল রয়েছে। স্ত্রীর নামে নগদ প্রায় ৪৬ লাখ টাকা, ব্যাংকে ৫৪ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র ৪৫ লাখ টাকা এবং স্থায়ী আমানত প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা দেখিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
২০০৮ সালের হলফনামা বলছে, সে সময় কৃষি জমি ১ বিঘা, অকৃষিজমি ১৮ শতাংশ এবং একটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক ছিলেন। এখন জুনাইদ আহমেদ পলকের নামে কৃষি জমি হয়েছে ২৪৩ শতাংশ। পলক তার স্ত্রীর বাড়িতে বিনিয়োগ করেছেন ২০ লাখ টাকা। হলফনামায় পৈতৃক দোতলা বাড়ির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া পলক একটি ১০ কাঠার প্লট পেয়েছেন ঢাকার পূর্বাচলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছ থেকে। প্রায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ঋণ দেখানো হয়েছে। এই ঋণটি তিনি নিয়েছিলেন গাড়ি কেনার জন্য।
তবে ২০০৮ সালে প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী কনিকার কোনো কৃষিজমি ছিল না। অকৃষিজমি ছিল ১৫ শতাংশ। কিন্তু এখন তার কৃষি হয়েছে ৯০০ শতাংশ। অকৃষিজমি দেখানো হয়েছে ১৩৭ শতাংশ। রয়েছে ঢাকার শেওড়াপাড়ায় দুটি দোকানও। এ ছাড়া স্বামীর বাড়িতে বিনিয়োগ রয়েছে ৫০ লাখ টাকা। এবং ঢাকায় ১ হাজার ৭২০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের মালিক তিনি।
হলফনামা অনুযায়ী শূন্য সঞ্চয়ের সেই জুনাইদ আহমেদ পলক এখন মালিক হয়েছেন কয়েক কোটি টাকার। তার স্ত্রীও হয়েছেন কোটি টাকার মালিক। সব মিলিয়ে স্বামী-স্ত্রীর ভূসম্পত্তি বেড়েছে বহুগুণ।
ট্যাগস