সিনিয়র রিপোর্টার : বিএনপি এখন দিশেহারা হয়ে অসহযোগ কর্মসূচি দিয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করেও নির্বাচনের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আমেজকে ম্লান করতে পারেনি। অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ডাক ফিউজ হয়ে গেছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরাই এই অসহযোগ কর্মসূচিতে তাদের সহযোগিতা করছে না।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুর লেনের ওয়াইএনটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয়ে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এতে করে প্রতি আসনে গড়ে সাড়ে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যে সমস্ত বিদেশিদের কাছে বিএনপি বারে বারে ধরনা দিত, সেই বিদেশিরাও এখন নির্বাচন যাতে সুষ্ঠ হয়, নির্বাচনে যাতে কেউ বাধা না দেয়, সেই কথাই বলছে। অর্থাৎ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার, নির্বাচনকালীন সরকার, এই সমস্ত বিষয় এখন আর নাই। এখন নির্বাচনটা কিভাবে সুষ্ঠ করা প্রয়োজন সেটি নিয়েই সবাই পরামর্শ দিচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, শুক্রবার এবং এর আগেও জাতিসংঘের বিবৃতি এবং ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে- নির্বাচনে যাতে কেউ বাধা না দেয়, অর্থাৎ সহিংসতা না হয়। একইসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে- দেশে একটি সুষ্ঠ ও সুন্দর নির্বাচন তারা দেখতে চাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন নির্বাচনকালে যেন কেউ সহিংসতা না করে এবং অবাধ ও সুষ্ঠভাবে নির্বাচন করার জন্য। সেজন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ সহায়তা করছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠ ও উৎসবমুখর হবে এটি অনুধাবন করতে পেরে বিএনপি তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অগ্নিসন্ত্রাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছে। তারা এখন ট্রেনে হামলা চালানো শুরু করেছে, কয়েকদিন আগে যেভাবে ট্রেনে ঘুমন্ত মানুষের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মা এবং শিশু সন্তানসহ চারজনকে হত্যা করেছে এগুলো মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, সেটি যত না নৃশংস ও বীভৎস ছিল, তার চেয়েও নৃশংস ও বীভৎস মিথ্যাচার করেছে বিএনপি নেতা রিজভী আহমেদসহ অন্যরা।
এরইমধ্যে চট্টগ্রামের কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটেছে, সামনে আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যে বা যারা করছে তারা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছে। নির্বাচন কমিশন সে ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আমাদের দলেরও কেউ করলে সেটি আমরা বরদাস্ত করব না। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।
নির্বাচনের দিন জনগণকে ভোটকেন্দ্রে না আসার জন্য লিফলেট বিতরণসহ প্রচারণা চালাচ্ছে বিএনপি, এটি কাটিয়ে জনগণকে কিভাবে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসবেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির এ ধরনের লিফলেট বিতরণ করে মূলত ঢাকা শহরে ফটোসেশন করা হয়। সকালে যখন মানুষ ঘুম থেকে উঠে না, তখন দৌড় দিয়ে একটা মিছিল করা হয়, আর একটা ছবি তোলা হয়। এগুলোর কোন ইমপ্যাক্ট নির্বাচনে নাই।
চট্টগ্রাম মেডিকেলে আইসিইউ বেডের সংকট রয়েছে, আগামী ২৭ তারিখ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের জন্য সেখানে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার প্রতিটি জেলা শহরে আইসিইউ বেড স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অনেক জেলা শহরেও স্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেলের জন্য একটি বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, সেটি হলে সেখানে শুধু আইসিইউ নয়, সমস্ত সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, স্বাস্থ্য সেবার সাথে যুক্ত একটি চক্র চায় না সরকারি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাক। তারা মনে করে, সরকারি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলে যেসব প্রাইভেট ক্লিনিক, হাসপাতাল আছে সেগুলোর ব্যবসা কমে যাবে। তাছাড়া পত্র-পত্রিকায়ও রিপোর্ট বেরিয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন মেডিকেলে ইকুইপমেন্ট কেনা হয়েছে, সেগুলো বছরের পর বছর তালাবদ্ধ থাকার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। সরকার কিনে দেয়ার পরও যারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে চাই না, সেগুলোকে চালু করে না, এরা আসলে জনগণের বিপক্ষে কাজ করছে, এবং এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।