সিনিয়র রিপোর্টার : গণমাধ্যমের অগ্রযাত্রায় স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা উভয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা ছাড়া গণতন্ত্র সুরক্ষা পাবে না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই গণমাধ্যমেরর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের ভিআইপি কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ নিউজ এডিটরস গিল্ড (বিএনইজি)’র বর্ষপূর্তি ও ‘স্বাধীনতা সুরক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমের কর্মীরা প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন সে জন্য তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। একটি অবাধ ও মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বাধ্য করেন। তাই তারা যাতে অবাধে কাজ করতে পারেন এবং সত্যকে সামনে নিয়ে আসতে পারেন তা নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দেশের গণমাধ্যমের শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। সারাদেশে বিদ্যুৎ, উচ্চগতির ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, অসংখ্যা টিভি চ্যানেলের সহজলভ্যতা তথ্যকে জনগণের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। এখন আর কেউ ইচ্ছে করলেই তথ্য গোপন করতে পারবে না। আর এ অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন করে নীতিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করলে একটি সমাজ আরও সমৃদ্ধ হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বেশি তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশি। এর কারণ মুক্ত সংবাদ প্রচার দায়বদ্ধতা বাড়ায়। এটি দুর্নীতি কমাতে সাহায্য করে এবং ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলে। সাংবাদিকদের অবশ্যই তথ্যে অ্যাক্সেস থাকতে হবে। তাদের উৎস রক্ষা করতে সক্ষম হতে হবে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মূল্যকে স্বীকৃতি দেয়া, রক্ষা তথা সুরক্ষার দায়িত্ব প্রত্যেকের রয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এতে সরকার, মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা-সবার সমান দায়িত্ব। তিনি বলেন, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রচারের জন্য স্বাধীন সংবাদপত্র অপরিহার্য। সাংবাদিকরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ এবং জবাবদিহিতা প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বিএনইজি’র সভাপতি বাদল চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আনজুমান আরা শিল্পী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনইজি’র নির্বাহী সদস্য আলী আশরাফ আখন্দ।
দৈনিক বাংলাদেশের আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মো. মফিজুর রহমান খান বাবু বলেন, দেশের উন্নয়নে স্বাধীন গণমাধ্যমে ও গণমুখী সাংবাদিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। একটি গণতান্ত্রিক সরকার গৃহীত উন্নয়ন কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যমের এ ভূমিকা ক্ষেত্রবিশেষে নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে হলুদ সাংবাদিকতা, অপসাংদিকতার মতো সমস্যার কারণে। গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রসারের সুবিধা নিয়ে সুবিধাবাদীচক্র অসত্য, বিকৃত ও উদেশ্যমূলক তথ্য মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে দেখা যায়। সাংবাদিক সমাজ ও সংবাদ মাধ্যমের সমস্যা দূর করে সাংবাদিকতাকে সত্যিকার অর্থে কল্যাণমুখী করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে এবং একই ধরনের নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে।
দৈনিক রূপবানীর সম্পাদক ও প্রকাশক ফারুক আহমেদ বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যম একে অপরের পরিপূরক। গণমাধ্যম ব্যতিরেকে গণতন্ত্র হতে পারে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা ব্যতিরেকে গণতন্ত্র কখনো পথ চলতে পারে না, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। সে কারণে গণতন্ত্রকে সংহত করতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই প্রয়োজন।
দৈনিক মাতৃভূমির খবরের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান (তোফায়েল) বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় মিডিয়া জনসাধারণকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে উৎসাহ দেয়, বর্ণ, ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শেখায়।
বাংলাদেশ গ্রিন পার্টির চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গণমাধ্যমের সঠিক চর্চা যেমন গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারে তেমনি প্রকৃত গণতন্ত্র পারে গণমাধ্যমকে স্বাধীন রাখতে। স্বাধীন গণমাধ্যম যে কোনো সরকারের সেরা বন্ধু। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচক হিসেবে ধরা হয়।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)’র সাবেক জনকল্যাণ সম্পাদক সোহেলী চৌধুরী বলেন, একটি জাতির উন্নয়নের পথের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো গণমাধ্যম। একজন বিবেকবান এবং সচেতন সংবাদকর্মী একটি জাতির জন্য অন্যতম পথপ্রদর্শক, যার সাথে সহায়ক ভূমিকা পালন করে একটি স্বাধীন গণমাধ্যম। অবহেলিত, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কিংবা জনপদের সমস্যা, প্রতিকার এবং সম্ভাবনা লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরা, অনগ্রসর ও অসচেতন জনগোষ্ঠীর চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানো, তাদের জনশক্তিতে পরিণত করা, নতুন চিন্তা, ধারণা, উদ্ভাবনী শক্তির প্রচার-প্রসার ঘটিয়ে জাতিকে আলোর পথ দেখানোর সহায়ক ভূমিকা পালন করে গণমাধ্যম।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্ট সাংবাদিক হরলাল রায় সাগর, অগ্রণী বার্তার সহকারী সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম খান, বিশিষ্ট সাংবাদিক মফিজুল ইসলাম, সাংবাদিক আফরোজা আক্তার, বিশিষ্ট গায়িকা মেহেরুন আশরাফ, ফাহিম প্রমুখ। কেক কাটার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
উল্লেখ্য, গত বছর সভাপতি বাদল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আনজুমান আরা শিল্পীকে নিয়ে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বিএনইজি ইতোমধ্যে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, পিঠা উৎসব, ঈদ পুনর্মিলনী, শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।