খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে
-
ডেস্ক :
-
আপডেট সময়
০৩:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৪
- 163
অনলাইন ডেস্ক : বোতলজাত সয়াবিন তেলের পর খুচরা বাজারে এবার বাড়ানো হয়েছে খোলা ভোজ্যতেলের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। আর খোলা পাম তেলের দাম বেড়েছে লিটারে পাঁচ টাকার মতো। নির্বাচনের আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকায় বাজারে ছেড়েছিল ভোজ্যতেলের কোম্পানিগুলো।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল মঙ্গলবারের বাজারদর প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিনের দাম এখন প্রতি লিটার ১৫৮ থেকে ১৬৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এই তেল কেনা গেছে প্রতি লিটার ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা দামে। টিসিবির তথ্যানুসারে, খোলা পাম তেলের বর্তমান দাম প্রতি লিটার ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে খোলা পাম তেলের দাম ছিল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা তেলের দাম প্রতি লিটার তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে।
ঢাকার দুটি বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা বাজারে খোলা তেল কমবেশি টিসিবির প্রকাশিত দামেই বিক্রি হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কোম্পানিগুলো সবশেষ গত সেপ্টেম্বরে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করেছিল। তখন প্রতি লিটার পাম তেলের দাম ঠিক করা হয় ১২৪ টাকা। আর এর এক মাসে আগে খোলা সয়াবিনের দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল প্রতি লিটার ১৫৪ টাকায়। তবে সরকারের সাথে সমন্বয় ছাড়াই কোম্পানিগুলো নির্বাচনের আগে বোতলজাত সয়াবিনের দাম চার টাকা বাড়িয়েছে। সেই হিসাবে বাজারে ভোজ্যতেলের নির্ধারিত কোন দরই এখন কার্যকর নেই।কারওয়ান বাজারের রব স্টোরের বিক্রেতা নাইম হাসান বলেন, চলতি সপ্তাহেই প্রতি ব্যারেল (২০৪ লিটার) খোলা সয়াবিন তেলের দাম পাইকারিতে ৫০০ টাকার মতো বেড়েছে। দাম এক মাস ধরে এই দাম ওঠানামার মধ্যে আছে। সাধারণত দাম নির্ধারণের পর কোম্পানিগুলো বোতলজাত তেলের গায়ে দাম লিখে দেয়।
গত এক বছরে বোতলজাত তেলের দাম মোটামুটিভাবে মোড়কে লেখা দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। দর নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও খোলা তেলের দাম মূলত নির্ভর করে ঢাকার মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মতো পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীদের ওপর। এই ব্যবসায়ীরা তেল মিল থেকে পাওয়া সরবরাহ আদেশ (এসও)–নির্ভর ব্যবসা করেন। পুরোনো ঢাকার ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, ‘বাজারে তেলের সরবরাহ ভালো। আমদানি পরিস্থিতিও অনেকটা স্বাভাবিক। তাই নতুন করে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা নেই।’
এসও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত বিক্রেতারা পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সরবরাহ করা খোলা তেল পাইকারি বাজারে বিক্রি করে। আর বোতলজাত তেল সরাসরি পরিবেশকদের মাধ্যমে বিক্রি করে কোম্পানিগুলো। দেশের পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো তেল বোতলে ভরে বিক্রিতে আগ্রহী। তবে পাইকারি তেল ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এতে তেলের বাজার পুরোটা কয়েকটি বড় কোম্পানির হাতে চলে যাবে। তাঁদের মতে, তেল বোতলজাতকরণে খরচ বাড়ে, যা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। সরকার অবশ্য খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করতে চায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে বাজারে প্রতি লিটার খোলা তেল ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামে ২০ টাকার মতো পার্থক্য থাকে। দামের ওঠা–নামার কারণে এখন অবশ্য এই পার্থক্য কিছুটা কমে এসেছে। দেশের ব্যবহৃত সয়াবিন তেলের ৬০ শতাংশের মতো এবং পাম তেলের ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশ খোলা অবস্থায় বিক্রি হয়। মূলত নিম্ন আয়ের মানুষই খোলা তেলের মূল ক্রেতা। ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী অনেকে ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার খোলা তেলও কিনে থাকেন।
কারওয়ান বাজারে কথা হচ্ছিল ক্রেতা নাসিমা খাতুনের সঙ্গে। তেজগাঁওয়ের এই বাসিন্দা বলেন, ‘দাম কম বলে আমরা খোলা তেল খাই। অন্য সময় এক লিটার করে কিনলেও দাম যখন বেশি বাড়ে তখন কম করে কিনি।’দেশে রান্না ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পে সয়াবিন ও পাম তেলের বার্ষিক চাহিদা ২০ থেকে ২২ লাখ টন। ভোজ্যতেলের চাহিদার ৯৫ শতাংশই মেটানো হয় আমদানি করে। দেশে ভোজ্যতেলের ব্যবসায় এখন সব মিলিয়ে ১১টি প্রতিষ্ঠান সক্রিয় রয়েছে।
ট্যাগস