ঢাকা , শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের পরেও নাশকতার শঙ্কা কাটেনি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৭:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • 151

সিনিয়র রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে হরতাল-অবরোধের নামে বাসে-ট্রেনে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। যদিও ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ের সৃষ্ট আতঙ্ক ও সহিংসতার শঙ্কা এখনো কাটেনি।

এদিকে গণপরিবহনসহ রাজনৈতিক স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পরিমাণ কমে আসলেও বিদ্যুৎকেন্দ্র, টিভি সেন্টার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রয়েছে জঙ্গি হামলার শঙ্কাও। এ কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার ও বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশ সদরদফতর থেকে দেশের সব মেট্রোপলিটান পুলিশ, হাইওয়ে, রেলওয়ে ও রেঞ্জ ডিআইজিসহ ইউনিটগুলোকে চিঠি দিয়ে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গত ১৭ জানুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (গোপনীয়) এ এফ এম আনজুমান কালামের সহ করা চিঠিতে বলা হয়েছে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে সড়ক পথে যাতায়াতের পাশাপাশি জনসাধারণের রেলপথে ভ্রমণ বা যাতায়াতের প্রবণতা বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতকারীরা রেলস্টেশন ও ট্রেনে অগ্নিকাণ্ড বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তথা কেপিআইসহ বিদ্যুৎকেন্দ্র, টিভি সেন্টার ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে নাশকতার শঙ্কা রয়েছে। এসব স্থাপনায় জঙ্গি হামলার শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন।’

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত নভেম্বর মাস থেকেই সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়। তারপরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্বৃত্তরা ধারাবাহিকভাবে বাস ও ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে । নির্বাচনের দুই দিন আগেও রাজধানীতে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে মারা যান চার যাত্রী। নির্বাচনের পর বাস ও ট্রেনে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনা আর ঘটেনি। তবে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আবারও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে আন্দোলনের নামে আবারও ভাঙচুর ও আগুনের ঘটতে পারে।

রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রেলে নাশকতা ঠেকাতে গত ২৫ জানুয়ারি ডিআইজি মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেলা পরিদর্শন করেন। তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রেলপথে নাশকতা প্রতিহত করার লক্ষ্যে একনিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেন।  এ সময় মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা সব স্টেক হোল্ডার নিয়ে বসেছি। দফায় দফায় মিটিং করেছি। গত নভেম্বর মাস থেকেই এটা শুরু হয়েছিল। তারপর দফায় দফায় মডিফাই করেছি। রেলের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাই অব্যাহত আছে।’ 

পুলিশ সদর দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংতার ঘটনা ঘটেছে। হতাহতের ঘটনাও হয়েছে। তবে নির্বাচনের এক সপ্তাহের মাথায় এই ধরনের সহিংসতা কমে আসে। দলীয় কোন্দল ছাড়া নির্বাচনের পর দেশে বড় ধরনের সহিংসতা ও নাশকতার কোনও ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন বর্জন করা দলগুলোরও সহিংস তৎপরতা নেই। ফলে মাঠ পুলিশের মধ্যে ঢিলেমি আসতে পারে। এই সুযোগে যেকোনও ধরনের হামলা ও নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই মাঠ পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর অভ্যন্তরে ও বাইরে বড় বড় যেসব নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে স্থানীয় থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে। সবকটি ঘটনায় জড়িত মূল আসামিদের গ্রেফতার করতে পারলে নতুন করে কেউ সহিংসতা করার সাহস পাবে না। একইসঙ্গে নতুন করে কেউ যাতে সহিংসতা করতে না পারে, সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

গত ১৫ বছর একাত্তরের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে : মির্জা ফখরুল

নির্বাচনের পরেও নাশকতার শঙ্কা কাটেনি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ

আপডেট সময় ০৭:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

সিনিয়র রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে হরতাল-অবরোধের নামে বাসে-ট্রেনে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। যদিও ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়ের সৃষ্ট আতঙ্ক ও সহিংসতার শঙ্কা এখনো কাটেনি।

এদিকে গণপরিবহনসহ রাজনৈতিক স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পরিমাণ কমে আসলেও বিদ্যুৎকেন্দ্র, টিভি সেন্টার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রয়েছে জঙ্গি হামলার শঙ্কাও। এ কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার ও বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশ সদরদফতর থেকে দেশের সব মেট্রোপলিটান পুলিশ, হাইওয়ে, রেলওয়ে ও রেঞ্জ ডিআইজিসহ ইউনিটগুলোকে চিঠি দিয়ে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গত ১৭ জানুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (গোপনীয়) এ এফ এম আনজুমান কালামের সহ করা চিঠিতে বলা হয়েছে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে সড়ক পথে যাতায়াতের পাশাপাশি জনসাধারণের রেলপথে ভ্রমণ বা যাতায়াতের প্রবণতা বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দুষ্কৃতকারীরা রেলস্টেশন ও ট্রেনে অগ্নিকাণ্ড বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তথা কেপিআইসহ বিদ্যুৎকেন্দ্র, টিভি সেন্টার ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে নাশকতার শঙ্কা রয়েছে। এসব স্থাপনায় জঙ্গি হামলার শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন।’

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত নভেম্বর মাস থেকেই সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়। তারপরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্বৃত্তরা ধারাবাহিকভাবে বাস ও ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে । নির্বাচনের দুই দিন আগেও রাজধানীতে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে মারা যান চার যাত্রী। নির্বাচনের পর বাস ও ট্রেনে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনা আর ঘটেনি। তবে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আবারও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে আন্দোলনের নামে আবারও ভাঙচুর ও আগুনের ঘটতে পারে।

রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রেলে নাশকতা ঠেকাতে গত ২৫ জানুয়ারি ডিআইজি মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেলা পরিদর্শন করেন। তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রেলপথে নাশকতা প্রতিহত করার লক্ষ্যে একনিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেন।  এ সময় মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা সব স্টেক হোল্ডার নিয়ে বসেছি। দফায় দফায় মিটিং করেছি। গত নভেম্বর মাস থেকেই এটা শুরু হয়েছিল। তারপর দফায় দফায় মডিফাই করেছি। রেলের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাই অব্যাহত আছে।’ 

পুলিশ সদর দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও সহিংতার ঘটনা ঘটেছে। হতাহতের ঘটনাও হয়েছে। তবে নির্বাচনের এক সপ্তাহের মাথায় এই ধরনের সহিংসতা কমে আসে। দলীয় কোন্দল ছাড়া নির্বাচনের পর দেশে বড় ধরনের সহিংসতা ও নাশকতার কোনও ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন বর্জন করা দলগুলোরও সহিংস তৎপরতা নেই। ফলে মাঠ পুলিশের মধ্যে ঢিলেমি আসতে পারে। এই সুযোগে যেকোনও ধরনের হামলা ও নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই মাঠ পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর অভ্যন্তরে ও বাইরে বড় বড় যেসব নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে স্থানীয় থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে। সবকটি ঘটনায় জড়িত মূল আসামিদের গ্রেফতার করতে পারলে নতুন করে কেউ সহিংসতা করার সাহস পাবে না। একইসঙ্গে নতুন করে কেউ যাতে সহিংসতা করতে না পারে, সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।