অনলাইন ডেস্ক : নাটোরের সিংড়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতের অভিযোগে লুৎফুল হাবীবের প্রার্থীতা বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকায় ইসি সচিবালয়ে আবেদনটি জমা দেন ভুক্তভোগী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মুনয়েম হোসেন।
এর আগে ওই প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান লুৎফুল হাবীবের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন দুই ব্যক্তি। লুৎফুল হাবীব আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক। তিনি সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বেও আছেন।
ইসিতে দাখিল করা আবেদনে বাবার ওপর সংঘটিত নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেছেন মুনয়েম হোসেন। তার অভিযোগ, নির্বাচনী মাঠ থেকে তার বাবাকে সরিয়ে দিতে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের নির্দেশে সন্ত্রাসী বাহিনী জঘন্য তৎপরতা চালিয়েছে। নির্যাতনের শিকার তার বাবা এখনো শঙ্কামুক্ত নন। এ অবস্থায় লুৎফুল হাবীবকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দিলে তিনি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনকে প্রভাবিত করবেন। এতে নির্বাচন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ কারণে তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক লুৎফুল হাবীবের প্রার্থিতা বাতিল করে শাস্তি দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মুনয়েম হোসেনের জানান, লুৎফুল হাবীব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর যে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছেন, তা নজিরবিহীন। এ কারণে তিনি লুৎফুল হাবীবের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আবেদন করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হন লুৎফুল হাবীব, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি কামরান হাসান কামরুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম ভোলা, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ও কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য দেলোয়ার হোসেন পাশা। কিন্তু এক পর্যায়ে প্রতিমন্ত্রীর ঢাকার বাসায় বৈঠকে লুৎফুল হাবীবকে একক প্রার্থী করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেন প্রতিমন্ত্রী। ওই নির্দেশনার পর তিন প্রার্থী নির্বাচন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন। এ কারণে ঈদের আগেই নিজের মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক লুৎফুল।
কিন্তু গত সোমবার চেয়ারম্যান প্রাথী হিসেবে দেলোয়ার হোসেন অনলাইনে দাখিল করা মনোনয়নপত্রের অনুলিপি নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে জমা দিতে যান। সেখান থেকে প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের ঘনিষ্টরা তাকে অপহরণ ও নির্যাতন করে অচেতন অবস্থায় তার বাড়ির সামনে ফেলে যায়। পরে দেলোয়ারকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। সেখানে এখনো তিনি চিকিৎসাধীন।
নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল লতিফ শেখ ফোন ধরেননি। খুদে বার্তায় ওই আবেদনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।