সোহেলী চৌধুরী
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের মন্ত্রী-এমপিদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের উপজেলা ভোটে অংশ না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে দলটি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এমপিদের হস্তক্ষেপ এবং দলীয় বিভেদের তথ্যে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এরপর তিনি সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ডেকে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ব্যাপারে এই নির্দেশনা দেন। ইতিমধ্যে মন্ত্রী-এমপিদের দলীয় নির্দেশনা আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে চিঠি আকারে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের সাংগঠনিক সম্পাদকদের মাধ্যমে দলের সিদ্ধান্তের কথা পুনরায় জানানো হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় সভাপতির নির্দেশনার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। সেখানে ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী- সংসদ সদস্যদের মধ্যে কাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছে সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। তাৎক্ষণিকভাবে মাদারীপুর সদরের সংসদ সদস্য ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এবং নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরীকে ফোন করে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক ও উপদপ্তর সম্পাদক।
দপ্তর সূত্রে জানা যায়, দলের নেতাদের দাবির মুখে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়নি। মূল লক্ষ্য ছিল সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনটি প্রভাবমুক্ত রাখা। কিন্তু ভোট শুরুর পর দেখা যাচ্ছে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা নিজের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ভোটে দাঁড় করিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। তাই এমপি-মন্ত্রীরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকেও নানাভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এটা পছন্দ করছেন না দলের প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি কঠোরভাবে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন গণমাধ্যমকে জানান, তিনি এরইমধ্যে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে ফোন করে তার ছেলেকে উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর দলীয় নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, আমরা সকালে ধানমন্ডি অফিসে বসেছিলাম। তখন দলের সাধারণ সম্পাদক নেত্রীর নির্দেশটি আমাদের অবগত করেন এবং নেত্রীর নিদের্শ বাস্তবায়ন করতে দ্রুত তাগিদ দেন।
উল্লেখ্য- আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলার নির্বাচন হবে। যাতে ১৪ জন এমপির পরিবারের সদস্য- স্বজনেরা প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ছেলে শাবাব চৌধুরীকে ভোট না দিলে উন্নয়নকাজ না করার হুমকি দেন স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরের সিংড়া উপজেলায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলকের শ্যালকের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠে। অন্যদিকে আগামী ২ মে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে। ওই অধিবেশন সংসদীয় দলের বৈঠকে বসতে পারে দলটি। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের উপজেলা নির্বাচন বিষয়ে তার অবস্থান তুলে ধরবেন। প্রভাব বিস্তার থেকে বিরত থাকার বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। এছাড়া শিগগিরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদেরও বৈঠক হতে পারে। সেখানেও বিষয়টি আলোচিত হবে।