অনলাইন ডেস্ক : ঢাকার সিটি এসবিতে (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) কর্মরত অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুল তার ভাগ্নি তানজিলা হক ঊর্মির পক্ষ নিয়ে নিঃস্ব করেছেন গোপালগঞ্জের একটি পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের। ঊর্মির ডিভোর্সি স্বামী হাবিবুর রহমান ইবাদতের পরিবার এখন আইনি জটিলতা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ভুক্তভোগী ওই পরিবারের বিরুদ্ধে শিমুলের নিজ জেলা গোপালগঞ্জে দেওয়া হয়েছে ১২টি মামলা, জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে একটি মামলা, রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় একটি মামলা, রাজধানীর বাড্ডা ও ধানমণ্ডি থানাতে দেওয়া হয়েছে একটি করে মামলা। দুদকের অনুসন্ধান টিম গঠন ‘মুক্তিযোদ্ধা সনদে’ চাকরি নেওয়া অতিরিক্ত ডিআইজির সম্পদের পাহাড়! শুধু তাই নয়, ভাগ্নি ঊর্মির স্বামী হাবিবুর রহমান ইবাদতকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে সৌদি আরবের মক্কার কারাগারে পাঠানো হয়। আর এ সবের পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল ইসলাম শিমুল। সারাবাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে শিমুলের ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা তথ্য। রাজ্জাক সোবহান ওরফে হাবিবুর রহমান ইবাদত। তার পাসপোর্ট নাম রাজ্জাক সোবহান। পাসপোর্ট নম্বর-ইবি ০১৮****। ১৯৯৮ সালে হাবিবুর সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেই থেকে সৌদি আরবে ব্যবসা করে আসছেন রাজ্জাক।
২০২১ সালের ১৭ মার্চ তিনি হঠাৎ করে সৌদি ইন্টারপোল পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এরপর তিনি জানতে পারেন, তার সাবেক স্ত্রী (ডিভোর্স) তানজিলা হক ঊর্মি ঢাকার আদালতে নারী নির্যাতনের মামলা করেছেন। সেই মামলার পরোয়ানা ঢাকা ইন্টারপোল থেকে সৌদি আরবের ইন্টারপোলে পাঠালে গ্রেফতার হন রাজ্জাক ওরফে হাবিব।
হাবিবের পরিবারের অভিযোগ, ঊর্মির সঙ্গে হাবীবের ডিভোর্সের এক বছর পর নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলাটি করা হয়। হাবিব কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নন যে তার নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করে সৌদি আরবে গ্রেফতার করতে হবে। হাবিবকে অবহিত করলে নিশ্চয়ই আদালতে হাজির হতেন তিনি। কিন্তু তা না করে হাবিবকে গ্রেফতার করে সৌদি আরবের মক্কার অন্তর্গত সামিছি কারাগারে আটকে রাখা হয়। হাবিবের সহায় সম্পত্তি ভোগ দখল করতেই মূলত তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।
হাবিবের বাবা অ্যাঞ্জেল শেখ অভিযোগ করে বলেন, ‘ঊর্মির মামা শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুল বর্তমানে পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি। তিনি বর্তমানে পুলিশের বিশেষ শাখায় ( সিটি এসবি) কর্মরত আছেন। মূলত মামার অবৈধ ক্ষমতাবলেই তানজিলা হক ঊর্মি এসব ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, একই মামলায় পরিবারের সবাইকে হয়রানি করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন থানায় পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
হাবিবের বাবা জানান, হাবিবের ইমাদ পরিবহন নামে একটি বাস কোম্পানি রয়েছে। সেই বাস কোম্পানির নামেও মামলা দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম শিমুল। এমন কোনো অত্যাচার নেই যে ঊর্মির মামা করছেন না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিটি এসবিতে কর্মরত শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুলের বাড়ি গোপালগঞ্জে। অস্বচ্ছল একটি পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। বাবার নামে করা ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট কোটায় ২০ তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার পদে চাকরি নেন শিমুল। এরপর শুরু হয় ক্ষমতার দাপট ও দুর্নীতি।
হাবিবুর রহমান ও তানজিলা হক উর্মি। দুজনের বাড়ি গোপালগঞ্জে। ২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর রাজধানীর ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট কিনে সেখানে রাখেন ঊর্মিকে। ‘ঊর্মির উচ্ছৃঙ্খল’ আচরণে অতীষ্ট হয়ে তাকে সৌদি আরবে নিয়ে হাবিবুর রহমান। সেখানেও বনিবনা না হওয়া ও পারিবারিক ঝামেলা দেখা দেওয়ায় ঊর্মি দেশে ফিরে বসবাস শুরু করেন। হাবিবুর-ঊর্মির ঘরে একে একে তিন সন্তানের জন্ম হয়। সাংসারিক ঝামেলা দিনের পর দিন বাড়তে থাকলে উভয়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ির সিদ্ধান্ত হয়।
কয়েক দফা উভয়ের পারিবারিক বৈঠকেও সুরাহা না হওয়ায় ২০১৯ সালের ৫ মার্চ হাবিবুর রহমান ঊর্মিকে তালাক নোটিস পাঠান। তালাকনামা কার্যকর হয়ে যায়। এরপর ঊর্মি একবছর পর আদালতে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেন। সে মামলায় হাবিবসহ পরিবারের সাতজনের নামে মামলা দেয়। হাবিবের অসুস্থ মাকেও ধরে নিয়ে আসে পুলিশ।
ঊর্মির মামা রফিকুল ইসলাম শিমুল ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে নোটিস পাঠান। সৌদি আরবে পুলিশকে দিয়ে হাবিবকে গ্রেফতার করানো হয়।
হাবিব গ্রেফতারের কিছুদিন পর তার মা মারা যান। বর্তমানে হাবিবুর রহমান সৌদির কারাগার থেকে ছাড়াও পেয়েছেন।
নারী নির্যাতনের মামলা : নারী নির্যাতনের মামলাটি করার আগে শিমুল তার ক্ষমতাবলে সেগুনবাগিচায় অবস্থিত এজিবি গভর্মেন্ট আউটডোর ডিসপেনসারি থেকে ভাগ্নির ইনজুরির সার্টিফিকেট নেন। নিয়ম অনুসারে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেলায় কেবল এসব জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার কথা। কিন্তু ঊর্মি কোনো সরকারি জব করেন না। এমনকি কোনো সরকারি কর্মচারী বা কর্মকর্তার সন্তানও না। ঊর্মি পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে থাকলে ঢাকা মেডিকেল থেকে সার্টিফিকেট নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। একইভাবে এই ডিনপেনসারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালের চিকিৎসার সার্টিফিকেট এক বছর পর ২০২০ সালের ১৯ মার্চ সার্টিফিকেট নিয়েছেন এবং মামলা করেছেন।
ওই ডিসপেনসারিতে অনুসন্ধানে গেলে, ইসরাত জাহান নামে সেখানে কোনো ডাক্তারের সন্ধান মেলেনি। সেখানে কর্মরত একজন জানান, এ সব সার্টিফিকেট এখান থেকে দেওয়া হয় না। কেউ এটি তৈরি করে নিয়ে থাকতে পারেন।
‘অদৃশ্য ক্ষমতা’ বলে বাড়ি–গাড়ি দখল করেছেন তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী : সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী তানজিলা হক ঊর্মি হাবিবুর রহমানের ধানমন্ডির ফ্ল্যাট, গাড়ি ও টাকা পয়সা অবৈধভাবে ভোগ দখল করে আসছে। হাবিবুর স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার পর বাচ্চার ভরণ পোষণ বাবদ আদালতের নির্দেশে প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে আসছিলেন। যা এখনও চলমান। এরপরও ‘মিথ্যা’ মামলায় হাবিবুরকে সৌদি কারাগারে আটক রাখা হয়।
পরিবারের দাবি— ঊর্মি এ সব কিছু করছে তার পুলিশ কর্মকর্তা মামা অ্যাডিশনাল ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম শিমুলের ক্ষমতাবলে। এমনকি এই নির্যাতিত পরিবারের পাশে যারাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তাদের নাজেহাল করছেন। একেকজনের নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক নারী নির্যাতনের মামলা দিয়েছেন। যেগুলো পরবর্তী সময়ে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে।
সারাবাংলার অনুসন্ধানেও জানা গেছে এ সব মিথ্যা মামলা বানোয়াট। তা হাবিরের পরিবারকে ফাঁসানোর জন্য করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন মামলার বাদীরা।
বিভিন্ন থানায় মামলা করিয়েছেন শিমুল : সারাবাংলার অনুসন্ধানকালে এ সব মামলার বাদীদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিবেদক। রাজশাহীর রাজপাড়া থানার মামলার বাদীর বাড়ি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী শহরে। ওই বাদীর বাসায় গেলে তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। যা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা শিমুল করেছেন।’ মিথ্যা মামলা করায় তিনি দুঃখও প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার মামলার বাদীর সঙ্গে কথা হয় তার বাড়িতে।
তিনি বলেন, ‘শিমুল পাবনার এসপি থাকার সময় তার (বাদীর) মেয়ে বিপদে পড়েছিল। শিমুল সেই সমস্যাটি সমাধান করেছিলেন। শর্ত দিয়েছিলেন যে, তাকে পাঁচবিবি থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করতে হবে। এ জন্য তিনি মামলাটি করেন।
তবে তিনি আদালতে গিয়ে মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে সাক্ষ্য দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
রাজধানীর বাড্ডা থানায় এক চায়ের দোকানিকে দিয়ে মানব পাচারের মামলা করিয়েছেন শিমুল। সেই মামলাতেও জেল খাটতে হয়েছে বৃদ্ধ লোকদের। আফতাব নগর সংলগ্ন বাড্ডা মাছ বাজারের সামনের সড়ক ঘেঁষে চায়ের দোকান চালান মামলার বাদী।
সারাবাংলাকে মামলার বাদী বলেন, ‘শিমুলের কথায় তিনি মিথ্যা মামলা করেছেন। মামলার আসামিকে তিনি কখনও দেখেননি।’ আদালতে গিয়ে এ বিষয়ে সত্য তুলে ধরবেন বলে মামলার বাদী জানান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিয়ের পর ঊর্মি স্বামীর পরিবার সদস্যদের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ করতে থাকেন। বুঝতে পেরে উর্মিকে ভালো করার প্রত্যাশা নিয়ে ২০০৮ সালের ১৫ এপ্রিল সৌদি আরবে নিয়ে যান হাবিব। ওই সময় হাবিবের পাসপোর্ট ছিল আব্দুর রাজ্জাক নামে। পাসপোর্টে জরুরি যোগাযোগের নম্বর ছিল উর্মির মামা তৎকালীন এসপি রফিকুল ইসলামের। সৌদিতে যাওয়ার পরে ঊর্মি হাবিরের কাছ থেকে বিভিন্ন বাহানায় নগদ অর্থ সোনার গয়না নিতে থাকেন।
২০১০ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এসপি মামার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ২৭ লাখ টাকা পাঠান ঊর্মি। যা হাবিব জানতেন না। স্বর্ণালঙ্কার ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি জানতে পেরে স্ত্রীকে দেশে নিয়ে আসেন হাবিব।
ঊর্মিকে গোপালগঞ্জের নিজ বাসায় রেখে হাবিব চলে যান সৌদি আরবে। ঊর্মি গোপালগঞ্জের বাসায় থাকতে না চাইলে জরুরি ভিত্তিতে ধানমন্ডিতে (রোড-১, বাসা-৫, ফ্লাট-সি) একটি ফ্লাট কেনেন। ওই ফ্লাট ও মিরপুরে জমি ক্রয়ের সময় ঊর্মির বাবা ও এসপি মামা অতিরিক্ত মুল্য দেখিয়ে ব্যাপক টাকা আত্মসাৎ করেন। তাদের কাছ থেকে আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত চাইলে তা দিতে অস্বীকার করেন এবং হাবিবকে ভয়ভীতি দেখান। এর জের ধরে হাবিব সৌদি আরবে যাওয়ার সময় ঢাকা বিমানবন্দরে অদৃশ্য ক্ষমতাবলে তার পাসপোর্টটি আটকে দেন। পাসপোর্ট আটকের পর অনেক দেন দরবার করে উর্মির বাবা ও এসপি মামার আত্মসাৎ করা টাকার দাবি ত্যাগ করতে বাধ্য হন হাবিব। শুধু তাই নয় অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর হাবিব তার পাসপোর্ট ফেরত পান।
এরপর ২০১২ সালে হাবিবকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে উর্মির বাবা ও মামা প্রিয় প্রাঙ্গণে প্লট করার জন্য অর্থ নিয়ে প্লট ক্রয় না করে সব টাকা আত্মসাৎ করেন। সাংসারিক শত টানাপোড়েনের মধ্যেও ঊর্মির আগ্রাসী, বেপরোয়া মনোভাবের পরিবর্তনের আশায় হাবিব পরপর তিনটি সন্তান নেন। কিন্তু ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিন সন্তান জন্ম নেওয়ার পরও কোনো পরিবর্তন হয়নি। এখন সন্তানের বয়স যথাক্রমে ইমাদ (১৩), হেবা (১২) ও হুরিয়া (৮) বছর। সন্তানদের কষ্ট ও পারিবারিক মর্যাদাহানির ভয়ে হাবিব সবকিছু মেনে নেন। এর বিনিময়ে বাড়তে থাকে অত্যাচারের মাত্রা।
২০১৭ সালের ১৫ মে একটি পারিবারিক বিচার আহ্বান করেন উর্মি। সেই বিচারে সব সিদ্ধান্ত হাবিব মেনে নিলেও ঊর্মি ও তার পরিবার কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। এরপর ঊর্মি দিন দিন বেপরোয়া আচরণ ও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পেরে হাবিব ধানমন্ডির ফ্লাটে সিসি ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। সিসি ক্যামেরা লাগাতে গেলে উর্মি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেন এবং হাবিবকে মারধর করেন। ঊর্মি বিষয়টি এসপি মামাকে জানালে তিনি ন্যায়বিচার না করে হাবিবকে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখান।
সাংসারিক ঝামেলা বাড়তে থাকায় এক পর্যায়ে এস পি মামা পুলিশি ক্ষমতা প্রয়োগ করে হাবিবের ঢাকা-গোপালগঞ্জ, ঢাকা-পিরোজপুর, ঢাকা-খুলনা রুটে চলাচলকারী বাস ইমাদ পরিবহনের নামে মামলা দিতে শুরু করে। এমনকি সায়েবাদের জনপদ মোড়ে থাকা ইমাদ পরিবহনের কাউন্টারটিও বন্ধ করে দেন। ইমাদ পরিবহনের বাস চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে পুলিশ।
ওই সময় হাবিবের মা অসুস্থ হলে মায়ের চিকিৎসায় যাতায়াত সুবিধার জন্য প্রাইভেট কারটি সাময়িক সময়ের জন্য গোপালগঞ্জে নিয়ে আসেন। ঊর্মির বাবা আজিজুর রহমান খান গোপালগঞ্জ ওসি ডিবির নিকট প্রাইভেট কারটি (ঢাকা মেট্টো-গ-২৯-৩২০৪) হারিয়ে গেছে মর্মে অভিযোগ করেন। ডিবি পুলিশ গাড়িটি আটক করেন। গাড়ি আটকের সময় হাবিবের মা চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশ অসুস্থ মাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে এসপি মামার সহকারী পুলিশের চালককে দিয়ে গাড়িটি ঢাকায় আনান।
পুনরায় পাসপোর্টটি এসপি মামলার ক্ষমতায় আটক হওয়ার ভয়ে হাবিব অসুস্থ্ মাকে দেখতে দেশে আসতে পারেননি। এমনকি ২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মায়ের মৃত্যুতেও হাবিব আসতে পারেননি।
এক পর্যায়ে হাবিব ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি উর্মিকে শরীয়াত ও নোটারি মারফত তালাকের নোটিশ পাঠান। নোটিশ পাঠানোর পর সাংসারিক ঝামেলা মেটাতে ২০১৯ সালের ৫ মার্চ এক সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সালিশ বৈঠকে দুপক্ষের মুরুব্বিরা উপস্থিত ছিলেন। সালিশ বৈঠকের সব সিদ্ধান্ত ঊর্মি ও তার পরিবার সু কৌশলে এড়িয়ে যান। তালাক প্রদানের পর খোরপোষ বাবদ প্রতি মাসে ইসলামী ব্যাংকের (৫৪১৬) অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা দেন।
তালাক প্রদানের এক বছর পর ২০২০ সালের ৩ মার্চ তানজিলা হক ঊর্মি বাদী হয়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের ঘটনা উল্লেখ করে একটি মিথ্যা ও হয়রানিমুলক মামলার আবেদন করেন আদালতে। আদালত ধানমন্ডি থানাকে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ওই দিন রাতেই ধানমন্ডি থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ করেন। মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়। একই রাতে গোপালগঞ্জে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দিন ভোর হওয়ার আগেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৌকির ঢাকা থেকে ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি ভাড়া করে আসামিদের গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। আদালতের মাধ্যমে চার আসামি ৫ মার্চ কারাগারে যান। ওই বছরের ১৬ মার্চ চার আসামি জামিন পান। ওই দিন জেলগেট বের হওয়ার আগ মুহূর্তে বাড্ডা থানার একটি মিথ্যা ও জালিয়াতি মামলার এজাহার (বাড্ডা থানার মামলা-৪১) দেখিয়ে দুই আসামিকে গ্রেফতার দেখানো হয়। আসামি আজম আলী খান ও সহিদ শেখকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠালে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
বাড্ডা থানার মামলায় আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ জামিন পান। ধানমন্ডি থানার অপর তিন আসামীর মধ্যে হাবিব বাদ দিয়ে বাকি দুই আসামিকে আদালতে তোলা হয়। ওই দুই আসামি ১৭ মার্চ জামিন পান। মামলার ১ নম্বর আসামী হাবিবুর রহমান করোনার জন্য ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আদালতে হাজির হতে পারেননি। তাই তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
এদিকে উর্মির ডিভোর্সটি ২০১৯ সালের ১৮ মে সেটেল হয়। এরপরও কনে পক্ষ শুধুমাত্র অর্থের লোভে ডিভোর্সটি মানে না। ডিভোর্স সম্পন্ন হওয়ার পরও এসপি মামার অদৃশ্য ক্ষমতাবলে হাবিবের ধানমন্ডির ফ্ল্যাটটি দখল করে আছেন। এমনকি হাবিবের গাড়িটিও ঊর্মি ব্যবহার করছেন।
এসপি মামার ক্ষমতায় ভুয়া বাদী সাজিয়ে হাবিবের মামা আজম খানের (৫৭) নামে রাজশাহীতে একটি ধর্ষণ মামলা করান। মামলা নম্বর-২৭/২০২০ (রাজপাড়া)। ধানমন্ডি থানার মামলাটির চার্জশিট খুব দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন এসপি মামা। চার্জশিটে সব আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
চার্জশিটের পর গ্রেফতারি পরোয়ানার কপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের এনসিবি শাখার মাধ্যমে সৌদিতে পাঠিয়ে সেখানকার পুলিশ দিয়ে হাবিবকে গ্রেফতার করান। এর ফলে সৌদিতে থাকা হাবিবের ১ হাজার ৪৫০ জনের মত প্রবাসী বেকার হয়ে পড়েন। তাদের রেমিট্যান্স আসা তো পরের কথা এক পর্যায়ে তাদের দেশে ফেরত আসার মতো অবস্থা তৈরি হয়।
বাংলাদেশে হাবিবের চলা ইমাদ পরিবহন কোম্পানিতে অন্তত চারশ কর্মচারী আছেন। যা থেকে সরকার প্রতি বছর অন্তত ১০ লাখ টাকা ট্যাক্স পায়। সেটিও বন্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। অবশেষে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে পুলিশ সদর দফতরের সহায়তায় সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে হাবিব জেল থেকে মুক্তি পান।
এসব বিষয়ে জানতে তানজিলা হক উর্মির কাছে ফোন করা হলে সাংবাদিক শুনে তিনি ফোন কল কেটে দেন। এরপর তার দখল করা ধানমন্ডির বাসায় গেলে সাংবাদিক দেখেই তিনি দরজা লাগিয়ে দেন। ভেতর থেকে ঊর্মি বলেন, ‘আপনার সাংবাদিকতা ছোটানোর ব্যবস্থা করছি।’
একই বিষয়ে জানতে সিটি এসবিতে কর্মরত পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি রফিকুল ইসলাম শিমুলকে তার ব্যক্তিগত নম্বরে না পেয়ে কাকরাইলে অবস্থিত সিটি এসবির অফিসে যান এই প্রতিবেদক। তখন এই প্রতিবেদককে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।