ঢাকা , রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালো টাকা সাদা করতে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ করারোপ প্রয়োজন : জিএম কাদের

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৯:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪
  • 58

অনলাইন ডেস্ক  :  কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলে অর্থনীতিতে চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)।  তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ যদি দিতেই হয়, সে ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ করারোপ প্রয়োজন। 

শনিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জিএম কাদের এসব কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। জিএম কাদের বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারির প্রকোপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি কারণে সারাবিশ্বে বড় ধরনের অর্থনেতিক মন্দার ধাক্কা লেগেছিল। ধীরে ধীরে প্রায় দেশই এর থেকে উত্তরণে সক্ষম হয়েছে। অনেক দেশ উত্তরণের পথে অগ্রসরমান। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। আমাদের অর্থনীতি প্রতিদিন এখনও নিম্নগামী। উত্তরণতো দূরের কথা অধঃপতন ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে।  তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি, টাকার বিনিময় হারের পতন, সীমিত রফতানির প্রবৃদ্ধি, নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, উচ্চ নন-পারফরমিং ঋণ, সরকারের সংকুচিত আর্থিক ক্ষমতা, এডিপি ব্যয়ের হ্রাস, বেদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋণের উপর অতিনির্ভরশীলতা, বিদেশি বিনিয়োগের পতন, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস- সব মিলে সামগ্রিক অর্থনীতির খারাপ অবস্থা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বলা হচ্ছে। 

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চলতি বছর এপ্রিল শেষে নিট রিজার্ভ ১২.৮০ বিলিয়ন ডলার যা দিয়ে এক মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। অথচ কোন দেশের রিজার্ভকে নিরাপদ মাত্রায় রাখতে হলে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের রিজার্ভ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেমে এসেছে বলা যায়। বর্তমানে আমদানি ব্যয় যথেষ্ঠ পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করার পরেও রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছে না। মনে রাখতে হবে আমদানি ব্যয় একটা পর্যায়ের নিচে কখনই নামানো সম্ভব হবে না। যেহেতু দেশে আমদানি চাহিদার একটি নিম্নতম স্তর আছে। তাছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হ্রাস এবং আমদানি হ্রাস পেলে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হয়, টাকার অবমূল্যায়ন হয় এবং মূল্যস্ফীতি হয়। ফলে আমদানি ব্যয় সংকোচনের ফলে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে আসার মাধ্যমে যদি রিজার্ভের স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখা না যায়; তাহলে সার্বিক অর্থনীতিতে একটি বিশৃঙ্খল আবস্থা দেখা দেবে।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থ-বছরের বাজেট একটি গতানুগতিক বাজেট। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এ বছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বেশি সঙ্কটময় বলা যায়। সারা বিশ্বে কম বেশী অর্থনৈতিক মন্দা ও যা থেকে প্রায় দেশই উত্তরণের পথে। কিন্তু আমাদের ক্রমাবনতি চলমান। সে প্রেক্ষিতে, আমাদের দেশের চরম অর্থনৈতিক দুর্দশা আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী কোন দিক-নির্দেশনা বা উদ্দ্যোগ এ বাজেটে লক্ষ্য করা যায় না। সবগুলো না হলেও কিছু কিছু সমস্যা বাজেটে চিহ্নত করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু বাজেট প্রণয়নে বরাদ্দ, রাজস্ব আহরণে যে কর প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে করে চিহ্নিত সমস্যাসমূহ সমাধানের পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা বৃদ্ধি করবে।  

জিএম কাদের বলেন, আমি মনে করি বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে ১,২৭,২০০ (১০.৮৩ বিলিয়ন ডলার) কোটি টাকা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঘাড়ে এটি এক বড় বোঝা। সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে এটা বাধা সৃষ্টি করবে। কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ব্যবসায়ীরা বিপুল অঙ্কের আয়কর ফাঁকি দেন, তারা ভুল করে কর ঠিক মত দেননি, এটা সম্পূর্ণ ভুল। ভুল করে যারা আয়কর দেন না তার ধরা পড়েন ও খেসারত দেন। যারা ইচ্ছা করে আয়কর ফাঁকি দেন তারা হিসাব-নিকাশ করেই তা করেন ও সে জন্যই তারা ধরা পড়েন না। সমস্যা হলো, স্বাভাবিকভাবে বৈধ আয়ের উপর করের হার বিভিন্ন স্তরে ভিন্নতর করলেও সর্বোচ্চ ৩০%, সেখানে অবৈধ আয়ের উপর ১৫% কর দিলেই বৈধ হওয়ার যেমন অনৈতিক তেমন যুক্তিসঙ্গত নয়। যার জন্য খোড়া যুক্তি দিতে হয়। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ খুব বেশি অঙ্কের রাজস্ব আসে না। কালো টাকা সাদা করার এ সুযোগ তেমন কেউ গ্রহণ করবে না আর রাজস্ব আদায়ে বেশি কোন ভূমিকা রাখবে না। এ ধারণা বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের হলেও এবার কিছুটা ব্যতিক্রম হতে পারে বলে ধারণা করি। এ বারের আইনে ব্যাপকভাবে অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি পরিমাণে দায়মুক্তি দিয়ে সব ধরনের আইনের আওতামুক্ত করা হয়েছে অবৈধ আয়কে। ১৫% কর পরিশোধ করলে কোন কর্তৃপক্ষ কোন প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। এ ধরনের ঢালাওভাবে অবৈধ কাজকে দায়মুক্তি দিয়ে আইনসিদ্ধ আগে কখনও করা হয়নি।

আর দ্বিতীয় কারণ হলো- অসৎ ব্যক্তিবর্গ সরকার পরিবর্তনের ভয়ে নিজের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করতে সাহস করতো না। পরবর্তী সরকার আসলে সমস্যা হতে পারে এ আশঙ্কা ছিল। এখনকার নির্বাচনী ব্যবস্থায় সরকারি দল ও তাদের পছন্দমত মানুষেরা জয়লাভ করে সরকার গঠন করে চলেছেন। ফলে, সরকার পরিবর্তনের কোন আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। তবে, সাধারণত কালো টাকার মালিকরা অবৈধ অর্থের মুনাফা চান না, তারা তাদের অর্থের নিরাপত্তা চান। এভাবে দায়মুক্তি দিলে দুর্নীতি উৎসাহিত হবে। এর মাধ্যমে দুর্নীতির যে দুষ্টচক্র সৃষ্টি হবে তা থেকে ভবিষ্যতে উদ্ধার পাওয়া কঠিন হবে। এভাবে চলতে থাকলে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে না। ফলে, অর্থনীতিতে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিদ্যমান সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে বলা যায়। অবৈধ অর্থ অর্থাৎ কালো টাকাকে বৈধ বা সাদা করার সুযোগ না দেওয়ার প্রস্তাব করছি। দিতে হলেও অন্তত ন্যায়বিচারের স্বার্থে ৩০% এর ঊর্ধ্বে অর্থাৎ কমপক্ষে ৫০% কর দিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ করার বিধান রাখা যায়।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

কালো টাকা সাদা করতে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ করারোপ প্রয়োজন : জিএম কাদের

আপডেট সময় ০৯:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক  :  কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলে অর্থনীতিতে চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)।  তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ যদি দিতেই হয়, সে ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ করারোপ প্রয়োজন। 

শনিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জিএম কাদের এসব কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। জিএম কাদের বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারির প্রকোপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি কারণে সারাবিশ্বে বড় ধরনের অর্থনেতিক মন্দার ধাক্কা লেগেছিল। ধীরে ধীরে প্রায় দেশই এর থেকে উত্তরণে সক্ষম হয়েছে। অনেক দেশ উত্তরণের পথে অগ্রসরমান। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। আমাদের অর্থনীতি প্রতিদিন এখনও নিম্নগামী। উত্তরণতো দূরের কথা অধঃপতন ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে।  তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি, টাকার বিনিময় হারের পতন, সীমিত রফতানির প্রবৃদ্ধি, নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, উচ্চ নন-পারফরমিং ঋণ, সরকারের সংকুচিত আর্থিক ক্ষমতা, এডিপি ব্যয়ের হ্রাস, বেদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋণের উপর অতিনির্ভরশীলতা, বিদেশি বিনিয়োগের পতন, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস- সব মিলে সামগ্রিক অর্থনীতির খারাপ অবস্থা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বলা হচ্ছে। 

প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চলতি বছর এপ্রিল শেষে নিট রিজার্ভ ১২.৮০ বিলিয়ন ডলার যা দিয়ে এক মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। অথচ কোন দেশের রিজার্ভকে নিরাপদ মাত্রায় রাখতে হলে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের রিজার্ভ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নেমে এসেছে বলা যায়। বর্তমানে আমদানি ব্যয় যথেষ্ঠ পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করার পরেও রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছে না। মনে রাখতে হবে আমদানি ব্যয় একটা পর্যায়ের নিচে কখনই নামানো সম্ভব হবে না। যেহেতু দেশে আমদানি চাহিদার একটি নিম্নতম স্তর আছে। তাছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হ্রাস এবং আমদানি হ্রাস পেলে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হয়, টাকার অবমূল্যায়ন হয় এবং মূল্যস্ফীতি হয়। ফলে আমদানি ব্যয় সংকোচনের ফলে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে আসার মাধ্যমে যদি রিজার্ভের স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখা না যায়; তাহলে সার্বিক অর্থনীতিতে একটি বিশৃঙ্খল আবস্থা দেখা দেবে।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থ-বছরের বাজেট একটি গতানুগতিক বাজেট। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এ বছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বেশি সঙ্কটময় বলা যায়। সারা বিশ্বে কম বেশী অর্থনৈতিক মন্দা ও যা থেকে প্রায় দেশই উত্তরণের পথে। কিন্তু আমাদের ক্রমাবনতি চলমান। সে প্রেক্ষিতে, আমাদের দেশের চরম অর্থনৈতিক দুর্দশা আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী কোন দিক-নির্দেশনা বা উদ্দ্যোগ এ বাজেটে লক্ষ্য করা যায় না। সবগুলো না হলেও কিছু কিছু সমস্যা বাজেটে চিহ্নত করার প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু বাজেট প্রণয়নে বরাদ্দ, রাজস্ব আহরণে যে কর প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে করে চিহ্নিত সমস্যাসমূহ সমাধানের পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা বৃদ্ধি করবে।  

জিএম কাদের বলেন, আমি মনে করি বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে ১,২৭,২০০ (১০.৮৩ বিলিয়ন ডলার) কোটি টাকা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঘাড়ে এটি এক বড় বোঝা। সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে এটা বাধা সৃষ্টি করবে। কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ব্যবসায়ীরা বিপুল অঙ্কের আয়কর ফাঁকি দেন, তারা ভুল করে কর ঠিক মত দেননি, এটা সম্পূর্ণ ভুল। ভুল করে যারা আয়কর দেন না তার ধরা পড়েন ও খেসারত দেন। যারা ইচ্ছা করে আয়কর ফাঁকি দেন তারা হিসাব-নিকাশ করেই তা করেন ও সে জন্যই তারা ধরা পড়েন না। সমস্যা হলো, স্বাভাবিকভাবে বৈধ আয়ের উপর করের হার বিভিন্ন স্তরে ভিন্নতর করলেও সর্বোচ্চ ৩০%, সেখানে অবৈধ আয়ের উপর ১৫% কর দিলেই বৈধ হওয়ার যেমন অনৈতিক তেমন যুক্তিসঙ্গত নয়। যার জন্য খোড়া যুক্তি দিতে হয়। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ খুব বেশি অঙ্কের রাজস্ব আসে না। কালো টাকা সাদা করার এ সুযোগ তেমন কেউ গ্রহণ করবে না আর রাজস্ব আদায়ে বেশি কোন ভূমিকা রাখবে না। এ ধারণা বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের হলেও এবার কিছুটা ব্যতিক্রম হতে পারে বলে ধারণা করি। এ বারের আইনে ব্যাপকভাবে অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি পরিমাণে দায়মুক্তি দিয়ে সব ধরনের আইনের আওতামুক্ত করা হয়েছে অবৈধ আয়কে। ১৫% কর পরিশোধ করলে কোন কর্তৃপক্ষ কোন প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। এ ধরনের ঢালাওভাবে অবৈধ কাজকে দায়মুক্তি দিয়ে আইনসিদ্ধ আগে কখনও করা হয়নি।

আর দ্বিতীয় কারণ হলো- অসৎ ব্যক্তিবর্গ সরকার পরিবর্তনের ভয়ে নিজের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করতে সাহস করতো না। পরবর্তী সরকার আসলে সমস্যা হতে পারে এ আশঙ্কা ছিল। এখনকার নির্বাচনী ব্যবস্থায় সরকারি দল ও তাদের পছন্দমত মানুষেরা জয়লাভ করে সরকার গঠন করে চলেছেন। ফলে, সরকার পরিবর্তনের কোন আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। তবে, সাধারণত কালো টাকার মালিকরা অবৈধ অর্থের মুনাফা চান না, তারা তাদের অর্থের নিরাপত্তা চান। এভাবে দায়মুক্তি দিলে দুর্নীতি উৎসাহিত হবে। এর মাধ্যমে দুর্নীতির যে দুষ্টচক্র সৃষ্টি হবে তা থেকে ভবিষ্যতে উদ্ধার পাওয়া কঠিন হবে। এভাবে চলতে থাকলে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে না। ফলে, অর্থনীতিতে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিদ্যমান সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে বলা যায়। অবৈধ অর্থ অর্থাৎ কালো টাকাকে বৈধ বা সাদা করার সুযোগ না দেওয়ার প্রস্তাব করছি। দিতে হলেও অন্তত ন্যায়বিচারের স্বার্থে ৩০% এর ঊর্ধ্বে অর্থাৎ কমপক্ষে ৫০% কর দিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ করার বিধান রাখা যায়।