সিনিয়র রিপোর্টার
মোবাইল গ্রাহক সেবার আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশে বিদ্যমান প্রত্যেকটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানিকে গ্রাহকদের প্রতিশ্রুত সেবা প্রদান, গ্রাহক পর্যায়ে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট প্রদান এবং অপারেটরদের যে সকল সুবিধা আমরা দিচ্ছি সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কাজ করছি। এরই ধারাবাহিকতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগে দেশে মোবাইল সেবাকে গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে উন্নীত করতে সম্ভাব্য সব কিছু করা হবে।
রবিবার (৩০ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ভবনের সম্মেলন কক্ষে বিটিআরসি আয়োজিত ‘মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক সেবার মান সংক্রান্ত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মোবাইল ফোন এখন জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা দেখছি যে, আমাদের গ্রাহকেরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। কলড্রপ নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের মোবাইল গ্রাহকেরা যেমন অসন্তুষ্ট, তেমনি বিটিআরসি যে পরীক্ষাগুলো করেছে সে রিপোর্ট অনুসারেও সেবার মান খুব একটা সন্তোষজনক নয়। কলড্রপের জন্য গ্রাহকের যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা সেটা আমরা আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে যাচ্ছি। মোবাইল ওয়ার্ক অপারেটরগুলো যদি প্রতিশ্রুত সেবা না দেয় তাহলে তাদের গ্রাহককে আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমরা মনিটরিং এবং অডিট নিয়মিত করব।
কলড্রপ নিয়ে ঢাকার কয়েকটি এলাকার ড্রাইভ টেস্টের ফলাফল পর্যালোচনা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শহর বা গ্রাম যেখানেই হোক আমরা মিডিয়ার যে রিপোর্ট, সেগুলো আমলে নেব এবং সেখানে আমরা ড্রাইভ দেব। তাছাড়া ফাইন্যান্সিয়াল অডিট এবং টেকনিক্যাল অডিটের ওপরও জোর দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে অপারটেরদের সহায়তাও দেওয়া হবে। আমরা অপারেটরদের হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে সাঁতার শেখাব না, আমরা সাঁতার শিখিয়ে সক্ষমতা দিয়ে দেব। যাতে নদীটা পার হওয়া যায়।
পলক বলেন, আমরা একটা স্মার্ট টেলিকম ইকোসিস্টেম বাংলাদেশকে উপহার দিতে চাই। আগামী ছয় মাসের মধ্যে কলড্রপ নিয়ে মোবাইল অপারেটরগুলো যে তথ্যই দিক না কেন, তা গুরুত্ববহ হবে না। গ্রাহকদের কাছ থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত না একটা উল্লেখযোগ্য চিত্র কিংবা না পাব ততক্ষণ পর্যন্ত শুধুমাত্র কাগজে-কলমে বা ডিজিটাল উপস্থাপনায় আমি ব্যক্তিগতভাবে সন্তুষ্ট হব না। যেভাবেই হোক আমরা গ্লোবাল বেঞ্চমার্কে উন্নীত হতে চাই। কারণ, এটা আমাদের দেশের ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে একটা বড় প্রভাব ফেলে। এ সময় ইন্টারনেটের গতি কেন কম হচ্ছে, গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া কী? সেগুলো আমলে নিয়ে ড্রাইভ দেওয়া হবে। ‘আমরা কারিগরি পরিদর্শন দল গঠন করেছি, তারা সেগুলো টেস্ট করছে বলেও উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী।
মোবাইল অপারেটরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কলড্রপ যাতে বিশ্বের অন্যতম একটা ভালো বেঞ্চমার্কে পৌঁছাতে পারি। সেটা আমাদের মূল লক্ষ্য। কলড্রপে সময় নষ্ট হয়, এনার্জি নষ্ট হয়, গ্রাহক বিরক্ত হয়। পাশাপাশি আপনাদেরও কিন্তু টেকনিক্যাল ও ফাইন্যান্সিয়াল লস হয়। এসব বিষয় খেয়াল করে সমাধানে যেতে হবে। সমস্যা যত কঠিনই হোক না কেন সমাধান করতে হবে।
পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল সেবা প্রসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফাইভজি রোল আউটেরও একটা নির্দিষ্ট টার্গেট বিটিআরসি এবং চারটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রথম পর্যায়ে এয়ারপোর্ট, সি পোর্ট এবং কিছু বিজনেস ডিস্ট্রিক্টস, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বাণিজ্যিক ও শিল্পাঞ্চলে ফাইভজি রোল আউট করা হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে সব জায়গায় রোল আউট করা হবে।
হযরত শাহজালাল (রহঃ) আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টের থার্ড টার্মিনাল অক্টোবরে উদ্বোধন হতে পারে’ উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘অক্টোবরকে টার্গেট করে চারটি মোবাইল অপারেটরকে একটা চ্যালেঞ্জ দিতে চাই, যেন অক্টোবরের ৩০ তারিখের মধ্যে ফাইভজি ওখানে নিশ্চিত করতে পারে। পাশাপাশি গুলশান, বনানী, মতিঝিল, আগারগাঁও এলাকায় ফাইভজি এনাবল অনেক স্মার্টফোন ব্যবহার করা হয়। আমার বিশ্বাস সেসব জায়গায়ও এ বিষয়ে কোম্পানিগুলো মনোযোগ দেবে। এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনায় ফাইভজি ও আইওটি কীভাবে ব্যবহার করতে পারি সে বিষয়েও কাজ করছি। আমরা আশা করছি সেখানেও দ্রুত ফাইভজি ব্যবহার করতে পারব।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অ্যামটব সভাপতি ও গ্রামীণ ফোনের সিইও ইয়াসির আজমানসহ মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা।