ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনায় চলছে দখলবাজির মহাউৎসব : নাম আসছে বিএনপি নেতাদের

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৪:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
  • 118

অনলাইন ডেস্ক  : আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৫ দিন ধরে খুলনায় চলছে দখল দখলবাজির মহাউৎসব। বাড়িঘর, দোকানপাট, হাটবাজার, খেয়াঘাট, বালুমহালসহ শ্রমিক ইউনিয়ন, বাসস্ট্যান্ড, দলীয় কার্যালয়ও বেদখল হয়ে যাচ্ছে। দখলদারদের দাবি, ১৫ বছর আগে এগুলো তাদেরই ছিল। এখন তারা তাদের সম্পদ বুঝে নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিএনপি নেতাদের নাম উচ্চারণ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সবচেয়ে আগে দখল হয়ে যায় নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এবং দুটি মালিক সমিতি। একইভাবে নগরীর রূপসার দুই পাড়ের বাসস্ট্যান্ড, দুই পাড়ের বেবিস্ট্যান্ড (বেবিট্যাক্সি), ডাকবাংলো বেবিস্ট্যান্ডও দখল হয়ে যায়। যা গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দখলে ছিল।

সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের দুটি সমিতি ১৫ বছর আগে দখলে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এর মধ্যে ‘জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতি’ কার্যালয় দখল করে ‘খুলনা বিভাগীয় বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি’ নামে পরিচালিত হচ্ছে। সংগঠনের সভাপতি মোকাম্মেল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রবিউল করিম বিএনপি সমর্থক।

এ বিষয়ে রবিউল করিম বলেন, আমাদের নির্বাচিত কমিটির কার্যালয় ১৫ বছর আগে দখল করা হয়। আমরা সেটি পুনরুদ্ধার করেছি। একই দিন ‘রূপসা-বাগেরহাট বাস-মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতি’ কার্যালয়ে তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ১৫ বছর আগে এটিও বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে জোর করে দখলে নেন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হক লিপন ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক। তবে ১৫ বছর আগে বিএনপি সমর্থিত সভাপতি মোল্লা আনোয়ারুল ইসলাম এবার দখল পাননি। এখন এটি চালাচ্ছেন রূপসা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুর রহমান ও স্থানীয় নেতারা।

এই বাসস্ট্যান্ডের দখল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মোল্লা আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটার নির্বাচিত কমিটি ছিল। দখল তাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার পর নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করতাম। কিন্তু তা না করে অবৈধ দখলদারদের মতই আবার দখল হয়ে গেছে। যারা দখল করেছেন তারা কেউ বাস মালিক নন বলেও জানান আনোয়ারুল।

মালিক সমিতি কার্যালয়ের পাশাপাশি শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে রূপসা চিংড়ি বণিক সমিতি’র ক্ষেত্রে। তবে রূপসা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুর রহমান বলেন, ‘সমিতি বা ইউনিয়ন দখলের ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সুবিধাভোগীরা পালিয়ে যাওয়ায় প্রকৃত মালিকরা এখন বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিকরা ইউনিয়ন চালাচ্ছেন। নতুন কোনো কমিটি হয়নি।’

রূপসায় বাসস্ট্যান্ড, বেবিস্ট্যান্ডের মতো রূপসা ফেরিঘাটও চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। এটার মালিকানা খুলনা সিটি করপোরেশনের হলেও ইজারা দেওয়া ছিল। কিন্তুু তাও দখল হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে রূপসা পাইকারি মৎস্য আড়তও জোর করে দখল নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কাঠগোলারও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপিপন্থিরা। তবে প্রকাশ্যে এখনো কেউ কিছু বলছেন না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ৫ তারিখের আগে যারা দখলে ছিলেন, তারা পালিয়ে যাওয়ায় এখন এগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ১৫ বছর আগে যারা ছিলেন তারাই।

খুলনায় কম পুঁজি খাটিয়ে বেশি আয়ের মাধ্যমগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাতটি বড় ঘাট। ঘাটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে আওয়ামী ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া অব্যাহত রয়েছে।

খুলনা নদীবন্দরের আওতাধীন স্কিড কি ঘাট, ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকা, সামনে হাজী সেলিমের গুদামে তালা লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘাটের ইজারাদার ছিলেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি চৌধুরী মিনহাজ উজ জামান সজল। ১৪ আগস্ট রাতে অর্থবছরের বাকি সময়ের জন্য ঘাট পরিচালনা স্বত্ব তিনি বিএনপির এক নেতাকে লিখে দেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সজল বলেন, ইজারা বাবদ দেওয়া অর্থ আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আর ঘাট চালাবো না। একইভাবে নগরীর জেলখানা ঘাট, মোমিনঘাট, ফুলবাড়িগেটের ঘাট, শিরোমণি শুল্ক ঘাট, ফুলতলা উপজেলার ইকবাল ঘাট ও মন্দির ঘাট দখলের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নাম আসছে। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে মন্দির ঘাটটি ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে শিরোমণি শুল্ক ঘাটটি তিন দফায় হাতবদল হয়। সবশেষ থানা যুবলীগ সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান লিংকন ঘাটটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে চালিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি তাকে হটিয়ে ঘাট দখলে নেন খানজাহান আলী থানা বিএনপির নেতারা। বিএনপির একাংশ যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে মিলে ব্যক্তিমালিকানাধীন লেলিন ভূঁইয়া ঘাট দখলের চেষ্টা করছে।

জেলা যুবদল সভাপতি শামীম কবির বলেন, লেলিন ভূঁইয়ার ঘাটে কেউ যাননি। জায়গার মালিক অন্য পক্ষকে ইজারা দেওয়ার বিষয়ে কথা বলছেন। আর দরপত্রের মাধ্যমে থানা বিএনপি নেতারা শিরোমণি ঘাট ইজারা পেয়েছেন।

বিআইডব্লিউটিএর সবচেয়ে লাভজনক ঘাট হচ্ছে মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল। প্রায় ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়ে ঘাটটি পরিচালনা করতেন খুলনা মহানগর যুবলীগ সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ।

পলাশ বলেন, ‘বিএনপির উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম নিয়ে চার-পাঁচটি গ্রুপ ঘাট ছেড়ে দিতে বলছে। ব্যাংকে ঋণ করে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ সরকারকে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা দিয়েছি। এখন কীভাবে ছেড়ে দেবো বুঝতে পারছি না।’

বিআইডব্লিউটিএ খুলনার উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘষিয়াখালী চ্যানেল ও শিরোমণি ঘাট নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। নগরীর ৭ নম্বর ঘাটে মোংলা বন্দরের রুজভেল্ট জেটি পরিচালনা করতো ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন। ৬ আগস্ট ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতা ইউনিয়ন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপে তালা খুলে দেওয়া হয়। শ্রমিক লীগ নেতারা পালিয়ে যাওয়ায় শ্রমিক দল নেতারা পরিচালনা করছেন।

গত ৯ আগস্ট জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার সবচেয়ে বড় বালুমহালটিও জেলা বিএনপির এক নেতা দখল করেছেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে বালুমহাল দখল নিলেও সেখানে এখনো ওই নেতা যাতায়াত শুরু করেননি বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নগরীর বড় বাজার এলাকায় প্রায় একটি মার্কেট দখল করে নিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। ওই নেতা মার্কেট দখলে নিয়েই শতাধিক দোকান গত ৪-৫ দিনে বিক্রি করে দিয়েছেন। অপর এক নেতা তার ইজারা নেওয়া মার্কেটটি পুনরায় দখলে নিয়েছেন। এই দুই নেতা বাজার এলাকায় দখল অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে।

দখলবাজির মধ্যে পড়েছে একাধিক ওয়ার্ডের দলীয় কার্যালয়। নগরীর ৯ নম্বর ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বিএনপির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি নেতা মোল্লা ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘ওই স্থানে আগে বিএনপির কার্যালয় ছিল। আওয়ামী লীগ সেটি দখল করে নিজেদের কার্যালয় তৈরি করে। কার্যালয়টি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।’

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

খুলনায় চলছে দখলবাজির মহাউৎসব : নাম আসছে বিএনপি নেতাদের

আপডেট সময় ০৪:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক  : আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৫ দিন ধরে খুলনায় চলছে দখল দখলবাজির মহাউৎসব। বাড়িঘর, দোকানপাট, হাটবাজার, খেয়াঘাট, বালুমহালসহ শ্রমিক ইউনিয়ন, বাসস্ট্যান্ড, দলীয় কার্যালয়ও বেদখল হয়ে যাচ্ছে। দখলদারদের দাবি, ১৫ বছর আগে এগুলো তাদেরই ছিল। এখন তারা তাদের সম্পদ বুঝে নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিএনপি নেতাদের নাম উচ্চারণ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সবচেয়ে আগে দখল হয়ে যায় নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এবং দুটি মালিক সমিতি। একইভাবে নগরীর রূপসার দুই পাড়ের বাসস্ট্যান্ড, দুই পাড়ের বেবিস্ট্যান্ড (বেবিট্যাক্সি), ডাকবাংলো বেবিস্ট্যান্ডও দখল হয়ে যায়। যা গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দখলে ছিল।

সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের দুটি সমিতি ১৫ বছর আগে দখলে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এর মধ্যে ‘জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতি’ কার্যালয় দখল করে ‘খুলনা বিভাগীয় বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি’ নামে পরিচালিত হচ্ছে। সংগঠনের সভাপতি মোকাম্মেল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রবিউল করিম বিএনপি সমর্থক।

এ বিষয়ে রবিউল করিম বলেন, আমাদের নির্বাচিত কমিটির কার্যালয় ১৫ বছর আগে দখল করা হয়। আমরা সেটি পুনরুদ্ধার করেছি। একই দিন ‘রূপসা-বাগেরহাট বাস-মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতি’ কার্যালয়ে তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ১৫ বছর আগে এটিও বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে জোর করে দখলে নেন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হক লিপন ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক। তবে ১৫ বছর আগে বিএনপি সমর্থিত সভাপতি মোল্লা আনোয়ারুল ইসলাম এবার দখল পাননি। এখন এটি চালাচ্ছেন রূপসা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুর রহমান ও স্থানীয় নেতারা।

এই বাসস্ট্যান্ডের দখল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মোল্লা আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটার নির্বাচিত কমিটি ছিল। দখল তাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার পর নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করতাম। কিন্তু তা না করে অবৈধ দখলদারদের মতই আবার দখল হয়ে গেছে। যারা দখল করেছেন তারা কেউ বাস মালিক নন বলেও জানান আনোয়ারুল।

মালিক সমিতি কার্যালয়ের পাশাপাশি শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে রূপসা চিংড়ি বণিক সমিতি’র ক্ষেত্রে। তবে রূপসা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুর রহমান বলেন, ‘সমিতি বা ইউনিয়ন দখলের ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সুবিধাভোগীরা পালিয়ে যাওয়ায় প্রকৃত মালিকরা এখন বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিকরা ইউনিয়ন চালাচ্ছেন। নতুন কোনো কমিটি হয়নি।’

রূপসায় বাসস্ট্যান্ড, বেবিস্ট্যান্ডের মতো রূপসা ফেরিঘাটও চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। এটার মালিকানা খুলনা সিটি করপোরেশনের হলেও ইজারা দেওয়া ছিল। কিন্তুু তাও দখল হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে রূপসা পাইকারি মৎস্য আড়তও জোর করে দখল নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কাঠগোলারও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপিপন্থিরা। তবে প্রকাশ্যে এখনো কেউ কিছু বলছেন না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ৫ তারিখের আগে যারা দখলে ছিলেন, তারা পালিয়ে যাওয়ায় এখন এগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ১৫ বছর আগে যারা ছিলেন তারাই।

খুলনায় কম পুঁজি খাটিয়ে বেশি আয়ের মাধ্যমগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাতটি বড় ঘাট। ঘাটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে আওয়ামী ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া অব্যাহত রয়েছে।

খুলনা নদীবন্দরের আওতাধীন স্কিড কি ঘাট, ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকা, সামনে হাজী সেলিমের গুদামে তালা লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘাটের ইজারাদার ছিলেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি চৌধুরী মিনহাজ উজ জামান সজল। ১৪ আগস্ট রাতে অর্থবছরের বাকি সময়ের জন্য ঘাট পরিচালনা স্বত্ব তিনি বিএনপির এক নেতাকে লিখে দেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সজল বলেন, ইজারা বাবদ দেওয়া অর্থ আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি আর ঘাট চালাবো না। একইভাবে নগরীর জেলখানা ঘাট, মোমিনঘাট, ফুলবাড়িগেটের ঘাট, শিরোমণি শুল্ক ঘাট, ফুলতলা উপজেলার ইকবাল ঘাট ও মন্দির ঘাট দখলের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের নাম আসছে। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে মন্দির ঘাটটি ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে শিরোমণি শুল্ক ঘাটটি তিন দফায় হাতবদল হয়। সবশেষ থানা যুবলীগ সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান লিংকন ঘাটটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে চালিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি তাকে হটিয়ে ঘাট দখলে নেন খানজাহান আলী থানা বিএনপির নেতারা। বিএনপির একাংশ যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে মিলে ব্যক্তিমালিকানাধীন লেলিন ভূঁইয়া ঘাট দখলের চেষ্টা করছে।

জেলা যুবদল সভাপতি শামীম কবির বলেন, লেলিন ভূঁইয়ার ঘাটে কেউ যাননি। জায়গার মালিক অন্য পক্ষকে ইজারা দেওয়ার বিষয়ে কথা বলছেন। আর দরপত্রের মাধ্যমে থানা বিএনপি নেতারা শিরোমণি ঘাট ইজারা পেয়েছেন।

বিআইডব্লিউটিএর সবচেয়ে লাভজনক ঘাট হচ্ছে মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল। প্রায় ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়ে ঘাটটি পরিচালনা করতেন খুলনা মহানগর যুবলীগ সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ।

পলাশ বলেন, ‘বিএনপির উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নাম নিয়ে চার-পাঁচটি গ্রুপ ঘাট ছেড়ে দিতে বলছে। ব্যাংকে ঋণ করে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ সরকারকে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা দিয়েছি। এখন কীভাবে ছেড়ে দেবো বুঝতে পারছি না।’

বিআইডব্লিউটিএ খুলনার উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘষিয়াখালী চ্যানেল ও শিরোমণি ঘাট নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। নগরীর ৭ নম্বর ঘাটে মোংলা বন্দরের রুজভেল্ট জেটি পরিচালনা করতো ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন। ৬ আগস্ট ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতা ইউনিয়ন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপে তালা খুলে দেওয়া হয়। শ্রমিক লীগ নেতারা পালিয়ে যাওয়ায় শ্রমিক দল নেতারা পরিচালনা করছেন।

গত ৯ আগস্ট জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার সবচেয়ে বড় বালুমহালটিও জেলা বিএনপির এক নেতা দখল করেছেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে বালুমহাল দখল নিলেও সেখানে এখনো ওই নেতা যাতায়াত শুরু করেননি বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নগরীর বড় বাজার এলাকায় প্রায় একটি মার্কেট দখল করে নিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। ওই নেতা মার্কেট দখলে নিয়েই শতাধিক দোকান গত ৪-৫ দিনে বিক্রি করে দিয়েছেন। অপর এক নেতা তার ইজারা নেওয়া মার্কেটটি পুনরায় দখলে নিয়েছেন। এই দুই নেতা বাজার এলাকায় দখল অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে।

দখলবাজির মধ্যে পড়েছে একাধিক ওয়ার্ডের দলীয় কার্যালয়। নগরীর ৯ নম্বর ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বিএনপির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি নেতা মোল্লা ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘ওই স্থানে আগে বিএনপির কার্যালয় ছিল। আওয়ামী লীগ সেটি দখল করে নিজেদের কার্যালয় তৈরি করে। কার্যালয়টি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।’