ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে শিপইয়ার্ডে ৯ বছরে ১২৪ মৃত্যু

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৫:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 100
চট্টগ্রাম ব্যুরো  

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এনএস করপোরেশন নামে একটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিস্ফোরণে ১২ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে আট জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শিপইয়ার্ডে প্রায়শই এমন দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত-গত নয় বছরে দুর্ঘটনায় শিপ ইয়ার্ডগুলোতে নিহত হয়েছেন ১২৪ জন।

বেসরকারি সংস্থা লেবার রিসোর্স অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছরই শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পাশাপাশি ব্যাপক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রাখায় দুর্ঘটনার মূল কারণ বলেও মনে করছে সংস্থাটি। 

সংস্থাটির হিসাবে ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৪ জন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ১৬ জন, ২০১৬ সালে ১৮ জন, ২০১৭ সালে ১৯ জন, ২০১৮ সালে ১৩ জন, ২০১৯ সালে ২৩ জন, ২০২০ সালে ১০ জন, ২০২১ সালে নয় জন, ২০২২ সালে সাত জন, ২০২৩ সালে সাত জন এবং চলতি বছর ২০২৪ সালে দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। চলতি বছরে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে শিপ ইয়ার্ডগুলোতে ১২টি দুর্ঘটনা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জন আহত এবং একজন নিহত হয়েছেন।

লেবার রিসোর্স অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর ফজলুল কবির মিন্টু বলেন, ‘শিপইয়ার্ডে শনিবারের দুর্ঘটনাটি খুব বেশি ভয়াবহ ছিল। ১২ জন আহতদের মধ্যে আট জনের অবস্থা গুরুতর। গ্যাস দিয়ে জাহাজের ধাতব অংশ কাটতে গিয়ে আগুন গিয়ে পড়ে অয়েল ট্যাংকে। এতেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যে শিপইয়ার্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি গ্রিন শিপইয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এসব ইয়ার্ড ঝুঁকি এড়াতে অনেক নিয়ম-কানুন মেনে চলে। তাই গ্রিন শিপইয়ার্ডে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৫টি শিপইয়ার্ড আছে। সেগুলোর মধ্যে গ্রিন শিপইয়ার্ড আছে মাত্র চারটি। আরো পাঁচ-ছয়টি শিপইয়ার্ড গ্রিন শিপইয়ার্ডে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশে করোনা মহামারির আগে ১৫০টির বেশি শিপইয়ার্ড ছিল। করোনা মহামারির পর তা কমে হয়েছিল ৫৫ থেকে ৬০টি। দেশে ডলার সংকট শুরু হওয়ার পর এ ধকল সহ্য করতে না পেরে আরো বেশ কয়েকটি শিপইয়ার্ড বন্ধ হয়ে ১০ থেকে ১৫টিতে এসে ঠেকে। চলতি বছর শিপইয়ার্ড বেড়ে ৩০ থেকে ৩৫টিতে হয়েছে।’

জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত বলেন, ‘শনিবার শিপইয়ার্ডে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। নিয়ম না মেনে কাজ করার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ দুর্ঘটনার জন্য যারাই দায়ী তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘গ্রিন শিপইয়ার্ডগুলোতে অনেক নিয়ম-কানুন মানার কথা। গ্রিন এবং সাধারণ ইয়ার্ডগুলোতে দেখা যায়, তারা সরাসরি শ্রমিক নিয়োগ না দিয়ে জাহাজ কাটার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে। ওই ঠিকাদার আবার সাব-ঠিকাদার নিয়োগ দেয়।  ঠিকাদাররা তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করার জন্য কোনো নিয়ম মানছেন না। নিয়ম না মানার কারণেই এ দুর্ঘটনা। ইয়ার্ডগুলোতে মজুরি বোর্ডের নির্ধারণ করা মজুরি দেওয়া হচ্ছে না শ্রমিকদের। মানা হচ্ছে না শ্রম আইন। রাত ৮টার পর জাহাজ না কাটার জন্য বলা হলেও সেই নির্দেশনাও মানছে না অনেক ইয়ার্ড।’

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন বলেন, ‘শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় ১২ জন আহত হয়েছেন। আমরা আমাদের মতো করে দুর্ঘটনার স্থান পরিদর্শন করেছি। কী কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে তার প্রাথমিক কারণও আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

পুলিশ ও জনগণ একে অন্যের পরিপূরক : অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা)

চট্টগ্রামে শিপইয়ার্ডে ৯ বছরে ১২৪ মৃত্যু

আপডেট সময় ০৫:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো  

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এনএস করপোরেশন নামে একটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিস্ফোরণে ১২ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে আট জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শিপইয়ার্ডে প্রায়শই এমন দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। ২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত-গত নয় বছরে দুর্ঘটনায় শিপ ইয়ার্ডগুলোতে নিহত হয়েছেন ১২৪ জন।

বেসরকারি সংস্থা লেবার রিসোর্স অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছরই শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পাশাপাশি ব্যাপক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রাখায় দুর্ঘটনার মূল কারণ বলেও মনে করছে সংস্থাটি। 

সংস্থাটির হিসাবে ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৪ জন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ১৬ জন, ২০১৬ সালে ১৮ জন, ২০১৭ সালে ১৯ জন, ২০১৮ সালে ১৩ জন, ২০১৯ সালে ২৩ জন, ২০২০ সালে ১০ জন, ২০২১ সালে নয় জন, ২০২২ সালে সাত জন, ২০২৩ সালে সাত জন এবং চলতি বছর ২০২৪ সালে দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। চলতি বছরে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে শিপ ইয়ার্ডগুলোতে ১২টি দুর্ঘটনা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জন আহত এবং একজন নিহত হয়েছেন।

লেবার রিসোর্স অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর ফজলুল কবির মিন্টু বলেন, ‘শিপইয়ার্ডে শনিবারের দুর্ঘটনাটি খুব বেশি ভয়াবহ ছিল। ১২ জন আহতদের মধ্যে আট জনের অবস্থা গুরুতর। গ্যাস দিয়ে জাহাজের ধাতব অংশ কাটতে গিয়ে আগুন গিয়ে পড়ে অয়েল ট্যাংকে। এতেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যে শিপইয়ার্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি গ্রিন শিপইয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এসব ইয়ার্ড ঝুঁকি এড়াতে অনেক নিয়ম-কানুন মেনে চলে। তাই গ্রিন শিপইয়ার্ডে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ৩০ থেকে ৩৫টি শিপইয়ার্ড আছে। সেগুলোর মধ্যে গ্রিন শিপইয়ার্ড আছে মাত্র চারটি। আরো পাঁচ-ছয়টি শিপইয়ার্ড গ্রিন শিপইয়ার্ডে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশে করোনা মহামারির আগে ১৫০টির বেশি শিপইয়ার্ড ছিল। করোনা মহামারির পর তা কমে হয়েছিল ৫৫ থেকে ৬০টি। দেশে ডলার সংকট শুরু হওয়ার পর এ ধকল সহ্য করতে না পেরে আরো বেশ কয়েকটি শিপইয়ার্ড বন্ধ হয়ে ১০ থেকে ১৫টিতে এসে ঠেকে। চলতি বছর শিপইয়ার্ড বেড়ে ৩০ থেকে ৩৫টিতে হয়েছে।’

জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত বলেন, ‘শনিবার শিপইয়ার্ডে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। নিয়ম না মেনে কাজ করার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ দুর্ঘটনার জন্য যারাই দায়ী তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘গ্রিন শিপইয়ার্ডগুলোতে অনেক নিয়ম-কানুন মানার কথা। গ্রিন এবং সাধারণ ইয়ার্ডগুলোতে দেখা যায়, তারা সরাসরি শ্রমিক নিয়োগ না দিয়ে জাহাজ কাটার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে। ওই ঠিকাদার আবার সাব-ঠিকাদার নিয়োগ দেয়।  ঠিকাদাররা তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করার জন্য কোনো নিয়ম মানছেন না। নিয়ম না মানার কারণেই এ দুর্ঘটনা। ইয়ার্ডগুলোতে মজুরি বোর্ডের নির্ধারণ করা মজুরি দেওয়া হচ্ছে না শ্রমিকদের। মানা হচ্ছে না শ্রম আইন। রাত ৮টার পর জাহাজ না কাটার জন্য বলা হলেও সেই নির্দেশনাও মানছে না অনেক ইয়ার্ড।’

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন বলেন, ‘শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় ১২ জন আহত হয়েছেন। আমরা আমাদের মতো করে দুর্ঘটনার স্থান পরিদর্শন করেছি। কী কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে তার প্রাথমিক কারণও আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।