অনলাইন ডেস্ক : দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার হার্ডলাইনে (কঠোর অবস্থান) যাবে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। মঙ্গলবার সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আসিফ মাহমুদ এ কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীর বাইরে অনেক উদ্যোক্তা আছেন, যাঁরা সরাসরি কৃষক থেকে পণ্য কিনে সরাসরি ঢাকায় বিক্রি করবেন, সরকার তাঁদের উৎসাহিত করবে। আসিফ মাহমুদ বলেন, টিসিবির ডিলারশিপ যাঁরা পেয়েছিলেন, তাঁরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের। এ কারণে টিসিবির কার্যক্রম স্থবির। টিসিবিকে আবার সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে।
মতবিনিময় সভার শুরুতে নিজের মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দিক তুলেন ধরেন উপদেষ্টা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ওই সময় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আন্দোলনের সঠিক চিত্র তুলে ধরেনি। পত্রিকাগুলো সহায়তা করেছে। গণমাধ্যম সংস্কার জরুরি বলে জানান তিনি। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর-পর্ব। সাংবাদিকদের বেশির ভাগ প্রশ্নই ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কী করছে—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, বন্যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। জোগান ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য নেই। বাজারে সিন্ডিকেট আছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙার কাজ চলছে। বিগত সরকার ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে দুর্বল করেছে। তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, এটা কার্যকর নয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার হার্ডলাইনে (কঠোর অবস্থান) যাবে। সরকারের কাছে তথ্য আছে, অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে সরকার তাদের গ্রেপ্তার করবে।
আরেক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, আগের সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করত। সিন্ডিকেটের ভেতর ব্যবসায়ীরা বসে ছিলেন। তাঁরা এখনো রয়ে গেছেন। ব্যবসায়িক স্বার্থ বাঁচাতে কেউ কেউ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে সিন্ডিকেট টিকিয়ে রেখেছেন। চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে, একজন চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করলে সে জায়গায় আরেকজন চলে আসেন। তাঁরা গোড়াটা শনাক্তের চেষ্টা করছেন। এ কাজে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহায়তা করতে হবে।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ১৬ বছরের ভেঙে পড়া জিনিস ছয় মাসে তোলা সম্ভব নয়। এটা ঠিক করতে ১০ বছর সময় লাগবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, নামেই শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ মন্ত্রণালয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কোনো কাজ হয়নি। কোনো প্রকল্প হয়নি। এ জন্য কর্মসংস্থান অধিদপ্তর করার কথা ভাবছে সরকার। বিশ্বের অন্যান্য দেশ কোন পথে হাঁটছে, তা পর্যালোচনা করে সে অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিষয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, মামলা হলেও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের দেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা নেই। আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আইনি বিষয় তো আইনি বিষয়, এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। একটা হচ্ছে সাবজুডিস (বিচারাধীন), দ্বিতীয় হচ্ছে আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কনসার্ন (জড়িত) আছে, উত্তরটা দিতে পারবে।’
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব। এবং সেটা আমরা পালন করব। যেহেতু আমার মন্ত্রণালয় কনসার্ন, আমি জানার চেষ্টা করেছি, আইনি বাধা আছে কি না, দেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে। এবং আমি জানতে পেরেছি, এখন পর্যন্ত কোনো বাধা নেই।’ আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, আদালত যদি কোনো আদেশ দেন, সেটা আদালতের বিষয়। এটা তো আর তাঁর বিষয় না। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার আইনি বাধা নেই।
মতবিনিময় সভা সঞ্চালনায় ছিলেন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক। সভাপতিত্ব করেন সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব।