ঢাকা , শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গভবনের সামনে চারজন গুলিবিদ্ধ

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৫:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
  • 2

অনলাইন ডেস্ক

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ চলাকালে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া সাউন্ড গ্রেনেডে একজন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

গুলিবিদ্ধরা হলেন- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল আহম্মেদ বিশাল (২০), ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম সেলিম (৪৫), সাংবাদিক রাজু আহমেদ (২৫) ও ভিডিও জার্নালিস্ট রিপন রেজা (২৮)। 

সাউন্ড গ্রেনেডে আহত আরিফ খান (২০) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

গুলিবিদ্ধ ফয়সাল বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করি। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বাধার মুখে পড়ি। ওখানে ছত্রভঙ্গ করার জন্য ছররা গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এ সময় কয়েকটি গুলি ডান পায়ের উরু ও বাম পায়ের গোড়ালিতে লাগে।  

গুলিবিদ্ধ অপর ব্যক্তি শফিকুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে আমরা বঙ্গভবনের সামনে এসেছিলাম। আমি ব্যবসা করি। একজনকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ডান পায়ে গুলি লাগে।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, বঙ্গভবনের সামনে থেকে আহত অবস্থায় পাঁচজন এসেছেন। তাদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ। জরুরি বিভাগে তাদের চিকিৎসা চলছে।

এদিকে রাত ১০টার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ ও আরিফ সোহেল বঙ্গভবনে যান। সেনাবাহিনীর মাইক নিয়ে আব্দুল হান্নান বিক্ষোভরত জমায়েতকে শান্ত করার চেষ্টা করলে উল্টো ফল হয়। পরে হান্নান ও আরিফ সোহেল বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে রাস্তার উপর বসে পড়েন।

মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র খুঁজে পাননি। পত্রিকারটির একটি ম্যাগাজিনে এই কথা প্রকাশ হওয়ার পর সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করছে।

মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের একটি পক্ষ দিনভর বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের সময় বেঁধে দেয়।

সন্ধ্যার পর তাদের একটি পক্ষ বঙ্গভবনের সামনে ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বাধা দেয়।

এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। শিক্ষার্থীরা তখন তাদের ওপর চড়াও হয় বলে গণমাধ্যম ও সামজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়।

পুলিশও আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিপেটা করে, এ সময় সাউন্ড গ্রেনেডও ছোড়া হয়।

সেখানে যাওয়া পুলিশের একটি গাড়িতে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীদের ইট পাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে। গাড়িতে উঠে পুলিশকে লাঠি দিয়ে আঘাত করতেও দেখা যায়।

গত ৫ আগস্ট তুমুল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।

সেই রাতে তিন বাহিনীর প্রধানকে পেছনে দাঁড় করিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতিও বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তিনি সেই পদত্যাগপত্র পেয়েছেন।

এর তিনদিন পর মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় রাষ্ট্রপতির কাছেই।

এর আড়াই মাস পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ বিষয়ে নতুন বিতর্ক উঠেছে, যদিও বঙ্গভবন থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে একে ‘মীমাংসিত ঘটনা’ উল্লেখ করে বিতর্ক না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তার বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি ‘অসত্য’ বক্তব্য দিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে অপসারণ করা যায় বলেও মত দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছে, আইন উপদেষ্টার বক্তব্য সমর্থন করে সরকার। তবে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অবশ্য সংসদ বহাল না থাকায় রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানসম্মত উপায়ে সরানোর উপায় আছে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

বঙ্গভবনের সামনে চারজন গুলিবিদ্ধ

আপডেট সময় ০৫:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ চলাকালে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া সাউন্ড গ্রেনেডে একজন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

গুলিবিদ্ধরা হলেন- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল আহম্মেদ বিশাল (২০), ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম সেলিম (৪৫), সাংবাদিক রাজু আহমেদ (২৫) ও ভিডিও জার্নালিস্ট রিপন রেজা (২৮)। 

সাউন্ড গ্রেনেডে আহত আরিফ খান (২০) কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

গুলিবিদ্ধ ফয়সাল বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করি। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বাধার মুখে পড়ি। ওখানে ছত্রভঙ্গ করার জন্য ছররা গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এ সময় কয়েকটি গুলি ডান পায়ের উরু ও বাম পায়ের গোড়ালিতে লাগে।  

গুলিবিদ্ধ অপর ব্যক্তি শফিকুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে আমরা বঙ্গভবনের সামনে এসেছিলাম। আমি ব্যবসা করি। একজনকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ডান পায়ে গুলি লাগে।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, বঙ্গভবনের সামনে থেকে আহত অবস্থায় পাঁচজন এসেছেন। তাদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ। জরুরি বিভাগে তাদের চিকিৎসা চলছে।

এদিকে রাত ১০টার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ ও আরিফ সোহেল বঙ্গভবনে যান। সেনাবাহিনীর মাইক নিয়ে আব্দুল হান্নান বিক্ষোভরত জমায়েতকে শান্ত করার চেষ্টা করলে উল্টো ফল হয়। পরে হান্নান ও আরিফ সোহেল বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে রাস্তার উপর বসে পড়েন।

মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন শেখ হাসিনার কোনো পদত্যাগপত্র খুঁজে পাননি। পত্রিকারটির একটি ম্যাগাজিনে এই কথা প্রকাশ হওয়ার পর সরকার পতন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করছে।

মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের একটি পক্ষ দিনভর বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের সময় বেঁধে দেয়।

সন্ধ্যার পর তাদের একটি পক্ষ বঙ্গভবনের সামনে ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বাধা দেয়।

এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। শিক্ষার্থীরা তখন তাদের ওপর চড়াও হয় বলে গণমাধ্যম ও সামজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়।

পুলিশও আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিপেটা করে, এ সময় সাউন্ড গ্রেনেডও ছোড়া হয়।

সেখানে যাওয়া পুলিশের একটি গাড়িতে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীদের ইট পাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে। গাড়িতে উঠে পুলিশকে লাঠি দিয়ে আঘাত করতেও দেখা যায়।

গত ৫ আগস্ট তুমুল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।

সেই রাতে তিন বাহিনীর প্রধানকে পেছনে দাঁড় করিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতিও বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তিনি সেই পদত্যাগপত্র পেয়েছেন।

এর তিনদিন পর মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় রাষ্ট্রপতির কাছেই।

এর আড়াই মাস পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ বিষয়ে নতুন বিতর্ক উঠেছে, যদিও বঙ্গভবন থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে একে ‘মীমাংসিত ঘটনা’ উল্লেখ করে বিতর্ক না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তার বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি ‘অসত্য’ বক্তব্য দিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে অপসারণ করা যায় বলেও মত দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছে, আইন উপদেষ্টার বক্তব্য সমর্থন করে সরকার। তবে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অবশ্য সংসদ বহাল না থাকায় রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানসম্মত উপায়ে সরানোর উপায় আছে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে।