সিনিয়র রিপোর্টার
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গন অভ্যূত্থানের পর থেকে মোহাম্মদপুর থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে উদ্বেগের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।
বর্ণিত সময়ে সংঘবদ্ধ অপরাধীরা মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় হত্যা, ছিনতাই, লুন্ঠন এবং মারামারির মতো অপরাধ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা চালায়। এ সকল ঘটনায় ভুক্তভোগীরা ইতোমধ্যে থানায় মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেছেন। থানা পুলিশ রুজুকৃত মামলা ও অভিযোগসমূহ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিবিড় তদন্ত অব্যাহত রেখেছে এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
৫ আগস্ট এরপর মোহাম্মদপুর থানায় অদ্যাবধি ১০টি হত্যা মামলা রুজু হয়। উক্ত মামলা সমূহে জড়িত থাকার অপরাধে এ পর্যন্ত ২৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। একই সময়ে দুটি ডাকাতি মামলাও রুজু হয়। ডাকাতি মামলায় ১৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের কাছ থেকে ৬ লাখ ২০,০০০ বিশ হাজার নগদ টাকা, আট ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নয়টি লুণ্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য থানা এলাকায় ফুট পেট্রোল চালু করা হয়েছে। এছাড়াও অপরাধপ্রবণ এলাকাসমূহে নিয়মিত ব্লক রেইড, চেকপোস্ট পরিচালনা করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) এক অভিযানে একদিনেই ৪৭ জন অপরাধী গ্রেপ্তার করা হয়। যার মধ্যে দু’জন ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত চাপাতি তৈরির কারিগর। তাদের কাছ থেকে ৪০টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় গ্যাং ওয়ার এবং মাদক সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দুটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং নিয়মিত ফুট পেট্রোল ও ব্লক রেইড পরিচালনা করা হচ্ছে। বর্ণিত সময়ে জেনেভা ক্যাম্প এলাকা থেকে আট কেজি গাঁজাসহ তিনজনকে জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপর একটি মামলায় ৬০ গ্রাম হেরোইনসহ দু’জনসহ মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লিখিত সময়ে মোহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে তিনটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ সংক্রান্তে ১৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ২০ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, দুটি পিস্তল, আটটি রাম দা, পেট্রোল বোমা তৈরির কাঁচের বোতল ১৫টি, পেট্রোল ১০ লিটার, ছয়টি চাইনিজ কুড়াল, একটি টেঁটা, আটটি ছুরি ও পাঁচটি বড় চাপাতি।
থানা এলাকায় ছিনতাই ঘটনায় আটটি মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত মোট ১৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। আসামিদের হেফাজত থেকে একটি অটোরিক্সা, একটি সিএনজি, চারটি চাপাতি, দুটি সামুরাই ও নগদ ২,১৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ সময়ের মধ্যে মোহাম্মদপুর থানায় চারটি অপহরণ মামলাও রুজু হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের হেফাজত থেকে চারজন ভিকটিমকেই উদ্ধার করা হয়েছে। এসব বিষয়ে রুজুকৃত মামলাসমূহ তদন্তাধীন।
প্রসঙ্গত, রবিবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর টহল দল যৌথ অভিযান পরিচালনা করে মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী ১নং গেট সংলগ্ন এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি গ্রহণকালে নয় জন সক্রিয় ডাকাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ডাকাতির উদ্দেশে রাখা ছয়টি সামুরাই, দুটি ড্রিল মেশিনসহ এর যন্ত্রাংশ, চারটি ধারালো চাকু, একটি শাবল, একটি কাঁচি, দুটি টর্চ লাইট, পাঁচটি রশি ও পাঁচটি প্লাষ্টিকের বস্তা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে যে আশংকা তৈরি হয়েছে তা নিরসন করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বদ্ধ পরিকর। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করা রয়েছে। আমরা আশা করি দ্রুততম সময়ে মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত হবে এবং জনমনে স্বস্তি ফিরে আসবে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান পিপিএম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।